রাইজিংবিডি স্পেশাল

প্রসাধন শিল্পের রক্ষাকবচেই সংকটের আশঙ্কা

গত বছর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘ওষুধ ও কসমেটিকস আইন’ প্রণয়ন করে সরকার। আইনটি বাস্তবায়নে জাতীয় সংসদে বিলও অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে, শুরু থেকেই ওষুধ ও প্রসাধন পণ্যকে একই আইনের আওতায় না এনে এ দুটি শিল্পকে পৃথক আইনের আওতায় রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন প্রসাধন ব্যবসায়ীরা। শিল্প রক্ষায় রক্ষাকবচ হিসেবে আইন করা হলেও এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে অস্থিরতার এ সময়ে নতুন সংকটের আশঙ্কা করছেন উৎপাদনকারীরা। 

তারা বলছেন, ওষুধ ও কসমেটিকস দুটি ভিন্ন ধরনের পণ্য হলেও আইনের খসড়ায় সব কসমেটিকসকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অধীনে আনার জন্য এর সংজ্ঞা, লাইসেন্স ও নিবন্ধন, মান নিয়ন্ত্রণ, মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এমন কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে, যা কার্যকর হলে এই শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। 

ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, আইনের খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধন না হলে এ খাতে ব্যবসা ও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভোক্তাদের ওপরও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কসমেটিকস খাতের উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী সংগঠন প্রস্তাবিত আইন সংশোধনে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ও আইনের খসড়ায় পরিবর্তন চেয়েছিল এক বছর আগে। তবে, এখনো বিষয়টির সমাধান হয়নি।

সংকট সৃষ্টি করতে পারে বিদম্যান আইন ড্রাগস অ্যাক্ট, ১৯৪০ এবং ড্রাগস (কন্ট্রোল) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ একীভূত করে অন্যান্য দেশের ওষুধ আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করে বাংলায় যুগোপযোগী ‘ওষুধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। 

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইন প্রণয়নের পর একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর দেশে ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধ; অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে জরিমানা; লাইসেন্স ব্যতীত কসমেটিকস উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি-রপ্তানিতে জেল-জরিমানার বিধান রেখে ঔষধ ও কসমেটিকস বিল-২০২৩ পাস করা হয়। 

অভিযোগ রয়েছে, সংসদে উত্থাপনের আগ পর্যন্ত কোনো পর্যায়েই কসমেটিকস শিল্পের অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়নি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের পর কসমেটিকস খাতের অংশীদাররা এ সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন। এর পর গত বছর সংসদীয় কমিটির কাছে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের লিখিত মতামত জমা দেয়।

আইনে বলা হয়েছে, ওষুধ এবং কসমেটিকসের উৎপাদন ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে  ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। কসমেটিকস অ্যাসোসিয়েশন সংসদীয় কমিটিকে এ বিষয়ে তাদের মতামতে বলেছে, দেশে লাখ লাখ দোকানে কসমেটিকস পণ্য বিক্রি হয়। এসব দোকানকে লাইসেন্সের আওতায় আনা হলে ব্যবসায় প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। ফলে, খসড়া থেকে বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে বরং কসমেটিকস আমদানিকারকদের লাইসেন্সের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে অ্যাসোসিয়েশন। কেননা, বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ কসমেটিকস আমদানি হয়, যার মধ্যে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর পণ্যও রয়েছে।

আইন কার্যকরের ছয় মাসের মধ্যে লাইসেন্স ও নিবন্ধনের জন্য আবেদনের কথা বলা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন এ আবেদনের সময়সীমা ছয় মাসের পরিবর্তে ১৮ মাস করার সুপারিশ করেছে। কেননা, বিপুল পরিমাণ পণ্য বাজারে আছে এবং এসব পণ্যে বিএসটিআইর নিবন্ধন লোগো রয়েছে। ফলে, ছয় মাসের মধ্যে আবেদনের বাধ্যবাধকতা থাকলে কসমেটিকস শিল্প অচলাবস্থার হুমকিতে পড়বে।

