চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত নাম সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার। আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত শিক্ষক হিসেবে তদবিরের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম ও প্রথম মহিলা উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের উপাচার্য হিসেবে ৪ বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়। ১৯ মার্চ নতুন উপাচার্য নিয়োগের মধ্য দিয়ে তার বিদায় হয়।
অভিযোগ আছে, দায়িত্ব পালনের প্রায় সাড়ে চার বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিধি-বহির্ভূতভাবে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন এই শিক্ষিকা। যেদিন তিনি বিদায় নেন, ওইদিন রাত পর্যন্ত অফিস করে কোনও প্রকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে ৩৭ কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে যান।
জানা গেছে, উপচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শিরীণ আখতার দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কোনও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দেন ১৭২ জনকে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির ১১৫ আর চতুর্থ শ্রেণির ৫৭ জন। এর বাইরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৩৬৮ জন শিক্ষক ও কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক ১৩০ জন, অন্যরা কর্মচারী। এভাবে তিনি সিন্ডিকেট করে আইন-কানুনের সব রেকর্ড ভেঙে অবৈধভাবে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। আর প্রত্যেকটি নিয়োগে তিনি ৫ থেকে ১৫/২০ লাখ করে ঘুষ নিয়েছেন। ঘুষ গ্রহণ ও তার নিয়োগ বাণিজ্য ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’। এভাবে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, সভা-সেমিনারের নামে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন সাবেক উপাচার্য এই শিরীণ আখতার। ঘুষের বিনিময়ে তার নিয়োগ বাণিজ্যসহ অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা আন্দোলনও করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আওয়ামী লীগের ওপর মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে তিনি একের পর এক অপকর্ম করে গেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চবির এই উপাচার্য ২০২৩ সালের ৪ জুন ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন।
চবির মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা এবং একই দিনে অন্য একটি সভা দেখিয়ে হাতিয়ে নেন ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সভা-সেমিনার দেখিয়ে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু নীতি-নৈতিকতার মানদণ্ডে তার মধ্যে কোনও প্রকার অনুশোচনা হয়নি। বরং, দোর্দণ্ড প্রতাপে ঘুষ-দুর্নীতি করেই বিদায় নেন আলোচিত শিরীণ আখতার।
খবর নিয়ে জানা গেছে, শিরীণ আখতারের গত সাড়ে চার বছরের ঘুষ-দুর্নীতির অপকর্ম খোঁজ নিতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ইতোমধ্যে তার অনিয়ম ও দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বনে যাওয়া অঢেল সম্পদের প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
বুধবার কমিশনের ডেপুটি ডিরেক্টর আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বলা হয়, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার যোগদানের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঘুষ, অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। প্রতিটি পদে নিয়োগের জন্য ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ও শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বিধি-বহির্ভূতভাবে প্রায় শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেন। সভা-সেমিনার অনুষ্ঠান দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন লাখ লাখ টাকা। নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরি করে ঘুষ গ্রহণ ও অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে গোপনে প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।