রাইজিংবিডি স্পেশাল

সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ, শুনানির সিদ্ধান্ত

নিয়োগ পরীক্ষার বিধি লঙ্ঘন, মুক্তিযোদ্ধা কোটার অনৈতিক ব্যবহার, আর্থিক লেনদেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো, নিজস্ব লোক দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়নসহ অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের রাজস্ব খাতভুক্ত ৯৮ পদের নিয়োগের বিপক্ষে। নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর দিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে বিষয়টি আমলে নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে শুনানি গ্রহণের সিদ্ধান্তও হয়েছে।

জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টসহ রাজস্ব খাতভুক্ত ৯৮ পদের নিয়োগে এমন গুরুতর অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। বঞ্চিতরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কয়েক দফা অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার না পেয়ে বর্তমান জনপ্রশাসন সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গৃহীত এই নিয়োগ পরীক্ষায় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মেধাবীদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অযোগ্যদের নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। নিয়োগ পরীক্ষায় এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, অনেক প্রার্থী নিজেরা লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও অন্যের দ্বারা পরীক্ষা দিয়েছে। তারা উত্তীর্ণও হয়েছে। পরবর্তীতে আসল প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের নিয়োগ বিধি অনুসারে, বর্ণিত পদসমূহের জন্য দুই ঘণ্টায় ১৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও তা উপেক্ষা করে দেড় ঘণ্টায় ৯০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং পরীক্ষায় ১০ হাজারের বেশী পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও মাত্র ৭ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল প্রকাশের আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে। এছাড়া পূর্বে চাকরি পরীক্ষা নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কোনো সংস্থা দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি এবং উত্তরপত্র মূল্যায়ন করার নিয়ম থাকলেও সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তৈরিকৃত প্রশ্নেই লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এমনকি নিজস্ব লোক দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করার অভিযোগ রয়েছে।

নিয়োগ কমিটির কয়েকজন সদস্য এসব অনিয়মের কথা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছেন।

পুরো প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আ. রাজ্জাক সরকারের বিপক্ষে। এমনকি সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনসহ হাসপাতালের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর্থিক লেনদেনের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে হাসপাতালের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।এদের মধ্যে অন্যতম ডিজির পিয়ন সুমন।

অভিযোগকারীরা বলছেন, নিয়োগ পরীক্ষার আশেপাশের তারিখে সুমনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তদন্ত করলে অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যাবে।সুমনের নিজের একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে, এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তার সরাসরি রেফার করার প্রার্থীও রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত ভয়েস রেকর্ড এবং হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনের স্ত্রিনশট এসেছে এই প্রতিবেদকের কাছে।

এ বিষয়ে জানতে মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আ. রাজ্জাক সরকারের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অভিযোগকারীরা বলছেন, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের সব ডাক্তার, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী অবহিত আছেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কী পরিমাণ দুর্নীতি এবং কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। তারা পুরো লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া তদন্তের দাবি জানান।

কয়েকজন প্রার্থী রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের রাজস্ব খাতভুক্ত বিভিন্ন পদের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলকরণের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে, এই নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়ে শুনানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের রাজস্ব খাতভুক্ত ৯৮টি শূন্য পদে জনবল নিয়োগে গৃহীত নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়ে শুনানি ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৯৮টি শূন্য পদের নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়ে দুটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি অভিযোগে অভিযোগকারীদের নাম ও ঠিকানা উল্লেখ নেই। অন্য একটি অভিযোগে অভিযোগকারীদের নাম ও যোগাযোগের নম্বর উল্লেখ আছে। অভিযোগ দুটির বিষয়ে আগামী মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুর ২টায় সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে (ষষ্ঠ তলা) শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। অভিযোগের সমর্থনে প্রয়োজনীয় স্বাক্ষ্যপ্রমাণ ও রেকর্ডসহ উপস্থিত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীদের অনুরোধ করা হয়েছে।