সরকারি টাকা আত্মসাৎ, নিয়োগ ও বদলিবাণিজ্যসহ দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করীম ও বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান। দেশ-বিদেশে গড়েছেন আলিশান গাড়ি-বাড়ি। তারা দুর্নীতির টাকা পাচার করেছেন বিদেশে। আ.লীগ সরকারের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীই শুধু দুর্নীতি করেছেন তা নয়, বরং তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দাপট দেখিয়ে টেন্ডার, নিয়োগ ও বদলিবাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামিয়েছেন তাদের পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনও।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক দুই মন্ত্রী শ ম রেজাউল করীম ও মুন্নুজান সুফিয়ানের অনিয়ম-দুর্নীতিতে গড়া বিপুল সম্পদের সাম্রাজ্যে এবার চোখ পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের। সাবেক দুই মন্ত্রী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে তারা। ইতোমধ্যে তাদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে দুদক। আর এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের ডেপুটি ডিরেক্টর আকতারুল ইসলাম।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, শ ম রেজাউল করিম ২০১৮ সালে পিরোজপুর-১ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রথমবার নির্বাচিত হয়েই চমক দেখান তিনি। দায়িত্ব পেয়ে যান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের। তবে, অল্পদিনে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এ সময় তাকে আর ওই মন্ত্রণালয়ে রাখা হয়নি। দপ্তর বদল করে তাকে করা হয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী।
দুদক জানায়, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি নিজ নামে বরিশালের নাজিরপুর, পিরোজপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে স্থাবর সম্পদ গড়েছেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন নামক প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং প্রশিক্ষণের নামে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ সময় তার কাছে একটি অবৈধ গাড়ি ছিল। ব্যাংকেও ছিল বিপুল অংকের নগদ অর্থ। এ ছাড়া, তার দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে বলে দুদক জানায়।
তারা আরও জানায়, শ. ম রেজাউল করিমের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজ নামে এবং তার পোষ্যবর্গ এবং আত্মীয়-স্বজনের নামে তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছে বলে প্রাথমিকভাবে সঠিকতা পরিলক্ষিত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অভিযোগটি প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য অনুমোদিত হয়েছে।
দুদক জানায়, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান ও তার আত্মীয়-স্বজনের নামে দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, তার এপিএস ছোটভাই মো. সাহাবুদ্দিন, সাহাবুদ্দিনের মেয়ে শামীমা সুলতানা হৃদয়, বোনের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত পৃথিবীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব অপকর্ম করে তারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের নামে ঢাকার উত্তরায় ১০ নং সেক্টরে রাজউকের ৫ কাঠা জমি, খুলনার দৌলতপাড়ার সাহেববাড়ি রোডের ৩ তলা আলিশান বাড়ি, ২টি আলিশান গাড়ি, কেডিএ মৌথুরী হাউজিং ১৬.০৭ কাঠা জমি রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতির মাধ্যমে তার এপিএস ছোটভাই মো. সাহাবুদ্দিন, সাহাবুদ্দিনের মেয়া শামীমা সুলতানা হৃদয়, বোনের ছেলে ইয়াছির আরাফাত পৃথিবী দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন।