তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক ও সিবিএ’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নাসির উদ্দিন আহাম্মদের নামে এফডিআরসহ চার ব্যাংক হিসাবে এক কোটি ৮২ হাজার ৭৬৩ টাকার খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আইএফআইসি ব্যাংকের মিরপুর শাখায় এফডিআর ও সঞ্চয়ী হিসাবে ওই টাকা জমা ছিল। যা নাসির উদ্দিনের নিজ নামের তিন সঞ্চয়ী হিসাব ও তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একটি হিসাবে ২০১০ সাল থেকে টাকাগুলো জমা করা হয়েছিল। যা তিনি দুদকের দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেছিলেন।
সব মিলিয়ে সৈয়দ নাসির উদ্দিন এক কোটি ৯৭ লাখ টাকার বেশি স্থাবর– অস্থাবর অবৈধ সম্পদ গড়েছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। যে কারণে গত ২০ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য রাইজিংবিডিকে বলেন, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের এক কর্মকর্তার বিষয়ে মামলা অনুমোদন হয়েছে। তবে বিস্তারিত তথ্য আমার জানা নেই।
তবে দুদকের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। শিগগিরই অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করবেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, দুদকের নোটিশের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৬ মে নাসিরউদ্দিন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বরাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তিনি ১৭ লাখ ৫৫ হাজার ৬২৩ টাকার স্থাবর ও ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে মোট ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৬২৩ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন।
নাসির উদ্দিনের সম্পদ বিবরণী ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র সূত্রে জানা যায়, নাসির উদ্দিন ও তার ভাই সিবিএ নেতা সৈয়দ আয়েজ উদ্দিন যৌথভাবে ঢাকা জেলার রুপনগর থানার আরামবাগ হাউজিংয়ে (প্লট নং -১৬ , ব্লক # সি) ৩.৬৩ কাঠা জমির ওপর ২ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দুদকের দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তিনি নির্মাণ বাবদ নাসির উদ্দিনের অংশে ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ১২৩ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়েছেন। কিন্তু গণপূর্তের বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক যাচাইকালে দেখা যায় বাড়ি নির্মাণে মোট ৪৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয় হওয়ার কথা। সে হিসাবে নাসির উদ্দিনের ২২ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা।
অর্থ্যাৎ তিনি ৮ লাখ ১৮ হাজার ৩৭৭ টাকার খরচ কম দেখিয়েছেন। এছাড়া সম্পদ বিবরণী উল্লেখকৃত ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্রের মূল্যে যথাক্রমে ৩ লাখ ৮৩ হাজার এবং ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকার তথ্য গোপন করেছেন বলে রেকর্ডপত্র ও বিশেষজ্ঞ মতামতে উঠে এসেছে।
অন্যদিকে ব্যাংকের জমা টাকার বিষয়ে রেকর্ডপত্র অনুযায়ী নাসির উদ্দিন আইএফআইসি ব্যাংকের মিরপুর শাখায় এফডিআর হিসাবে ১ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। যার হিসাব নং হলো -১০১০৩৮১০৬০২০১ ও ১০১৩৩৮১০৬০২০২। এছাড়া একই ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব ও তার প্রতিষ্ঠান সৈয়দ এন্টারপ্রাইজের হিসাবে ৮২ হাজার ৭৬৩ টাকা পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এক কোটি ৮২ হাজার ৭৬৩ টাকার সন্ধান মিলেছে দুদকের অনুসন্ধানে। যা তিনি তার সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেননি বা গোপন করেছেন। এমনকি দুদকের অনুসন্ধানে এর পক্ষে বৈধ উৎসের সন্ধান মিলেনি বলে জানা গেছে।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাসির উদ্দিন সম্পদ বিবরণিতে এক কোটি ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৪০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তথ্য গোপন বা মিথ্যা প্রদান করেছেন। যা দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অন্যদিকে তার আয় ও ব্যয়ের হিসাব আমলে নিয়ে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট ৮০ লাখ ২৯ হাজার টাকার সম্পত্তি মালিকানা অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন। যে কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ ( ১ ) ধারার অভিযোগ আনা হচ্ছে নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের সিবিএ’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী ব্যবস্থাপক সৈয়দ নাসির উদ্দিন ও তার ভাই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আয়াজ উদ্দিনকে ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অস্বীকার করেন নাসির উদ্দিন। ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ দেওয়া, বাইপাস লাইন দেওয়া, মিটার টেম্পারিংসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল।
আরও পড়ুন: তিতাসের সিবিএ সভাপতিসহ ৬ জন দুদকের মুখোমুখি