কাবাডি, উপমহাদেশের জনপ্রিয় খেলা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও খেলেন কাবাডি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কাবাডিতে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ। শাহনাজ মালেকা, শারমিন সুলতানা রিমা ও হাফিজা আক্তাররা আজ বাংলাদেশের মহিলা কাবাডির বড় বিজ্ঞাপন।
বাংলাদেশে মহিলা কাবাডির পথচলা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। তখন কেবল ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ হতো। এরপর হাঁটিহাঁটি পা পা করে অনেক দূর এগিয়েছে মহিলা কাবাডি। এসেছে আন্তর্জাতিক পদক। বাংলাদেশের নারীরা দেশের পতাকা উড়িয়েছেন কাবাডি বিশ্বকাপেও।
বাংলাদেশের নারীরা আন্তর্জাতিক কাবাডিতে প্রথম অংশগ্রহণ করে ১৯৯৫ সালে। সেবার কলকাতা শহরের ৩০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৭ জাতির একটি আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। এরপর ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ নারী কাবাডি দল অংশ নেয় এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের হায়দরাবাদে। পরের বছর প্রথমবারের মতো সাউথ এশিয়ান গেমসে কাবাডি অন্তর্ভূক্ত হয় এবং বাংলাদেশ নারী কাবাডি দল অংশ নেয়। ২০১০ সালে চীনের গুয়াংজুতে অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়ান গেমসেও অংশ নেয় বাংলাদেশ নারী কাবাডি দল। সেবার অর্জন করে ব্রোঞ্জ পদক। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নারী কাবাডি দলের সর্বোচ্চ অর্জন। একই বছর ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া সাউথ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) বাংলাদেশ নারী কাবাডি দল রৌপ্য পদক জয় করে।
২০১২ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেয় দেশের নারী কাবাডি দল। এরপর ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ান ইনচনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জয় করে। ২০১৬ সালে ভারতের গৌহাটি ও শিলংয়ে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে রৌপ্যপদক অর্জন করে দেশের নারী কাবাডি দল। সবশেষ ২০১৯ সালেও তাদের হাত ধরে নেপালে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে এসেছে ব্রোঞ্জ পদক।
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে নারী কাবাডিকে এগিয়ে নিতে বর্তমান কমিটি স্কুল পর্যায়ে কাবাডি প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে। হচ্ছে জেলা পর্যায়ে নারী কাবাডি। জেলা পর্যায়েও বাড়ছে কাবাডিতে নারীর অংশগ্রহণ। আর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) করছে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি। সব মিলিয়ে দেশে নারী কাবাডির পতাকাবহন করছেন ৫ শতাধিক নারী খেলোয়াড়। এর মধ্যে ৩০ জন নিয়মিত খেলছেন জাতীয় দলে।
আক্ষেপের জায়গা হলো, জাতীয় খেলা হলেও আর্থিক তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই কাবাডিতে। আগে তিনটি সার্ভিসেস দল প্রতিভাবান নারী কাবাডি খেলোয়াড়দের ভাতা ও চাকরি দিলেও গেল বছর থেকে বিজেএমসি সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন কেবল আনসার ও পুলিশের নারী কাবাডি দল রয়েছে।
জাতীয় নারী কাবাডি দল ও বাংলাদেশ পুলিশের তারকা খেলোয়াড় শারমিন সুলতানা রিমা জানান, কাবাডিতে তেমন ভালো স্পন্সর পাওয়া যায় না। খুব বেশি আর্থিক সুযোগ-সুবিধাও নেই। যেমন ক্রিকেট ও ফুটবলে আছে। ডিফেন্সের দলের হয়ে যারা খেলে তারা নিয়মিত ভাতা ও বেতন পায়। এর বাইরে যারা আছেন তারা তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না। আর্থিকসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে কাবাডিতে নারীর অংশগ্রহণ আরো বাড়বে বলে মনে করেন শারমিন।
আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের বর্তমান কমিটি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীসহ সার্ভিসেস দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে নারী কাবাডি দল গঠন করে দেশের জাতীয় খেলাটিকে এগিয়ে নিতে। হয়তো শিগগিরই অন্যান্য সার্ভিসেস দলগুলোর নারী কাবাডি দল হবে। আরো অনেক নারী খেলোয়াড় তাদের প্রতিভা বিকাশ ও সামর্থ প্রমাণের সুযোগ পাবেন। হবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। বাড়বে ক্রীড়াঙ্গনে নারীর অংশগ্রহণ।