দেশেই করোনার ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। একইসঙ্গে তারা দ্রুত দেশি কোম্পানির মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন।
রাশিয়া-চীনের ফর্মুলায় দেশে করোনার টিকা তৈরির উদ্যোগকে খুশির খবর বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার টিকা ভালো। অনেক দেশ নিচ্ছে। চীনের টিকাও ভালো।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘রাশিয়া ও চীনের ফর্মুলায় দেশে করোনার টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ খুবই ভালো। এভাবে টিকা উৎপাদন করে দেশের মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনলে মৃত্যুর হার অনেক কমে যাবে।’
দেশে করোনার টিকা তৈরির পর এই টিকাকে বাণিজ্যে পরিণত না করার আহ্বান জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)। তিনি বলেন, ‘মহামারি চলমান। আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে দেশের তিনটি শিল্প প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরিতে আগ্রহ দেখিয়েছি।’
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘এর আগের টিকাগুলো সরকার কিনে এনে জনগণকে ফ্রি দিয়েছে। সামনেও এই টিকা বেসরকারি খাত থেকে কিনে নিয়ে জনগণকে দিতে হবে বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে। পাশাপাশি সরকারিভাবেও ভ্যাকসিন তৈরি শুরু করতে হবে। ভ্যাকসিন তৈরির অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। পাবলিক হেলথ থেকে গুটি বসন্তের টিকা সফলভাবে অতীতে তৈরি করা হয়েছে।’
দেশে টিকা তৈরির মাধ্যমে পরনির্ভরশীলতা থেকে সরকার বেরিয়ে আসতে পারবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান কাজী মোস্তাক শরীফ। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রথমে একটু দোলাচালে থাকলেও পরবর্তী সময়ে মানুষ গণহারে রেজিস্ট্রিশন করেছে। এর মধ্যে টিকাদানে ছেদ পড়েছে। প্রথম দফার টিকা অনেকে দিতে পারেননি এখনো। ফলে যত দ্রুত সম্ভব রাশিয়া বা চায়না যে দেশেরই হোক, টিকা উৎপাদনে যাওয়া। এতে অধিক সংখ্যক মানুষ টিকার আওতায় চলে আসবে। আমাদের ওষুধ তৈরিতে বিশাল সফলতা ও সক্ষমতা রয়েছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে টিকা তৈরিতেও সেই সক্ষমতা দেখাতে পারবেন আমাদের বিজ্ঞানীরা।’
টিকাকে কেন্দ্র করে যেন গলাকাটা বাণিজ্যের সুযোগ কেউ না পায়, সে সতর্ক থাকার আহ্বান জানালেন এম আর খান শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া ও চীনের ফর্মুলা নিয়ে আমাদের দেশে টিকা তৈরি হবে, এটি খুবই আশার কথা। এতে দেশে টিকার অভাব থাকবে না। স্বল্প সময়ে অনেক মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে। তবে, সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে দাম রাখতে হবে।’
একই অভিমত জানালেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি ল্যাবের প্রধান প্রফেসর ডা. আশেকুর রহমান। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন পেলে দেশের ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প সময়ের মধ্যে করোনার টিকা বানাতে সক্ষম হবে। সেই টিকা ব্যবহার করে দেশের মানুষ করোনা থেকে মুক্তি পাবে।’
দেশে করোনার টিকা তৈরির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেন এটিএন নিউজের বার্তা প্রধান প্রভাষ আমিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হলো। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলসহ অনেক অর্জন রয়েছে। আরেকটি অর্জন হতে যাচ্ছে, রাশিয়া ও চীনের ফর্মুলা নিয়ে দেশে টিকা তৈরি করা। আমি ভীষণ খুশি। আরও খুশি হতাম, যদি আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা টিকা আবিষ্কার করতেন। সে চেষ্টাও ছিল। একদিন নিশ্চয়ই সফল হবেন, সে আশায় আছি।’
করোনা ভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনের পর থেকে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। অনেক কোম্পানি তাদের সক্ষমতার কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশে এই টিকা উৎপাদনের কোনো সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেছিলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা চলছে। বাংলাদেশে একাধিক কোম্পানির এই টিকা বানানোর সক্ষমতা রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, বুধবার (২৮ এপ্রিল) অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় দেশে করোনার টিকা তৈরির প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার বলেন, ‘‘রাশিয়ার ‘স্পুটনিক’ ও চীনের ‘সাইনোফার্ম’ থেকে টিকা তৈরির ফর্মুলা আনা হবে। এরপর দেশে যাদের ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা আছে, তাদের মাধ্যমেই তৈরি করা হবে।’’ এই নিয়ে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে বলেও তিনি জানান।