বিকেএসপিতে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু যখন গণমাধ্যমের জন্য ভিডিও বার্তা দিচ্ছিলেন তখন ইমরুল কায়েস প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাট করছিলেন। সঙ্গী জাতীয় দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়কের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে সবচেয়ে বেশি রান ইমরুলের। ৬২ ম্যাচে ১৯২৭ যা বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ।
তবে এবার আরেকটি সুযোগ পেলেন না ইমরুল। আসন্ন শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রাথমিক দলে থাকলেও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান চুড়ান্ত দলে সুযোগ পাননি। দলে জায়গা হারানোর দিনে ইমরুল ৩২ বলে ৩৩ রান করেন, ১ চার ও ২ ছক্কায়। তাতেও মন ভরেনি কারো!
দলে এখন তারুণের জয়গান, নিয়মিতদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখা হচ্ছে, সেখানে কী ইমরুলের সুযোগ আসলেও আর আছে? তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার কী শেষ? ইমরুল কী তাহলে উপেক্ষার শিকার? একটি পরিসংখ্যান অবশ্য তার হয়েই কথা বলছে। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ৩৪৯ রান করেন কিন্তু পরের দুই ম্যাচ খারাপ খেলতেই তাকে আবার বাতিলের খাতায় ফেলে দেন নির্বাচকরা। এরপর তার পারফরম্যান্সও গড়পড়তা। ২০১৯ বিশ্বকাপ দলেও জায়গা হলো না। আর এখন দলে ফেরার সম্ভাবনা কমতে কমতে প্রদীপ একেবারে নিভু নিভু!
৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের জার্সিতে ইমরুল সবশেষ খেলেছেন ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। কিন্তু ব্যাট হাতে নিস্প্রভ থাকায় পরের সিরিজে জায়গা হারান। এর পর টিম কম্বিনেশনের কারণে আর দলে জায়গাই হয়নি।
এবার প্রায় তিন বছর পর এবার জাতীয় দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে সুযোগ পেয়েছিলেন। সুযোগ পেয়েছে শুরুতেই বলেছিলেন, ‘আমি বলবো যে এটা আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ আবার নতুন করে চিন্তা ভাবনা করা। আমি নিজেকে ওভাবে প্রস্তুত করতে পারবো। আমার যে ঘাটতিগুলো ছিল এখন আমি এগুলো নিয়ে কাজ করতে পারবো। আমার মনে হয় যে এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ আবারও জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। ‘
কিন্তু ইমরুল দলে জায়গা পাকা করতে পারেননি। তার দলে ঢোকা ও বাদ পড়া নিয়ে কোনো ব্যাখাও নেই নির্বাচকদের। জানা গিয়েছিল, তামিম ইকবালের ইচ্ছাতে তাকে দলে আনা হয়েছিল। তার ব্যাটিং পজিশন হবে মিডল অর্ডারে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ধোপে টেকেনি। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু রাইজিংবিডিকে মুঠোফোনে বলেন, ‘টিম ম্যানেজমেন্টের কোনো পরিকল্পনাতেই ইমরুল ছিল না। ওকে দলে নেওয়ার তাই কোনো কারণ নেই।’
তামিমের সঙ্গী হিসেবে দলে আছেন লিটন, সৌম্য, নাঈম, শান্তরা। পাইপলাইনে আছেন ইমন, তামিমদের মতো প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান। তাদের টপকে ইমরুল সুযোগ পাবেন কিনা তা বিরাট প্রশ্ন। নতুনের আগমনে ইমরুলের সুযোগ দেখেন না বিসিবির সাবেক কোচ ও বিকেএসপির ক্রিকেট পরামর্শক নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ‘খানিকটা তাই। দুই এক বছর আগে যতটা সহজ ছিল এখন ততটা সহজ নয়। কারণ প্রতিশ্রুতিশীল অনেক খেলোয়াড় এখন চলে এসেছে।’
আরেকটি সমস্যার কথাও যোগ করেন অভিজ্ঞ এ কোচ, ‘ইমরুলের যে আসল জায়গা সেই জায়গা সে হারিয়ে ফেলেছে। এখন মিডল অর্ডার বা লোয়ার মিডল অর্ডার নিয়ে ভাবতে হবে। আবার ওখানে যারা আছে তাদের সঙ্গে খেলতে হলে ওকে অনেক ভালো করতে হবে। নির্বাচকরা ওকে এবার বিবেচনায় আনেনি। এটা বার্তা দেয় যে, ওর ফিরে আসা অনেক কঠিন হবে। অদূর ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে হয়তো ভাববেও না নির্বাচকরা।’
ইমরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এখন কথা বলে রাজি হননি। তবে এবার ফিরে এসে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছিলেন এভাবে, ‘জাতীয় দলের বাইরে থাকলে যে জিনিসটা হয় অনেক হতাশ থাকতে হয়। জাতীয় দলের খেলা যখন দেখা হয় তখন ওই জায়গাটাকে অনেক মিস করা হয়। তারপরও আমি বলবো যে কিছু কিছু সময় বাদ পড়াটা খেলোয়াড়ের জন্য ভালো, অনেক কিছু শেখা যায় ওখান থেকে, নিজের ভুলগুলো নিয়ে, কি কি ভুল হয়েছে।’
ইমরুল হয়তো নতুন করে ভাববেন। নতুন করে ভুলগুলো শুধরাবেন। কিন্তু আউট অব বক্স কিছু না হলে তার লাল-সবুজের জার্সিতে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।