করোনা মহামারির শুরুতে জরুরি সেবা ব্যতীত দেশের সকল অফিস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আতঙ্কে কাটছিল সবার সময়। বিপদে পড়েছিল সাধারণ মানুষজন। এ বিপদের মুহূর্তে নিজের সর্বস্ব দিয়ে কাজ করেছিল বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ছিল ‘ডাক্তার দেখাও’।
সেসময় ডাক্তার দেখাও অ্যাপের মাধ্যমে রোগীরা বিনামূল্যে ডাক্তার দেখাতে পারত। অনলাইনেই পেয়ে যেত প্রেসক্রিপশন। অ্যাপটি বেশি কাজে লেগেছিল প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের। যাদের অধিকাংশের কাগজপত্রে সমস্যা ছিল। সরাসরি ডাক্তার দেখাতে গেলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা ছিল।
এ ধরনের মানবসেবার জন্য ডাক্তার দেখাও উদ্যোগটি ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ জিতেছে। ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সম্প্রতি আয়োজিত শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে ‘বেস্ট ইনোভেটিভ আইডিয়া’ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় ‘ডাক্তার দেখাও’ অ্যাপ।
করোনাকালে যুব অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ‘ঢাকা ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২০’- এর অধীনে প্রথমবারের মতো এ পুরস্কারের আয়োজন করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। সহযোগিতায় ছিল ইসলামিক কো-অপারেশন ইয়ুথ ফোরাম (আইসিওয়াইএফ), ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
ডাক্তার দেখাও অ্যাপটির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দূরবীণ ল্যাব লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আদনান, মোস্তাফিজুর রহমান এবং মো তৌহিদুজ্জামান। ইতোমধ্যে গুগল প্লেস্টোর থেকে ৯০,০০০ বার অ্যাপটি ডাউনলোড হয়েছে। ব্যবহারকারী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী।
অ্যাপটির ফিচার সম্পর্কে সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘ব্যবহারকারীরা গুগল প্লেস্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করে সাইনআপ করে ডাক্তার দেখানোর সুবিধা নিতে পারবে। আমাদের অ্যাপে দুই ধরনের ডাক্তার আছে। জেনারেল ফিজিশিয়ান এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। অ্যাপ থেকে ডাক্তার পছন্দ করে সময় নির্বাচন করে বুকিং দিতে পারবে।’
নির্দিষ্ট সময়ে রোগীর অ্যাপে ভিডিও কল অপশন চালু হয়। তখন ডাক্তারকে রোগী নিজে কল দিয়ে সমস্যা জানাতে পারে। ছবি বা পূর্ববর্তী প্রেসক্রিপশনও আপলোড দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ডাক্তার রোগীর সঙ্গে কথা বলে প্রেসক্রিপশন লিখে দেয়। রোগী অ্যাপের মধ্যেই তার প্রেসক্রিপশন পেয়ে যায়।
করোনার শুরুর সময়ে ১ বছর বিনামূল্যে ডাক্তার দেখানোর সুবিধা ছিল। বর্তমানে ১০০ টাকা ফিতে যেকোনো রোগী অ্যাপের মাধ্যমে ডাক্তার দেখাতে পারছে। প্রতি বুকিংয়ে ডাক্তার রোগীর সঙ্গে ১০ মিনিট কথা বলে থাকে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা স্মার্টফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়, তাদের জন্য ফার্মেসি হাব চালু করেছে ডাক্তার দেখাও অ্যাপ। ফার্মেসিতে কর্মরত ব্যক্তিরা রোগীর জন্য রেজিস্ট্রেশন করে দিয়ে থাকে। সেসব ফার্মেসিতে বসেই রোগীরা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে পারে।
এ সম্পর্কে ডাক্তার দেখাও অ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো. তৌহিদুজ্জামান জানান, ‘আমরা এক গবেষণায় দেখেছি, দেশের ৫৫ শতাংশ মানুষ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের বাইরে কবিরাজ বা হাতুড়ে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে থাকে। ওষুধ সম্পর্কে এসব ব্যক্তির কম ধারণা থাকার কারণে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়ে থাকে। দেখা যায়, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করে থাকে। এসব ফার্মেসির বিক্রি বন্ধ না করে তাদেরকে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তাদের মাধ্যমে আমাদের অ্যাপে রোগী দেখলে তাদেরকে আমরা একটা কমিশন দিচ্ছি। এতে সেসব ব্যক্তির ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি রোগী দেখানোরও একটি ফি পেয়ে আসছে। রোগীরাও ডাক্তারের পরামর্শ পাচ্ছে।’
২০১৯ সালে ডাক্তার দেখাও অ্যাপটি তৈরির কাজ শুরু করেছিল দূরবীণ হেলথ টেক লিমিটেড। অ্যাপটি মোস্ট ভায়াবল প্রোডাক্ট তৈরি অবস্থায় সে বছর অংশ নিয়েছিল উইমেন ডেলিভারি কনফারেন্স- ২০১৯ প্রতিযোগিতায়। জিতেছিল টপ ফাইভ স্টার্টআপ শোকেসে।
ডাক্তার দেখাও অ্যাপের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে দূরবীণ হেলথ টেকের সিইও মোহাম্মদ আদনান জানান, ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ পুরস্কার আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। আমরা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। দেশের মানুষকে অনলাইনে ডাক্তার দেখানোর ক্ষেত্রে অভ্যস্ত করতে চাচ্ছি। দেশের সর্বস্তরের মানুষের জন্য যেন আমরা গুণগত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পারি সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।’