আইনে সব ধরনের কসমেটিকসকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে। যেখানে ঔষধ নীতি, ২০১৬ অনুযায়ী, যেসব প্রসাধনী-জাতীয় পণ্য শারীরিক কোনো কার্যক্রমের পরিবর্তন করে থাকে এবং শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তন করে বলে দাবিকৃত, সেসব ওষুধ-সংশ্লিষ্ট প্রসাধন সামগ্রী ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণভুক্ত করা হবে। উদ্যোক্তাদের সুপারিশ হলো, সংজ্ঞা নিয়ে যেন ডিজিডিএ, বিএসটিআই এবং অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো দ্বৈততা বা মতানৈক্য তৈরি না হয় এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্বৈত রেগুলেটরের কাছে নিবন্ধন বা অনুমতির জন্য যেতে না  হয়। কসমেটিকসের সংজ্ঞা ঔষধ নীতি অনুযায়ী পরিবর্তন করা যৌক্তিক বলে অ্যাসোসিয়েশন সংসদীয় কমিটিকে  বলেছে।

আইনের খসড়ায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কসমেটিকস পণ্যের মান প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোন কোন মানদণ্ড বিবেচনা করবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। কসমেটিকস শিল্পের উদ্যোক্তারা প্রচলিত বাংলাদেশ মান, ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড, আসিয়ান, আন্তর্জাতিক বা অন্যান্য উন্নত দেশের মানকে কসমেটিকস পণ্যের মানদণ্ড বিবেচনা করার সুপারিশ করেছেন। মান প্রণয়নের ক্ষেত্রে রেগুলেটরদের মধ্যে যাতে দ্বৈততা না থাকে, সেজন্য এ সুপারিশ করা হয়েছে।

উদ্যোক্তাদের দাবি, বিশ্বের কোনো কসমেটিকস-সংক্রান্ত আইন বা বিধিমালায় মূল্য নির্ধারণের নজির নেই। তাই, প্রস্তাবিত আইন থেকে মূল্য নির্ধারণের অংশটি বাদ দিতে হবে। বিজ্ঞাপনের বিষয়ে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ বা অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম রাখলে জটিলতার সৃষ্টি হবে। খসড়া আইনে লাইসেন্স ও নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে বলা হয়েছে। কসমেটিকস খাতের উদ্যোক্তারা মনে করেন, এটি ফৌজদারি আইনশাস্ত্রের মূলধারার বিপরীত। তারা এটিকে দেওয়ানি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার সুপারিশ করেছেন।

সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, কসমেটিকস ও কসমেটিকস-সংক্রান্ত বিষয় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন, ২০১৮; পণ্য মোড়কজাত বিধিমালা, ২০২১ এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন প্রবিধানমালা, ২০২২ থেকে বাদ না দিলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং বিএসটিআইর দ্বৈত আইনের সম্মুখীন হয়ে এই শিল্প জটিলতা ও হুমকির মুখে পড়বে। 

২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এ শিল্পের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের কথা উল্লেখ করে মতামত জানায়। 

সংস্থাটি বলে, কসমেটিকস পণ্যের মান প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসটিআইর অধীনে থাকা আবশ্যক। গত বছরের ৫ এপ্রিল শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির কাছে দেওয়া এক চিঠিতে প্রস্তাবিত আইন থেকে কসমেটিকস-সংক্রান্ত ধারা-উপধারা বাদ দিয়ে সংশোধনী প্রস্তাব আনার অনুরোধ জানান। মেট্রোপলিটান চেম্বার ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ সংসদীয় কমিটির সভাপতি বরাবর পাঠানো মতামতে জানায়, কসমেটিকসকে ঔষধ আইনের মধ্যে না রেখে আলাদা আইন বা বিধিমালা দ্বারা পরিচালনা করা সমীচীন হবে। 

এর আগে গত বছরের ২ মার্চ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন এফআইসিসিআই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ঔষধ আইন থেকে কসমেটিকসকে বাদ দেওয়ার দাবি জানায়।

