বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেফটি ডিভাইস: লাইন কাটলেই সংকেত পাবে স্টেশন মাস্টার

ট্রেন ভ্রমণ করতে সবারই ভালো লাগে। তাই তো, নিরাপদে ট্রেন ভ্রমণ করতে চান সবাই। কারণ ট্রেন যাত্রাকে অধিকাংশ মানুষ অন্য সব মাধ্যম থেকে বেশি নিরাপদ মনে করেন। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলোর পর স্বাভাবিকভাবেই ট্রেন ভ্রমণকারীদের মনে জন্মেছে নানা শঙ্কা। তবে এখন থেকে ট্রেন যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। রেলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে আব্দুল্লাহ আল কাফির সেফটি ডিভাইস।

অন্য সবার মতো ট্রেন ভ্রমণে আব্দুল্লাহ আল কাফির মনেও জন্মেছিলো ভয়-সংশয়। সম্প্রতি গাজিপুরে রেললাইন কেটে ফেলার পর ভয়াবহ দূর্ঘটনার ঘটনাটি তার মনে দাগ কাটে। তারপর থেকেই রেললাইন কিভাবে নিরাপদ রাখা যায়, সে চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকতেন আব্দুল্লাহ আল কাফি। দিনরাত গবেষণা ও চেষ্টার পর আব্দুল্লাহ আবিষ্কার করেন 'রেলওয়ে সেফটি ডিভাইস'।

পাবনা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের এই শিক্ষার্থীর দাবি— রেললাইন কেটে ফেলা হলে বা ভেঙ্গে গেলে তার এই যন্ত্রের সাহায্যে সঙ্গে সঙ্গে স্টেশন মাস্টারের রুমে বেজে উঠবে এলার্ম। একই সঙ্গে কল আসবে স্টেশন মাস্টারের মোবাইল ফোনে। মাত্র ২০ হাজার টাকা খরচ করে এই যন্ত্র স্থাপন করলে, এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের নিরাপত্তা দিবে এই ডিভাইসটি।

আব্দুল্লাহ আল কাফি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর জোয়ানপুর গ্রামের কৃষক মাহবুল আলম ও গৃহিনী পল্লব কান্তি সরদারের একমাত্র সন্তান। সে পাবনা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

তিনি জানান, সম্প্রতি গাজিপুরে রেললাইন কেটে ফেলায় ভয়াবহ দূর্ঘটনায় তার মনে দাগ কাটে। মূলত এরপর থেকেই রেললাইনকে নিরাপদ করতে প্রযুক্তি আবিস্কারের চিন্তা আসে তার মাথায়। এই চিন্তা থেকেই এই ডিভাইসটি তৈরি করা।

আব্দুল্লাহ আল কাফি  বলেন, 'ডিভাইসটি তৈরি করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছি আমি। এটার কাজ হলো স্বাভাবিক রেল লাইন কখনো যদি ফেটে যায় বা রেল আলাদা হয়ে যায় তাহলে এটা সয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত দিতে থাকবে। সেই সঙ্গে স্টেশন মাস্টারকে কল দিবে।

তিনি বলেন, রেলওয়ে সেফটি ডিভাইস'টি আমার তৈরি করতে ১০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। তবে এটা যদি পরিপূর্ণ ভাবে রেলের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করতে হয় তাহলে আরেকটু বড় করে স্থাপন করতে হবে‌। সেক্ষেত্রে এটার খরচ পড়বে ২০ হাজার টাকা।

সন্তানের এমন আবিস্কারে গর্বিত বাবা  মাহবুব আলম। তিনি বলেন, আমার  ছেলের আবিস্কার দেশের ও জনগণের কাজে লাগবে এটা ভাবতেই আমার অনেক খুশি লাগছে।

মাধনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার ও সদস্য (ইউপি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত শনিবার আবদুল্লাহ তার অবিস্কার নিয়ে বাড়িতে আসেন। পরদিন (রোববার) বিষয়টি এলাকাবাসী জানতে পেরে যন্ত্রটি দেখতে তার (আবদুল্লাহর) বাড়িতে ভিড় জমিয়েছে। রেলযাত্রাকে নিরাপদ করতে আবদুল্লাহর আবিষ্কারকৃত যন্ত্রটি সত্যিই কার্যকরি কি-না, তা পরীক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেওয়ান আকরামুল হক জানান, বিষয়টি তার জানা নেই।  আজই দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে ডিভাইসটি কতটা কার্যকর তা পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন।