রাজধানীতে শুক্রবার (১২ জুলাই) কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ঢাকায়।
জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তায় যানবাহন কম। যেগুলো রাস্তায় বেরিয়েছে, সেগুলো চলছে ধীর গতিতে। ইঞ্জিনে পানি ঢোকায় কিছু গাড়ি রাস্তায় বিকল হয়ে পড়েছে। ফলে, তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। রিকশায় উঠলে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। কিছু জায়গায় রাস্তা ভালো নয়, খানা-খন্দে ভরা। পানি জমে থাকায় রাস্তায় থাকা গর্ত দেখা যাচ্ছে না। অনেক রিকশা ও গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। সব মিলিয়ে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী।
মানুষের দুর্ভোগের সংবাদ সংগ্রহ করতে কোমড় পানিতে দাঁড়িয়ে ভিডিও ধারণ করছিলেন এ প্রতিবেদক। সে সময় মিরপুর-১২ থেকে ছেড়ে আসা মিরপুর লিংক বাসের এক যাত্রী জিজ্ঞেস করেন, ভাই, পানির নিচে কি রাস্তা ভালো?
২০১৭ সালের ২৬ জুলাই জলাবদ্ধতার কারণে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য রাজধানীর রেডিসন হোটেলের কাছে মিরপুর ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে সড়কটি যে ভালো আছে, তা জানিয়ে দিতে ট্রাফিক পুলিশ ‘পানির নিচে রাস্তা ভালো’ সাইনবোর্ড টাঙিয়েছিল। তখন বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।
শুক্রবার ভোর থেকে প্রবল বৃষ্টির কারণে রাজধানীর আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর-১০, ১১সহ বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। এসব এলাকার সড়কগুলোতে ইঞ্জিনে বৃষ্টির পানি ঢুকে অনেকগুলো ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিকল হয়ে পড়ে।
মাদারীপুর থেকে আসা শাহীন নামের এক বিদেশগামী যাত্রীকে দেখা যায় সিএনজি অটোরিকশা ঠেলতে। কারণ জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্তভাবে জানান, আজ তার ফ্লাইট। এয়ারপোর্টে যাচ্ছেন। রাস্তায় চার বার অটোরিকশার ইঞ্জিন বন্ধ হয়েছে। এখন আর স্টার্ট নিচ্ছে না। তাই, তিনি নিজে কোমড়পানিতে নেমে অটোরিকশা ঠেলছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী দেখে ফিরছিলেন আলেয়া বেগম। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এটা কেমন উন্নয়ন, ভাই? মাথার উপর মেট্রোরেল আর নিচে এরকম জলাবদ্ধতা! গাড়িটা ৪-৫ বার নষ্ট হয়েছে।
১০-১৫ জন সিএনজি অটোরিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয়। তারা সবাই অটোরিকশা ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের একজন রাইজিংবিডিকে বলেন, ভাই, আমরা এখন তিন চাকার নৌকা চালাইতেছি। কোমড় পর্যন্ত পানি, এর মধ্যে সিএনজি চালাইবো কেমনে?
প্রাইভেট কারের চালক ইমন বলেন, দেখুন, গাড়ির মধ্যে পানি ঢুকে গেছে। ড্রাইভিং সিটের নিচে পানি থাকায় ব্রেক/এক্সিলেটর চাপতে সমস্যা হচ্ছে।
বাসচালকরা বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ছে। ঠিকভাবে আমরা যেতে পারছি না। রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের গাড়িগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পানিতে। এতে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
মিরপুর-১১ এর একটি মসজিদের ইমাম বলেন, বাড়ি থেকে পাক হয়ে বের হয়ে নোংরা নাপাক পানিতে হেঁটে কীভাবে যাই? অনেকসময় পরে রিকশা পেলাম। এখন নামাজ পাবো কি না, জানি না।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, পানি আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে মালামাল নষ্ট করছে। আমাদের আর্থিক লোকসান গুনতে হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনে এবং গণপূর্ত বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে এক হয়ে কাজ করে আমাদের এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে হবে। এটা আমাদের অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর কাছে।