ঈদের ছুটিতে রাজধানী ছেড়েছেন অধিকাংশ মানুষ। তাই, ঢাকা এখন প্রায় ফাঁকা। এ সুযোগ নিতে পারে অপরাধীরা। এ সময় ঢাকায় ছিনতাই, ডাকাতি ও বাসায় চুরির মতো অপরাধ যেন না ঘটে, সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নও (র্যাব) নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা দিতে আমাদের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে। টহল টিমের পাশাপাশি চেকপোস্ট জোরদার করা হবে। ফাঁকা ঢাকায় যেকোনো অপরাধ দমনে মাঠ পর্যায়ে থাকবে স্পেশাল টিম।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈদের ছুটিতে রাজধানী ছেড়েছে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। এ কারণে ঢাকা প্রায় ফাঁকা থাকবে। সাধারণত, এ সময়ে অপরাধীদের অপতৎপরতাও বেড়ে যায়। তাদের সহজ লক্ষ্যে পরিণত হয় ফাঁকা ঢাকার বাসা ও পথচারীরা। আগের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আলাদা আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব ও পুলিশ। রমজান জুড়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যেতে পারে। সে আশঙ্কা থেকে নতুন করে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির মতো অপরাধ দমনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে ডিএমপির স্পেশাল টিম। এ টিম এলাকায় এলাকায় টহল দেবে এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় সন্দেহজনক কারো চলাফেরা দেখলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ঈদের ছুটির সময় দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে এই স্পেশাল টিম।
এদিকে, ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা দিতে ডিএমপির ৫০টি থানাকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। ডিএমপির সদর দপ্তর থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকটি সভাও হয়েছে ইতোমধ্যে। থানার অফিসার ইনচার্জদেরকে (ওসি) দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঈদের ছুটির কয়েক দিন আগে থেকে এবং ঈদের ছুটির কয়েক দিন পর পর্যন্ত টহল ও চেকপোস্ট জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কয়েকজন ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা রাইজিংবিডিকে বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাবে। তাদের বাসা-বাড়ি পাহারা দিতে আমাদের বিশেষ টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় পুলিশের তৎপরতা বেশি থাকবে। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধ যাতে না ঘটে, সেজন্য পেট্রোলিং ইতোমধ্যেই জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া, দিনে-রাতে চেকপোস্ট থাকবে। গত বছর ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকায় ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা ছিলো, পুলিশ সদস্য মনিরুজ্জামান তালুকদারের হত্যাকাণ্ড। গত ঈদুল আজহার ছুটির দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন তিনি।
অন্যদিকে, ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে রাজধানীবাসীকে ১৪টি পরামর্শ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেগুলো হলো— গ্যাসের ও পানির লাইনসহ সব ধরনের লাইট, ফ্যানের সুইচ, বৈদ্যুতিক প্লাগ বন্ধ করে বাসা থেকে বের হবেন। বাসা বাড়িতে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফিরে এসে দরজা-জানালা খুলবেন। ঘরে জমে থাকা গ্যাস বের না হওয়া পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই গ্যাসের চুলা জ্বালানো কিংবা বৈদ্যুতিক সুইচ অন করবে না।
বাসা-বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। পূর্বে বসানো সিসি ক্যামেরা সচল আছে কি না পরীক্ষা করতে হবে।
বাসার চারপাশে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। নগদ টাকা কিংবা স্বর্ণালঙ্কার ব্যাংক কিংবা নিকটাত্মীয়দের কাছে নিরাপদে রেখে যাবেন ইত্যাদি।
ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা দিতে পুলিশের পাশাপাশি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাবও। গোয়েন্দা দল, চেকপোস্ট, রোবাস্ট পেট্রোল ও টহল টিমের পাশাপাশি কিছু এলাকার জন্য স্পেশাল টিম ইতোমধ্যে প্রস্তুত রেখেছে র্যাব। বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে চুরি ও ছিনতাই বেশি ঘটে। এসব রেড জোনে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ প্রতিবেদককে বলেছেন, ঢাকা শহরের অনেক বাসিন্দা ঈদের ছুটিতে গ্রামে গেছেন। শূন্য ঢাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের ওপর বর্তায়। ফাঁকা ঢাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা টহল জোরদার করেছি।