রাইজিংবিডি স্পেশাল

স্বস্তি নেই টায়ারের বাজারে, ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশালে রবিন রিকশা-সাইকেল স্টোরে টায়ার কিনতে যান রিকশার মেকানিক রবিউল। টায়ারের দাম শুনে তার মাথায় হাত। এক মাস আগে যে টায়ারের দাম ছিলো ৪৯০ টাকা থেকে ৫১০ টাকা, সেই টায়ারের বর্তমান দাম ৬৮০ টাকা থেকে ৭২০ টাকা (মানভেদে)। দোকানের মালিক বললেন, বিশ্বে টায়ার-টিউবের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। একটি টায়ার কোম্পানি পুড়ে যাওয়ায় টায়ারের দাম বেড়েছে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা।

রবিউল বলেন, কয়েকটি দোকান ঘুরলাম, পাঁচ-দশ টাকা দামের পার্থক্য। তিনটি টায়ার কিনলাম। 

রবিন রিকশা-সাইকেল স্টোরের ম্যানেজার সোহাগ হালদার বলেন, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েক হাজার মানুষ বেকার হন, পাশাপাশি টায়ার-টিউব উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় দেশেরে অন্যান্য কোম্পানিগুলো কাঁচামালের দাম বাড়ানোর দোহাই দিয়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছে। যে টায়ারের দাম ছিল ৪৯০ টাকা, তা এখন ৬৫০ টাকায় কিনে ৬৮০ টাকায় বিক্রি করছি। ৫১০ টাকার টায়ার ৬৮০টাকায় কিনে ৭২০ টাকায় বিক্রি করছি।

রায়েরবাগ এলাকার রিকশার গ্যারেজ মালিক তোফাজ্জল হোসেনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন,আমার রায়েরবাগে আপনবাজার এলাকায় ৬০টি রিকশা রয়েছে। এর মধ্যে প্যাডেলচালিত ৩৫টি এবং ব্যাটারিচালিত ২৫টি। বর্তমানে প্রতি টায়ারের দাম ১৯০ টাকা ২১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যেভাবে দাম বাড়ছে এতে এ ব্যবসায় টিকে থাকা কষ্টকর।

রায়েরবাগের রিকশা চালান মনির হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন রিকশা চালালে একটি টায়ার তিন মাস যায়। আগে ৫১০ টাকায় যে টায়ার কিনতাম তা এখন ৭২০ টাকা।

বংশালের রনি টায়ার স্টোরের মালিক আব্দুস সালাম বলেন, গাজী গ্রুপের টায়ার কারখানায় আগুন দেওয়ার পর থেকে টায়ারের দাম বাড়ছে।

এদিকে, খুচরা বাজারে বাস, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে বিভিন্ন টায়ারের দাম ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

বাস-ট্রাকের জন্য বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টায়ার আমদানি করে রহিম আফরোজ নামের একটি কোম্পানি। লোডস্টার সুপার ব্র্যান্ডের ৮২৫-১৬, ১৮ পিআর টায়ারের আগের দাম গত জুলাই মাসে ১৫ হাজার ১৭০ টাকা, বর্তমানে ১৬ হাজার ২০৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই কোম্পানির ৬৫০-১৪, ১২পিআরের দাম গত জুলাই মাসে ৯ হাজার ৬১০ টাকা, বর্তমানে ১০ হাজার ৭০০ টাকা, লোডস্টার সুপার এক্সপি ৫.৫০-১৩, ১২পিআরের দাম গত জুলাই মাসে ৬ হাজার ৬৮০ টাকা, বর্তমানে ৭ হাজার ৭০০ টাকা।

৪৫০-১২, ৮ পিআরের দাম গত জুলাই মাসে ৪ হাজার ৩৫০ টাকা, বর্তমানে ৪ হাজার ৩৫০ টাকা। আমার গোল্ড ব্র্যান্ডের ৮২৫-১৬, ১৬পিআর মডেলের টায়ারের দাম গত জুলাই মাসে ১৪ হাজার ৮১০ টাকা,বর্তমানে ১৫ হাজার ৯১০ টাকা, ৭৫০-১৬, ১৬ পিআরের দাম গত জুলাই মাসে ১২ হাজার ৩০০ টাকা, বর্তমানে ১৩ হাজার ৩০০ টাকা, ৫৫০-১৩, ১২ পিআরের দাম গত জুলাই মাসে ৬ হাজার ৫০০ টাকা, বর্তমান মূল্য ১৬ হাজার ২০৯ টাকা।

কার্গো রিপ ৬৫০-১৬, ১০পিআর মডেলের টায়ারের দাম গত জুলাই মাসে ৯ হাজার ৩৬০ টাকা, বর্তমান মূল্য ১০ হাজার ৪০৯ টাকা। ৬০০-১৪, ৮পিআর গত জুলাই মাসে সাত হাজার ৩৮০ টাকা, বর্তমান মূল্য ৮ হাজার ৩৮০ টাকা।

কদমতলী বাজারের খুচরা বিক্রেতা সরোয়ার বলেন, গাজী টায়ারের সরবরাহ বন্ধ থাকায় অন্য টায়ার উৎপাদনকারীরা দাম বাড়িয়েছে।আগস্ট মাসের শুরুতে ১ হাজার ৯০০ টাকায় সিএনজি অটোরিকশার টায়ার বিক্রি করেছি। এখন ব্র্যান্ডভেদে তা বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ১০০ টাকা থেকে ২৩০০ টাকা।

দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে গাজী টায়ার্স কারখানা। সাম্প্রতিক ছবি

পুরান ঢাকার বাংলাবাজার আল-আমিন মোটরসের মালিক গনি আদম বলেন, হোসেন, রূপসা, ওসাকা, এমপিএফ কোম্পানির টায়ার বিক্রি করছি। টায়ারের দাম বাড়ায় দরকার না হলে কেউ টায়ার কিনছেন না।

হোসেন টায়ার্সের মহাব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম তুহিন বলেন, গত কয়েক মাস আগে থেকেই রাবারের দাম বেড়েছে। এছাড়া ডলার সংকট, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে দাম বেড়েছে। নিত্যপণ্যের মতো টায়ারের দামও বেড়েছে।

গাজী টায়ার্সের নির্বাহী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. কামরুজ্জামান বলেন, মান ভালো হওয়ায় টায়ারের বাজারে সেলের দিক থেকে গাজী টায়ার ছিলো প্রথম।গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ফলে টায়ার বাজার বলে দেবে কতটা সাশ্রয়ী মূল্যে গাজী টায়ার বিক্রি করতো। এখন তো অন্য কোম্পানির যে টায়ারগুলো বাজারে ছিলো সেগুলোর দামও বেড়েছে।

তিনি বলেন, বছরে ৪০ লাখ টায়ার উৎপাদন করতো গাজী। বাজারে গাজীর শেয়ার ছিল ৪৫-৫০ শতাংশ। সম্প্রতি গাজী টায়ারের কারখানায় আগুন দেওয়ার আগে লুটপাটও করা হয়। বর্তমানে গাজী টায়ারের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ। এ কারণে বাজারে গাজী টায়ার নেই, দামও বেশি।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, টায়ার-টিউবের কাঁচামালের দাম বাড়ায় দেশের বাজারে টায়ারের  দাম বেড়েছে। সামঞ্জস্য রেখে দাম বাড়ানো হয়েছে কী-না খতিয়ে দেখা হবে।