বছরের প্রথম চন্দ্রগ্রহণ চলছে আজ। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ ছিল, তবে বাংলাদেশের আকাশে চন্দ্রগ্রহণ দেখা না গেলেও যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে দেখা গেছে চন্দ্রগ্রহণ।
আজকের চাঁদের রঙ ছিল লাল, তাই এই চন্দ্রগ্রহণকে রেড মুন বা সুপার মুন নাম দেয়া হয়। চাঁদ যখন ভরা যৌবন পায়, অর্থাৎ পূর্ণিমার জোছনায় আমরা যখন চাঁদকে দেখি, তখন একেক পূর্ণিমায় একেক রঙয়ের দেখা যায় চাঁদকে। কেন এমনটা হয়, আর প্রাচীন কাল থেকে মানুষ যেসব অদ্ভুত কারণে প্রতি মাসে ফুল মুন অর্থাৎ পূর্ণিমার চাঁদের নামকরণ করেছে, তা জানবো চলুন।
* জানুয়ারি (উলফ মুন): জানুয়ারিতে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদকে বলা হয় উলফ মুন বা নেকড়ে চাঁদ। কয়েক শ বছর আগে ইংল্যান্ডের অ্যাংলো- স্যাক্সন ক্যালেন্ডার থেকে এই নাম এসেছে ধারণা করা হয়। এ সময়ের ভরা চাঁদকে ওল্ড মুন বা আইস মুনও বলা হয়।
* ফেব্রুয়ারি (স্লো মুন): ফেব্রুয়ারির শীতল পরিবেশে যে পূর্ণিমার চাঁদ দেখা যায় আকাশে, তাকে স্নো মুন বলে। তবে এ সময় খাদ্য শস্যের ঘাটতি দেখা দেয় বলে উত্তর আমেরিকার অনেক উপজাতি এ মাসের পূর্ণিমার চাঁদকে হাঙ্গার মুনও বলে। অনেক অঞ্চলে এ মাসের ভরা পূর্ণিমা স্টর্ম মুন বা চেস্ট মুন নামেও পরিচিত।
* মার্চ (ওর্ম মুন): শীতের শেষ দিকে মার্চে যে পূর্ণিমা দেখা যায়, তার নাম দেয়া হয়েছে ওর্ম মুন। কারণ এ সময় কেঁচো সহ কিছু পোকামাকড় মাটির নিচ থেকে বের হয়ে আসে। মার্চ মাসের পূর্ণিমাকে অনেক জায়গায় ক্রো মুন, ক্রাস্ট মুন, স্যাপ মুন, সুগার মুন বা চেস্ট মুন বলে। প্রাচীন ইংলিশ অ্যাংলো-স্যাক্সন ঐতিহ্য মতে, এ সময়ের পূর্ণিমার নাম ল্যানটেন মুন।
* এপ্রিল (পিংক মুন): এপ্রিলে আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে পিংক কালারের ফুল জন্মায় বলে এই সময়ের পূর্ণিমার চাঁদকে বলা হয় পিংক মুন। এছাড়া এ মাসের পুরো চাঁদকে অনেক এলাকায় স্প্রাউটিং গ্রাস মুন, ফিশ মুন, হেয়ার মুন বলা হয়। অ্যাংলো- স্যাক্সনরা এই মাসের পুরো চাঁদকে এগ মুন বলতো। একে পাশ্চাল মুনও বলা হয়।
* মে (ফ্লাওয়ার মুন): মে মাসে প্রচুর ফুল জন্মায় বলে এই মাসের পূর্ণিমার চাঁদকে বলা হয় ফ্লাওয়ার মুন। অ্যাংলো- স্যাক্সনরা এই মাসের পুরো চাঁদকে কর্ন প্লান্টিং মুন, মিল্ক মুন বলতো।