চ্যালেঞ্জে বৈধ ব্যবসায়ীরা কসমেটিকসের বাজার ছেয়ে গেছে নকল, ভেজাল ও কাস্টমস ফাঁকি দিয়ে আসা পণ্যে। এদের কারণে যারা বৈধ পথে আমদানি করছেন এবং বিশেষ করে, যারা উৎপাদন করছেন, তারা চ্য্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন।  

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, সৌন্দর্যপণ্যের এ দুই ধরনের বাজারই বড় হলেও কালার কসমেটিকসে দেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কালার কসমেটিকসের আওতায় পড়ে মেকআপ ও মেকওভারের জন্য প্রয়োজনীয় সৌন্দর্যপণ্য। এ তালিকায় আছে ফাউন্ডেশন, কনসিলার, ফেসপাউডার, লিপস্টিক, মাসকারা, আইলাইনার, ব্লাশন ইত্যাদি। এসব পণ্যের প্রায় পুরোটা আমদানিনির্ভর। এর বড় অংশই নকল। 

প্রসাধন পণ্যের বাজার নিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) একটি গবেষণা বলছে, এসব পণ্যের বাজার প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে আছে কালার কসমেটিকস ও সাধারণ ত্বকচর্চার সঙ্গে মেডিকেটেড ত্বকচর্চার পণ্য। 

লাইট ক্যাসেল পার্ট️নারস এবং অ্যালাইড মার্কে️ট রিসার্চে️র মতো গবেষণা সংস্থাগুলোর ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের স্কিন কেয়ার বা পারসোনাল কেয়ার শিল্পের আনুমানিক বাজারের আকার ২০২০ সালে ছিল ১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২৭ সালের মধ্যে এর আকার ২ দশমিক ১২ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে আশা করছেন তারা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্য️ন্ত ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হারে এই শিল্প বৃদ্ধি পাবে।

দেশের ছয় থেকে সাতটি স্থানীয় কোম্পানি কয়েক দশক ধরে প্রসাধন পণ্যের ব্যবসা করছে। এর মধ্যে আছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ, কোহিনূর কেমিক্যালস, কেয়া কসমেটিকস, অ্যারোমেটিক কসমেটিকসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি এ বাজারে ত্বকচর্চা পণ্যের সঙ্গে কালার কসমেটিকসেও বড় বিনিয়োগ করেছে রিমার্ক এইচবি লিমিটেড। তবে, নকল ও ভেজাল পণ্য এবং চোরাইভাবে বিদেশ থেকে আনা পণ্য সকল কোম্পানির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এদিকে, সম্প্রতি নকল প্রসাধনী উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভোক্তা অধিকার এক ধরনের মানবাধিকার, যা কিছু স্বার্থান্বেষী ও অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে ও যথাযথ তদারকির অভাবে বিঘ্ন হতে পারে। নিরাপদ পণ্য বা সেবা নিশ্চিত করার জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের একাধিক সংস্থা সম্পৃক্ত হলে বৃহৎ পরিসরে ইতিবাচক ফল পাওয়া সম্ভব। 

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশীয় পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের শুল্ক হ্রাস, বিদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি, অবৈধ পথে বাজারে আসা পণ্য ঠেকানো, নকল পণ্য রোধ ইত্যাদি বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশে কসমেটিকস শিল্প খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

