হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডলার, ইউরোসহ বিদেশি মুদ্রা পাচার করছে শক্তিশালী কালোবাজারি চক্র। জাল-জালিয়াতি করে এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিন প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের বিদেশি মুদ্রা বিদেশে পাচার করছে। এ কারণে বাংলাদেশে ডলার, ইউরোসহ বিদেশি মুদ্রার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এই বিদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় ও পাচারে জড়িত দেশের সাতটি ব্যাংক ও দুটি মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান। সাতটি ব্যাংক হলো—রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক; বেসরকারি মিচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পুবালী ব্যংক, প্রবাসী কল্যাণ, যমুনা ব্যাংক এবং এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার ও ইমপেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জার।
প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিভিন্ন দেশের নাগরিক শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তারা বিমানবন্দরে থাকা ব্যাংকের বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে ডলারসহ বিদেশি মুদ্রা দিয়ে টাকা সংগ্রহ করেন। বিমানবন্দরে থাকা উল্লিখিত সাত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া ভাউচার দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি লোকজনের কাছ থেকে ডলারসহ বিদেশি মুদ্রা কিনে তা কালোবাজারিদের মাধ্যমে পাচার করেন। বিদেশি মুদ্রা কেনার পর সেই মুদ্রা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে যুক্ত করার কথা থাকলেও সেটা করা হয় না। বরং, এ সংক্রান্ত কোনো প্রকার তথ্য না দিয়ে মানিল্ডারিং করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করছে।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাতটি ব্যাংক ও দুই মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ বিদেশি মুদ্রা পাচারে জড়িত শক্তিশালী কালোবাজারি চক্রের হোতাদের ধরতে সম্প্রতি অভিযানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের এনফোর্সমেন্টের টিম কয়েক দিন ধরে অভিযান চালিয়ে বিদেশি মুদ্রা পাচারের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
বিদেশি মুদ্রা পাচারে জড়িত সাতটি ব্যাংক ও দুই মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কালোবাজারি চক্রের সন্ধান পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিমানবন্দরে বিদেশি মুদ্রা পাচারের সঙ্গে জড়িত একটি শক্তিশালী কালোবাজারি চক্রের সন্ধান পেয়েছি। জড়িতদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। চক্রের মদদদাতা ও সহযোগীদের বিষেয়েও দুদক তথ্য সংগ্রহ করছে। এ বিষয়ে আইন ও বিধি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
ব্রিফিংয়ে দুদক সচিব জানান, সাধারণত প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মজীবী ও বিদেশি বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তারা বিদেশি মুদ্রা বিমানবন্দরে থাকা ব্যাংকের বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি টাকায় এনক্যাশমেন্ট করে থাকেন। আইন, বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী ফরেন কারেন্সি এনক্যাশমেন্ট ভাউচার এনক্যাশমেন্টকারীকে দিতে হয়। কিন্তু, বিমানবন্দরের সাতটি ব্যাংক ও দুটি মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের ভাউচার না দিয়ে জাল ভাউচার দিয়ে সরাসরি ফরেন কারেন্সি গ্রহণ করে বিনিময়ে দেশি টাকা দিয়ে দেয়। জালিয়াত চক্র স্বাক্ষরবিহীন ভুয়া ভাউচার কিংবা এনক্যাশমেন্ট স্লিপ দেয়। এই বিদেশি মুদ্রা ক্রয়কারী ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূল হিসাবে কিংবা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত অ্যাকাউন্টে অন্তর্ভুক্ত করে না। বিদেশি মুদ্রার কেন্দ্রীয় রিজার্ভে এসব বিদেশি মুদ্রা যুক্ত হয় না, ফলে বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি বা সঙ্কট সৃষ্টি হয়।
মাহবুব হোসেন বলেন, অপরাধে জড়িতরা অবৈধভাব কেনা ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড, দিনার ও অন্যান্য ফরেন কারেন্সি সংগ্রহ করে বিদেশি মুদ্রাপাচারকারী, বিদেশি কালবাজারি ও বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সরবরাহ করে বলে দুদকের অভিযানে তথ্য পাওয়া গেছে। দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালিয়ে ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার কর্তৃক এনক্যাশমেন্ট স্লিপ ব্যতীত ফরেন কারেন্সি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পেয়েছে। একাধিক ভুয়া ভাউচার ও স্বাক্ষরবিহীন ভাউচার সংগ্রহ করেছে। পাচার চক্রে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা ও সন্দেহভাজনরা কমিশনের নজরদারিতে আছে।