রাজধানীর কলাবাগানে নিজ ফ্ল্যাটে চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান ওরফে লিপি হত্যার পর তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়েছে। লিপি হত্যা মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পিবিআই’র পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ছায়া তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের কারণ কী, কারা জড়িত—এখন পর্যন্ত এসব প্রশ্নের জবাব মেলাতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মামলার তদারকি কর্মকর্তা ও পিবিআইর বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলমের। তিনি বলেছেন, ‘২২ আগস্ট মামলাটির তদন্তভার পেয়েছি। পাশাপাশি সব ধরনের ডকুমেন্ট থানা থেকে পাওয়া গেছে। তদন্ত করছি। পুরোপুরি তদন্ত শুরু করতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আশা করছি, প্রতিবেদন পেলেই এ ঘটনার অনেক কিছুই পরিষ্কার হবে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে। সেখানে লিপিকে কীভাবে হত্যা করেছে, হত্যার পর কীভাবে তার লাশ পোড়ানো হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা মিলবে।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে থানা পুলিশের সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ছায়া তদন্ত করে। লিপির ফ্ল্যাটে সাবলেটে থাকা কানিজ সুবর্ণা, বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী, গৃহকর্মী, ভবনের বাসিন্দা ও লিপির সহকর্মী, স্বজনসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে বিভিন্ন সময় থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। লিপির সঙ্গে পরিবার বা কর্মস্থলে কারও বিরোধ ছিল কি না, তা বেরিয়ে আসবে বলে আশা ছিল তদন্ত সংশ্লিষ্টদের। এসব বিষয় হত্যাকাণ্ডের পেছনে কাজ করতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল। তবে, সেরকম কোনো তথ্য দিতে পারেননি তার স্বজন কিংবা সহকর্মীরা।
হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই চিকিৎসকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু সেখানেও হত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি কললিস্টের সূত্র ধরে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নানা বিষয়ে জেরা করা হলেও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের কারো সংশ্লিষ্টতা আছে, এরকম সন্দেহজনক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, যা দিয়ে হত্যার কারণ বা খুনিদের বের করা যাবে।
তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ার কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই বাড়িতে কেউ এলে তা লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা ছিল না। বাড়িতে সিসি ক্যামেরা থাকলে হয়ত এতদিনে আরও অনেক কিছুই পরিষ্কার হওয়া যেত।
নিহতের মামাতো ভাই রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, সাবলেট থাকা তরুণী কানিজ সুবর্ণা এ ঘটনার কিছু না কিছু জানে। কিন্তু তাকে একাধিকবার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি বলে আমাদের জানানো হয়। অথচ, ঘটনার দিন ভোরবেলা সবার আগে ওই ফ্ল্যাট থেকে সেই (তরুণী) বেরিয়ে যায় এবং ফিরে এসে লিপি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানায়।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পিবিআইর তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই তরুণীকেই শুধু নয়, তদন্তের স্বার্থে যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার হবে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করব।’
প্রসঙ্গত, গত ৩০ মে সকালে কলাবাগান প্রথম লেনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে শোবার ঘর থেকে চিকিৎসক লিপির রক্তাক্ত ও পোড়া মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও পোড়া দাগ ছিল। তিনি গ্রীনলাইফ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ছিলেন।