যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে শেখ হাসিনা সরকারের শেষ বছরগুলোতে বাংলাদেশের সম্পর্ক কিছুটা অবনতি হয়। খোদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বক্তব্যে বিষয়টি ফুটেও উঠেছিল। অর্ন্তবর্তী সরকার গঠনের পর সর্ম্পক জোরদারের আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে আগামীকাল শনিবার। সফর ঘিরে তাই কৌতূহল বিরাজ ঢাকায়।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে থাকছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ও ইউএসএইডের এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হতে যাচ্ছে এটি। শেখ হাসিনা সরকারের সাথে সম্পর্কের রেশ কাটিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও অন্যান্য খাতে সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলছে দেশটি। তবে এ ক্ষেত্রে দেশটির দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, সে বিষয়ে জানার আগ্রহ সবার। তবে সদ্য দায়িত্ব নেয়া পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেছেন, এই সফরে গুরুত্ব পাবে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের বিষয়টি। বাংলাদেশের বর্তমান সংকট উত্তরণের চাহিদাগুলো জানতে চাইতে পারে ওয়াশিংটন।
কূটনীতিকরা মনে করছেন, হাসিনা সরকারের আকস্মিক পতনকে ভারত নিজেদের জন্য একটি কৌশলগত পরাজয় মনে করছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে বাংলাদেশ পরিস্থিতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে তুলে ধরে সহযোগিতা চেয়েছেন। এমনকি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘মেগাফোন কূটনীতিতে’ ভারত বিস্মিত-বিরক্ত-বিচলিত বলেও সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। এমন প্রেক্ষাপটে লু দিল্লি হয়ে ঢাকা আসছেন। সার্বিক বিচারে মার্কিন এই দলটির এবারকার ঢাকা সফরে নানামুখী তাৎপর্য আছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ব্যাংক খাতে সংস্কার, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা, দুর্নীতি দূর করা, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পাওয়া, পুলিশ ও বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য সহায়তা পাওয়া–এমন বহু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক, কারিগরি ও আর্থিক সমর্থন বাংলাদেশের দরকার হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিনিধিদলের এই সফরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা।
প্রতিনিধিদলটি ওয়াশিংটন থেকে সরাসরি ঢাকা আসছেন না, দিল্লি হয়েই আসছেন। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লু এখন ভারতে অবস্থান করছেন। সেখানে ওয়াশিংটন-দিল্লি প্রতিরক্ষাবিষয়ক ইন্টারসেশনাল সংলাপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন লু। তারপর প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় আসবে শনিবার। ১৬ সেপ্টেম্বর তাদের ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ ও পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। বৈঠক হতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে। এটা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র যে গুরুত্ব দেয়, তার একটা বড় প্রতিফলন। আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে। এছাড়া বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তাই বাংলাদেশের বর্তমান সংকট উত্তরণের চাহিদাগুলো জানতে চাইবে ওয়াশিংটন।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এই সফরে বোঝা যায়, তারা এই সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। আর প্রতিনিধিদলের গঠন থেকে বোঝা যায় তাদের সঙ্গে আলোচনা বহুমাত্রিক হবে।
উচ্চপর্যায়ের এই প্রতিনিধিদলের সফরের গুরুত্ব সর্ম্পকে জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির বলেন, এই দলে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকছেন। আর্থিক ও অর্থনৈতিক খাতের প্রতিনিধিদের আধিক্য বেশি। সেক্ষেত্রে বহুমাত্রিক আলোচনার সুযোগ এবং সম্ভাবনা রয়েছে। কূটনৈতিক দৃশ্যমানতা, দেশের অর্থনৈতিক চাহিদা ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন বাস্তবতায় মার্কিন প্রতিনিধিদলটির সফর সময়োপযোগী ও অর্থবহ হওয়ার সুযোগ আছে এই সফরে।