* জুন (স্ট্রবেরি মুন): জুন মাসে স্ট্রবেরি ফল পাকে বলে এই সময়ের পূর্ণিমার চাঁদকে স্ট্রবেরি মুন বলে। এছাড়া এ সময়ের পুরো চাঁদকে হট মুন, মিড মুন ও রোজ মুন নামেও ডাকা হয়।
* জুলাই (বাক মুন): জুলাই মাসে বাক অর্থাৎ হরিণের মাথায় নতুন শিং গজায় বলে এই মাসের পূর্ণিমার চাঁদের নাম দেয়া হয়েছে বাক মুন। অ্যাংলো- স্যাক্সনরা এ মাসের পূর্ণিমাকে থান্ডার মুন, ওরট মুন এবং হে মুন নাম দিয়েছে।
* আগস্ট (স্টারজিয়ন মুন): উত্তর আমেরিকার লেক গুলোতে আগস্ট মাসে মিঠা পানির বড় মাছ স্টারজিয়ন পাওয়া যায় বলে এ মাসের পূর্ণিমার চাঁদকে বলা হয় স্টারজিয়ন মুন। এছাড়া অ্যাংলো-স্যাক্সনরা এ মাসের পুরো চাঁদের নাম দিয়েছে গ্রিন কর্ন মুন, বার্লি মুন, ফ্রুট মুন ও গ্রেইন মুন।
* সেপ্টেম্বর / অক্টোবর (হারভেস্ট মুন): সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ণিমার চাঁদকে নাম দেয়া হয়েছে হারভেস্ট মুন। ওল্ড ফারমার্স অ্যালমানাকে সেপ্টেম্বরের পূর্ণিমার চাঁদকে হারভেস্ট মুন বলা হয়েছে। অ্যাংলো- স্যাক্সনরা এ মাসের পুরো চাঁদের নাম দিয়েছিল কর্ন মুন ও বার্লি মুন।
* অক্টোবর (হান্টারস মুন): উত্তর গোলার্ধের মানুষ অক্টোবরে শিকারে বের হয় বেশি । তাই এ মাসের পূর্ণ চাঁদকে হান্টারস মুন বলা হয়।
* নভেম্বর (বিভার মুন): নভেম্বরে উত্তর আমেরিকায় ইঁদুর জাতীয় প্রাণী বিভার দেখা যায় প্রচুর। তাই এ মাসের পূর্ণিমার চাঁদের নাম দেয়া হয়েছে বিভার মুন।
* ডিসেম্বর (কোল্ড মুন): ডিসেম্বরে শীত শুরু হয় বলে এই মাসের পূর্ণিমার চাঁদকে বলা হয় কোল্ড মুন।
চাঁদের আরো কয়েকটি নাম
* সুপার মুন: চাঁদ পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসার পর যে পূর্ণিমা দেখি আমরা, তাকে সুপার মুন বলে। এ সময় চাঁদের আলো ও আকার দুটোই তুলনামূলভাবে বেশি থাকে।
* ব্লাড মুন: পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়, তখন পূর্ণিমার চাঁদকে লাল দেখায় বলে একে ব্লাড মুন বলে। অনেক সময় আকাশে ধূলিকণা, ধোঁয়ার কারণে চাঁদকে লালচে দেখালেও তাকে ব্লাড মুন বলা হয়।
* ব্লু মুন: সাধারণত প্রতি আড়াই বছর পর পূর্ণিমার চাঁদকে নীলচে দেখায়। তখন তাকে ব্লু মুন বলা হয়। আকাশে ধোঁয়া বা বালিকণার কারণে ও বিশেষ এক ধরণের মেঘের কারণে পূর্ণিমার চাঁদকে যখন নীলচে দেখায়, তখন তাকে ব্লু বলে। এছাড়া কোনো অ্যাস্ট্রনমিকাল সিজনে চারটি পূর্ণিমা থাকলে, তাদের তৃতীয়টিকেও ব্লু মুন বলা হয়।
তথ্যসূত্র: টাইম অ্যান্ড ডেট