বসন্তের শেষ দিক থেকে শুরু করে পুরো গ্রীষ্মকালে পানির চাহিদা বাড়তে থাকে। কিন্তু এই সময়ে চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরবরাহ বাড়ে না। উল্টো কমে বলে অভিযোগ করেছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। তারা আরও বলছেন, সেই কম পানিতে থাকে প্রচুর ময়লা। এছাড়া দুর্গন্ধের জন্য প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আর ঢাকা ওয়াসা বলছে, পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ‘ক্লোরিন’ দিতে হয়। সেই ক্লোরিনের কারণেই পানিতে দুর্গন্ধ থাকতে পারে। আর অতিরিক্ত ক্লোরিনের কারণে ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর ফার্মগেট, গ্রিন রোড, সেন্ট্রাল রোড, কাঁঠালবাগান, রামপুরার ওমর আলী লেন, ফ্রি-স্কুল স্ট্রিট, ভূতের গলি, ঝিগাতলার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলছেন, তাদের বাসায় ঢাকা ওয়াসার পানিতে অতিরিক্ত ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। পানিতে গোসল করতে গিয়ে চোখ জ্বালাপোড়া করছে। কলের পানি বালতিতে ছাড়ার পর তাতে প্রচুর ফেনা হয়। অধিকাংশ এলাকায় পানিতে তীব্র দুর্গন্ধও রয়েছে।
গ্রিন রোডের বাসিন্দা নাসিমা রহমান বলেন, ‘প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ওয়াসার পানিতে ওষুধের (ক্লোরিন) অতিরিক্ত গন্ধ। গোসল, রান্না, মুখ-হাত ধোওয়ার সময় অসহ্য লাগে। বিশেষ করে, বাচ্চারা গোসল করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। তাদের চোখ জ্বালা করছে।'
একই অভিয়োগ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা রেহানা আক্তারেরও। তিনি বলেন, ‘কল খুললে ফেনাযুক্ত দুর্গন্ধময় পানি পড়ে। ওয়াসাকে জানানোর পর তারা বলেছে, পানি বিশুদ্ধ করার জন্য যে ওষুধ দেওয়া হয়, এই গন্ধ সেই ওষুধের। বিশুদ্ধ করতে গিয়ে ওষুধ দেওয়ার পর যদি এরকম গন্ধ হয়, তাহলে পানি ব্যবহার করবো কিভাবে? পানি ভালো-মন্দ যাই দিক, মাস শেষে তো তারা টাকাটা ঠিকই নিচ্ছে!’
ঝিগাতলা নতুন রাস্তার ফ্ল্যাট মালিক সোয়েব আহমেদসহ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘ইদানীং ওয়াসার পানি ব্যবহারে চোখ জ্বালা করছে। হাত-মুখ ধুতে গিয়ে পানি পেটে ঢুকে গেলে মনে হয় বিষাক্ত কোনো গ্যাস ঢুকে পড়েছে। পানি ব্যবহার করুক বা না করুক, মাস শেষে জনপ্রতি গড়ে ৬০০ টাকা করে বিল দিতে হচ্ছে। এত টাকা নেওয়ার পরও ওয়াসা কেন আমাদের ভালো পানি সরবরাহ করবে না?’
পানিতে ওষুধ দেওয়ার কারণে দুর্গন্ধ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) মো. মাহমুদুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন শুষ্ক মৌসুম। এ সময় নদীর পানি দূষিত থাকে। রাজধানীর সায়েদাবাদ শোধনাগারের পানির উৎস হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী। দূষিত পানিকে বিশুদ্ধ করার ক্ষেত্রে অনেক সময় শোধনযন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। সে কারণে ঢাকার কিছু কিছু এলাকার পানিতে গন্ধ হতে পারে। পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ক্লোরিন দিতে হয়। সে কারণেও অনেক সময় পানি দুর্গন্ধ হয়।’
ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, ‘এখন পানিতে ক্লোরিন একটু বেশি দিতে হচ্ছে। কোথাও পানিতে দুর্গন্ধ পেলে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করলে ওয়াসা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’
ওয়াসার পানির অতিমাত্রায় ‘ক্লোরিন’ ব্যবহারের কারণে মানবদেহের ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে বলে জানালেন মিরপুরের ডা. এমআর খান শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মঞ্জুর। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ক্লোরিন ব্যবহারের ফলে অ্যালার্জি, চোখ জ্বালা করা, গায়ে রেশ ওঠা, গ্যাস্ট্রিক ছাড়াও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। এমনকি দীর্ঘদিন পানিতে ক্লোরিন ব্যবহার করলে ক্যানসারও হতে পারে।’