বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেসিসের ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড পেলো ৬৮ প্রকল্প

দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর আয়োজনে পঞ্চমবারের মতো দেওয়া হলো বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডস।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে বিজয়ী ৬৮ প্রকল্পের প্রতিনিধির হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। 

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্ভাবনীমূলক পণ্য ও সেবা প্রকল্পসমূহকে স্বীকৃতি দিতে এবারের আসরে মোট ৩৬টি ক্যাটাগরিতে ৬৮টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত সেরা প্রকল্পগুলো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অস্কার হিসেবে খ্যাত অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডস-এর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।

বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম এবং এফবিসিসিআই সভাপত মো. জসিম উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আজ যারা বিজয়ী হয়েছে তারা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আইসিটি অস্কার এপিকটা প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, হংকং, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে লড়াই করবে। বর্তমানে বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে আমাদের সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবা রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১৪০ কোটি ডলার। আমরা ২০২৫ সালের মধ্যে এটিকে ৫শ কোটি ডলারে উন্নীত করতে চাই আর অন্তত ৩০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই।’ 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য মূল চারটি উপাদান থাকবে । তার মধ্যে সরকার হবে স্মার্ট, সোসাইটি হবে স্মার্ট, সিটিজেন হবে স্মার্ট এবং আমাদের ইকোনমি হবে স্মার্ট। এই চারটি উপাদান নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমি আশা করি সেই যাত্রায় এখানে যারা কাজ করছেন সেই যাত্রায় অংশীদার হবেন।’  

সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্য করে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ‘ই-গভর্নেন্স প্রকল্পের কাজ যেসকল দেশিয় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান করে থাকে, তাদের যেন স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যে প্রতিষ্ঠান প্রকল্পে কাজ করছে সেখানে ঐ প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ থাকলে তাতে তাদের স্বীকৃতির পাশাপাশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়। অন্যদিকে এতে করে বিদেশেও একই ধরনের কাজ পাওয়া সহজ হয়।’  

পাশাপাশি দেশের ইন্ডাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রণয়নসহ এ সংক্রান্ত কার্যক্রমে বেসিসকে সম্পৃক্ত করার দাবিও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, ‘পুরস্কৃত সেরা প্রকল্পগুলোকে অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডস প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে আমরা তাদের গ্রুমিংয়ের ব্যবসথা করবো যাতে বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারও আমরা অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ড জিততে পারি।“  

উল্লেখ্য, বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডসের মাধ্যমে সারাদেশের উদ্ভাবনী ও সম্ভাবনাময় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবাগুলোকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাছাই করা হয় এবং তাদেরকে স্বীকৃতি ও উৎসাহ প্রদান করার লক্ষ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রথমে প্রায় ৫০০ প্রকল্প জমা পড়ে। সেখান থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ের পর তথ্যপ্রযুক্তির শিল্প, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি বিভিন্ন ইগভর্নেন্স ২৯৫টি প্রকল্প বিচারকদের সামনে উপস্থাপনের জন্য বাছাই করা হয়। টানা চারদিন ৮০ জন বিচারক এসব প্রকল্পের উপস্থাপনা দেখে জাজিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে ৬৮টি প্রকল্পকে পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করেন। উল্লেখ্য, এর মধ্যে ২১টি চ্যাম্পিয়ন, ২০টি উইনার ও ২৭টি ছিল মেরিট অ্যাওয়ার্ড। বিচারিক মানদণ্ড অনুযায়ী অন্ততপক্ষে ৭ নম্বর না পেলে চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড দেওয়া যায় না। ফলে অনেক সাব ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়নি।

বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডস ২০২২-এর আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেসিস অ্যাডভাইজরি স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান এম রাশিদুল হাসান। এছাড়া প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বেসিস প্রেসিডেন্টস অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ এইচ কাফি, উপ-প্রধান বিচারক ছিলেন শাহ্ ইমরাউল কায়ীশ ও যুগ্ম-আহবায়ক হিসেবে ছিলেন বেসিস অ্যাডভাইজরি স্থায়ী কমিটির সদস্য লিয়াকত হোসেন।