রিমার্ক এইচবি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আম্বিয়া বলেছেন, নকল প্রসাধনী উৎপাদন ও বিক্রি করা একদিকে যেমন ক্রেতার সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা; অন্যদিকে এসব ব্যবহারের ফলে চর্মরোগ, স্কিন ক্যানসার, কিডনি রোগসহ বন্ধ্যাত্বের মতো নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই, নকল প্রসাধনী উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ উৎপাদন বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা জরুরি। কারণ, প্রসাধনীর বাজার অনেক সম্ভাবনাময়। দেশে গুণগত মানের পণ্য উৎপাদন করতে পারলে আমদানিনির্ভরতা কমবে। তাতে ডলার সাশ্রয় হবে, কর্মসংস্থানও বাড়বে। এছাড়া, বিদেশি প্রসাধনী নকল ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা হচ্ছে। তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে রাজস্ব আয়ও বাড়বে। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেছেন, দেশে ওষুধের চেয়ে প্রসাধনী ও পারসোনাল কেয়ার পণ্যের বাজার প্রায় দিগুণ। প্রসাধনী ও পারসোনাল কেয়ার পণ্যের ৩৫ শতাংশ দেশে তৈরি হয় এবং বাকি ৬৫ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সুতরাং এ খাত বিকাশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। 

তিনি বলেন, একটি সময়োপযোগী আইন একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে আমদানিনির্ভরতা থেকে স্বনির্ভর ও রপ্তানিসক্ষম শিল্পে রূপান্তর করতে পারে। কসমেটিকস আইনের মাধ্যমে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা যাতে তাদের উদ্ভাবিত ও উৎপাদিত পণ্য নিবন্ধন, উৎপাদন, বিক্রয় এবং রপ্তানি করতে অসুবিধার মধ্যে না পড়েন, সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। তা না হলে কসমেটিকস ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। ওষুধ থেকে কসমেটিকস আলাদা করে একটি আলাদা কসমেটিকস আইন প্রণয়নের যে দাবি ব্যবসায়ী নেতারা তুলেছেন, তা-ও বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু, এতে যাতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি না হয় এবং যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ওষুধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩ প্রণীত হতে যাছে, তা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।

এ খাতের বাণিজ্য সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স️ অ্যান্ড এক্সপোর্ট️ার্স️ বাংলাদেশের (এএসবিএমইবি) কার্যনির্বাহী সদস্য মনির হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, অনেক সম্ভাবনা ও দক্ষ জনশক্তি থাকার পরও কসমেটিকস রপ্তানি এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। তবে, ধীরে ধীরে কসমেটিকসের রপ্তানিবাজার বাড়ছে। মধ্যপ্রাচসহ বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশে উৎপাদিত কসমেটিকস। কিন্তু, অভ্যন্তরীণ বাজারের একটি বড় অংশ এখনো বহুজাতিক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। 

তিনি বলেন, স্পেনের ‘কান্ডার ওয়ার্ল্ড প্যানেল’ নামক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সেরা দশটি প্রসাধনীর নয়টি ছিল দেশে অবস্থিত বহুজাতিক কোম্পানি। তাই, কসমেটিকসের উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি-রপ্তানি, বিদেশি প্রসাধনী কোম্পানির আধিপত্য ও অন্যান্য অবস্থার সঙ্গে ড্রাগস অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ প্রবর্তনের আগের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করা যায়। কসমেটিকসের বর্তমান বাজারকে নকল ও ভেজালমুক্ত রাখতে, বিদেশ থেকে কসমেটিকস আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এবং দেশীয় কোম্পানিগুলোর বিকাশ ঘটিয়ে উন্নত মানের পণ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে প্রণীত ওষুধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩-এ কসমেটিকস সংক্রান্ত বিধিবিধান সংযোজন অত্যন্ত সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ বলে মনে করি। 

মনির হোসেন আরও বলেন, দেশের কোম্পানিগুলো এ খাতে ভালো করলেও এখনো বিশাল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে নকল ও ভেজাল পণ্য। এসব ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন ব্যবহারকারীরা। তাই, প্রশাসনের উচিত দেশে মানহীন নকল প্রসাধনীর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ ঠেকানো। পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদনকে নীতি সহায়তা দিয়ে মানসম্মত পণ্য ক্রেতাদের জন্য সুলভ করা জরুরি। 

তিনি বলেন, দেশে গ্লোবাল ব্র্যান্ডের উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি সহজলভ্য করা গেলে এবং সরাসরি কসমেটিক্স পণ্যের শুল্কহার বাড়ানো হলে দেশীয় উৎপাদন ও উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে।