হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক তার প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বা ছাড়াও অন্য দুই নারীকে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করে তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে, মামুনুল হকের কথিত ‘চুক্তিভিত্তিক বিয়ে’ রাষ্ট্রীয় বা শরিয়াহ আইনে বৈধ নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘বিয়ের কাবিননামা’ দেখতে চাইলে মামুনুল হক গোয়েন্দাদের জানান, প্রথম স্ত্রী ছাড়া অন্য দুই নারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন বসবাস করলেও বিয়ে রেজিস্ট্রি করেননি। তাই বিয়ের কোনো কাবিননামাও নেই। তবে, এই দুই নারীর ভরণপোষণ নিয়মিত দেওয়ার চুক্তিতে তাদের সঙ্গে স্ত্রীর মতো আচরণ করে আসছেন বলে জানান এই হেফাজত নেতা।
কোনো নারীর ভরণপোষণ নিয়মিত দেওয়া সাপেক্ষে তার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর আচরণ করা যায় কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গভবন শিশুপার্ক জামে মসজিদের সাবেক খতিব, ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি কাজী ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘ইসলামের আগে যখন কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ছিল, তখন নিজেদের প্রয়োজনে এ রকম নিয়ম বানিয়ে নিয়েছিল কেউ কেউ। তবে তাদের বানানো এই নিয়মের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।’
মুফতি ফিরোজ আরও বলেন, ‘‘অন্ধকার যুগে মানুষের বানানো এই ব্যবস্থাকে ‘মুতাবিয়া’ বলা হয়। যারা দীন বোঝে না, ইসলামকে মানে না, তারা এই নিয়মের প্রচলন ও ব্যবহার করে। প্রকৃত মুসলমানদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা নেই। নবিজি এই প্রথাকে ঘৃণাভরে বাতিল করে দিয়েছেন। এই প্রথার মাধ্যমে নারীজাতিকে নিকৃষ্টভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।”
এই মুফতি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে ইসলামের নাম ব্যবহার করে, গোপনে নিজেদের প্রয়োজনে এক শ্রেণির ভণ্ড এই ধরনের কাজ করে আসছে। মুসলমানের বেশ ধরে কেউ এ রকম ঘৃণ্য কাজ করলে বুঝতে হবে, সে সত্যিকার ঈমানদার নয়।’
প্রায় একই অভিমত জানালেন মুফতি ইমরানুল বারি সিরাজি। তিনি বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক বিয়ের কথা কখনো শুনিনি। সোনারগাঁও এলাকা থেকে মামুনুল হক আল্লাহর কসম করে লাইভে বলেছেন, তিনি শরিয়ত মতে বিয়ে করেছেন। তাহলে যদি দুই জন সাক্ষী থাকেন, আর তারা যদি বলেন, তাদের উপস্থিতিতে বিয়ে হয়েছে, তাহলে ঠিক আছে। এখন শুনছি, চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করেছেন। তিনি একবার এক রকম কথা বলে বিষয়টা জটিল করে তুলছেন। ইসলামে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে বলে কোনো বিয়ে নেই। এটা আইনগতভাবে করতে হলে কাবিননামা লাগবে।’
প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইনের প্রেক্ষাপটে ‘চুক্তিবদ্ধ বিয়ে’ সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আইনে এই ধরনের চুক্তিভিত্তিক বিয়ে বলে কোনো কিছু নেই। নির্দিষ্ট দেনমোহর ধার্য করে, দুই জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রি করার মাধ্যমেই কেবল বিয়ে আইনগত বৈধতা পায়। আর শরিয়াহ অনুযায়ী যেকোনো পুরুষ, যেকোনো নারীকে দুই জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে, কলেমা পড়ে কবুল বললে তারা একত্রে জীবন কাটাতে পারেন। যা ধর্মীয় মতেও বৈধ।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘এভাবে কবুল বলে বিয়ে করলে সে বিয়ে শরিয়াহ মোতাবেক বৈধ হলেও রাষ্ট্রীয় আইনে হয় না। রাষ্ট্রীয় আইনে বিয়ে বৈধ হবে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে। তবে রাষ্ট্রীয় বা শরিয়াহ আইন কোনোটাতেই চুক্তিভিত্তিক বিয়েকে বৈধতা দেওয়া হয়নি।’
একই মত অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ হোসেনেরও। তিনি বলেন, ‘আইনগত বিয়ে মানেই রেজিস্ট্রি করে বিয়ে। এই বিয়েতে কাবিননামা আর সাক্ষী বাধ্যতামূলক। এসব না থাকলে বিয়ে আইনসম্মত হবে না। চুক্তিভিত্তিক বিয়ে বলে কোনো বিয়ের অস্তিত্ব আইনে নেই।’
উল্লেখ্য, রোববার (১৮ এপিল) দুপুরে মোহাম্মদপুর রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তাকে ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে মহানগর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।