ঢাকার পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালে দীর্ঘদিন খালাস না নেওয়ার কারণে বিক্রির অযোগ্য মেয়াদোত্তীর্ণ শিশু খাদ্যপণ্য দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পানগাঁও বন্দরের অতিরিক্ত কমিশনার মাহফুজুল হক ভূঁইয়া ঠিকাদার আল-আমীন ট্রেডাস মালিক সোহেল রানার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে ২৬ লাখ ১১ হাজার টাকা দরে তা বিক্রি করে দেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই নিলামে লোক দেখানো দরপত্রে তোলা হয়। কিন্তু আল-আমীন ট্রেডার্স অতিরিক্ত কমিশনার মাহফুজুল হককে ম্যানেজ করে কাজ নেন। ৬নং লটের এমআরএসইউ-৩৩৪৯৭৪৯ কন্টেইনারে ১৫টি পণ্য। তার ওজন ১৩ হাজার ৯২১ কেজি। এই পণ্যের উৎপাদন দেখানো হয়েছে ২০২১ সালের ৯ মার্চ, আর মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তার মানে পণ্যের মেয়াদ আছে এক সপ্তাহ।
নিলামে উল্লেখ রয়েছে, নিলাম পরবর্তী সময়ে আদালতের কোনো মামলা উদ্ভব হলে তা নিষ্পত্তি সাপেক্ষে ছাড়যোগ্য হবে। বিএসটিআই বা অন্য দপ্তর হতে পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করার শর্ত থাকলে তা পূরণ সাপেক্ষে পণ্য ছাড়যোগ্য হবে এবং পরীক্ষণের খরচ নিজে বহন করবেন, অন্যথায় কার্যাদেশ বাতিল করা হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো পণ্য ছাড়যোগ্য হবে না।
মেয়াদোত্তীর্ণ চকলেট আইটেমে রয়েছ বাদাম কিরিপ খাস্তা ২৯০০ কেজি, ওট চকো ৮০০, কফি বাদাম ২৪৮০ কেজি, অরিজিনাল ওট চকো ৯১০ কেজি, ব্রাউন সুগার বাদাম ২৪১০ কেজি, ওট চকো ৭৭০ কেজি, ম্যাংগো ফ্লেভার সফট ক্যান্ডি ১০৪১ কেজি, নারকেল লেপা ১৬৩০ কেজি, নারকেল ফ্লেভার নরম ক্যান্ডি ৯৮০ কেজি।
যেখানে এসব পণ্য ধ্বংস করার কথা রয়েছে। কিন্তু পণ্য বাজারজাত করার জন্য আল-আমীন ট্রেডার্স এসব খাদ্যপণ্য নতুন করে মেয়াদ বাড়িয়ে বাজারে বিক্রি করবে বলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোহেল রানা জানান।
তিনি বলেন, কোনো সমস্যা হবে না। বন্দর কর্তৃপক্ষ মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করতে পারলে আমি বিক্রি করলে সমস্যা হবে না। কারণ এসব পণ্য সারা দেশে এক সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি করতে পারবো। তাই নতুন করে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনের দরকার হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন্দর কর্মকর্তা জানান, বিদেশ থেকে আনা এসব কন্টেইনার ভর্তি পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে খালাস নেয়নি আমদানিকারক। নিয়ম অনুযায়ী আমদানি করা পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে খালাসের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস না নিলে সেসব পণ্য নিলামে তোলে কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ দিন পরে থাকার পর এসব পণ্য মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। সেই পণ্য আবার নিলাম ডাকার পর বিক্রি করার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি।
অভিযোগ অস্বীকার করে পানগাঁও বন্দরের অতিরিক্ত কমিশনার মাহফুজুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমি ঘুষ নিলে আপনার সমস্যা কী? দেখার জন্য কর্তৃপক্ষ আছে। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য নিয়ম অনুযায়ী বিক্রি করেছি।
এ ব্যাপারে শুল্ক গোয়েন্দা কমিশনার ফকরুল আলম বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করার নিয়ম নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পণ্যের মেয়াদ না থাকলে সেগুলো ধ্বংস করতে হবে। বিক্রি করতে পারবে না।
বিএসটিআই উপ-পরিচালক (সিএম) কে এম হানিফ বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য খালাসের জন্য ছাড়পত্র বিএসটিআই দেয়নি। কোনো সুযোগও নেই। এ ধরনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, যে পণ্যের মেয়াদ নেই, তা যত দাম্এ হোক বিক্রি করা ঠিক নয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াও ধারণা অনুযায়ী বলা যায়, এ সব খাদ্য খেলে ভয়াবহ ক্ষতি হবে শিশুদের। মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য খেলে বাচ্চাদের পাকস্থলী, হৃদপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে।