খেলাধুলা

বাংলাদেশই ফেবারিট, কিন্তু শ্রীলঙ্কাও শক্তিমান

বাঘের ডেরায় সিরিজ শুরু হচ্ছে।

বাংলার বাঘ আর লঙ্কান সিংহের তিন ম্যাচ ওডিআই সিরিজে জয় ছাড়া বিকল্প নেই বাংলাদেশের। নিজেদের শক্তিমত্তার ফরম‌্যাট, পুরো শক্তির দল, নিজ মাঠ, কিছুটা খর্ব শক্তির প্রতিপক্ষ, পিঠাপিঠি রাঙ্কিং—এসব অনুষঙ্গ বিবেচনায় নিলে বলা যায়, সিরিজ শুরুর আগে ফেবারিট কিন্তু বাংলাদেশই। এটুকু পড়েই যারা ভাবছেন, এই সিরিজ বাংলাদেশ খুব সহজেই জিতবে, তাদের দুই বছর পেছনে ফিরিয়ে নিতে যেতে চাই। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে দুই দলের সর্বশেষ ওয়ানডে লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার কাছে ০-৩ ব‌্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি।

সেই সিরিজের সঙ্গে এবার আরেকটি মিল আছে। মাশরাফির অনুপস্থিতিতে সেই দফায়ও অধিনায়ক ছিলেন তামিম ইকবাল। এবারও অধিনায়ক তিনিই। বড় একটা পার্থক্য হলো দুই বছর আগে তামিম ছিলেন স্টপগ্যাপ অধিনায়ক। আর এখন তিনি পুরোদুস্তর লম্বা পরিকল্পনায় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক।

তামিম নিজের ছন্দে তুখোড় ফর্মে এখন। ওয়ানডেতে লিটন দাস সব সময় কার্যকরী। আশা করছি, এই সিরিজ দিয়ে লিটন ফর্মে ফিরবেন। সাকিব ২০১৯ বিশ্বকাপে ৩ নম্বর পজিশনে দারুণ ম্যাচজয়ী কয়েকটি ইনিংস খেলেছিলেন। বিশ্বকাপের পর ওয়ানডেতে সাকিব আবার তার প্রিয় ওয়ানডাউন পজিশন ফিরে পাচ্ছেন এই সিরিজে। বিশ্বকাপের সেই ফর্ম যদি সাকিব এই সিরিজে ফিরিয়ে আনতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত জানুন, সিরিজটা ৩-০ হচ্ছে, হ্যাঁ বাংলাদেশের পক্ষেই।

মুশফিক মিডল অর্ডারে দলের ব্যাটিংয়ের নিউক্লিয়াস। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে প্রস্তুতি ম্যাচে অনবদ্য ছন্দে দেখা গেল। দলের ছয় নম্বর পজিশনে বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান আছেন লড়াইয়ে। সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও আফিফ হোসেন। আমি ছয় নম্বর পজিশনের জন্য আফিফ হোসেন বা মোসাদ্দেক হোসেনের একজনকে চাইব।

সফরকারী দলের ব্যাটিং কিছুটা আনকোরা। তবে দলটি উন্নত মানের স্পিন বোলিংসমৃদ্ধ, তাই বাংলাদেশ অবশ্যই নিদেনপক্ষে তিন পেসার নিয়ে খেলা উচিত। সে ক্ষেত্রে  মেহেদি মিরাজ ৭ নম্বর স্পটে এবং পেস বোলিং অলরাউন্ডার কোটায় সাইফুদ্দিনকে ৮ নম্বরে খেলানো যায়। দলে সাকিব ফিরে আসায় এখন একাদশে একজন বাড়তি স্পিনার বা পেসার খেলানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। উইকেটের মেজাজ দেখে শেখ মেহেদী বা শরিফুলকে বেছে নিতে হবে। আমি বাড়তি ব্যাটসম্যান নিয়ে রক্ষণাত্মক খেলা পক্ষে নই।

অতিথি দলে অনেক অপেক্ষাকৃত নবীন খেলোয়াড়ের সমাহার হলেও এই দলটিতে পাঁচজন উঁচু মানের স্পিনার আছেন। বাংলাদেশ স্পিনসহায়ক উইকেট তৈরি করলে নিজেদের ফাঁদে নিজেরাই ধরা পড়তে পারে।

পেস বোলিংয়ের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা অপেক্ষাকৃত একটু দুর্বল। আমি মনে করি, এই সিরিজে একটু পেসবান্ধব উইকেট বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ে অধিনায়ক কুশল পেরেরা , কুশল মেন্ডিস, পাথুন নিশাঙ্কা, নিরোশান ডিকভেলা ,ইসুরু উদানা মূল ভরসা। বাঁহাতি ওপেনার কুশল পেরেরাকে এই সিরিজে টিপি (টার্গেট প্লেয়ার) হিসেবে হিট লিস্টে রাখতে হবে। শ্রীলঙ্কার এই মারকুটে অধিনায়ককে শুরুতে ফেরাতে না পারলে কিন্তু বিপদের শুরু। ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে দারুণ পারঙ্গম কুশল পেরেরা। ১০১ ওয়ানডে ম্যাচ খেলা এই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি আছে পাঁচটি। একটু মনে করিয়ে দিই, ওয়ানডেতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি কিন্তু পেরেরা পেয়েছিলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের মাটিতেই ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিরপুরের শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। শুরুতে কুশল পেরেরাকে ফেরাতে পারলে ধরে নেওয়া যায়, ম্যাচের অর্ধেক ওখানেই বাংলাদেশের জয়।

এই সিরিজে দুই দলের অধিনায়কই ওপেনার। দুজনেই বাঁহাতি। দুজনেই মারমুখী ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত। দলীয় লড়াইয়ের সঙ্গে তাহলে ব্যক্তিগত একটা হিসেব চুকানোর সুযোগ পাচ্ছেন তামিম ইকবাল ও কুশল পেরেরা। সিরিজ শুরুর ট্রফিতে হাত রেখে দুজনের মুখেই হাসি। কিন্তু সিরিজ শেষে এই হাসি থাকবে একজনের।