রাত ৯টা ৫১ মিনিট। বৃষ্টিতে তৃতীয়বার থামলো ম্যাচ, তখন ৩৮ ওভারে শ্রীলঙ্কার স্কোর ৯ উইকেটে ১৪১ রান। আরও আগেই জয়ের সুবাস পাওয়া বাংলাদেশকে একটু থামতে হলো। আবার যখন খেলা শুরু হলো, তখন আম্পায়ার ঘোষণা দিলেন আর ২ ওভার খেলা হবে, যেখানে শ্রীলঙ্কাকে করতে হবে ১১৯ রান! ১৫ রানের বেশি করতে পারলো না তারা। বৃষ্টি আইনে শ্রীলঙ্কাকে ১০৩ রানে হারিয়ে তাদের বিপক্ষে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।
মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরিতে দ্বিতীয় ওয়ানডে তিনবার বন্ধ হয়। বাংলাদেশের ইনিংসে প্রথম দফায় ২৬ মিনিট, দ্বিতীয় দফায় ৩৮ মিনিট খেলা হয়নি। শ্রীলঙ্কার ইনিংসে বন্ধ ৬৪ মিনিট! সব মিলিয়ে ১০৯ মিনিট গেলো বৃষ্টির পেটে। তাতে ম্যাচের মজাটাই যেন শেষ। জয়ের জন্য যখন স্বাগতিকদের এক উইকেট দরকার, তখন শেষবার নামে বৃষ্টি। ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসে ৪০ ওভারে, শ্রীলঙ্কার নতুন লক্ষ্য ২৪৫। তাদের ইনিংস শেষ হয় ৯ উইকেটে ১৪১ রানে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে কোনও ফরম্যাটে এটাই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়ের ঘটনা। এর আগে আটটি ওয়ানডে সিরিজের দুইটি ড্র করলেও জয়ের স্বাদ পায়নি কখনো। মিরপুরে বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। এ জয়ে বিশ্বকাপ সুপার লিগে আরও ১০ পয়েন্ট পেলো বাংলাদেশ। তাতে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে তামিমের দল উঠে গেলো টেবিলের শীর্ষে। পেছনে ফেলেছে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়াকে।
দুই ম্যাচে প্রায় একই চিত্রনাট্য। বাংলাদেশ জয় পেল সহজে। ম্যাচের নায়কও এক, বোলিং পারফরম্যান্স আঁটসাঁট এবং ব্যাটিং পারফরম্যান্স প্রশ্নবিদ্ধ। মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরির খেলায় বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মুশফিকুর রহিম। ডানহাতি ব্যাটসম্যান আরেকবার দলের ত্রাতা হয়ে লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছেন।
টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ১৫ রানে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে মুশফিকের একার ১২৫ রানে বাংলাদেশ পায় লড়াকু পুঁজি। সেই রান তাড়া করতে পারেনি অতিথিরা। ফল ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে হোয়াইটওয়াশ করার দোরগোড়ায় বাংলাদেশ।
মুশফিকের আজকের লড়াইটা ছিল একার। আগের ম্যাচে তামিম ও মাহমুদউল্লাহ ফিফটি পেলেও আজ হাসেনি তাদের ব্যাট। তামিম ১৩ এবং মাহমুদউল্লাহ ৪১ রান করেন। মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের জুটিতে আজ অবশ্য প্রতিরোধ পায় বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে আসে ১০৮ বলে ৮৭ রান।
এরপর মুশফিকের আবার একার লড়াই। ৭০ বলে মাত্র ১ বাউন্ডারিতে চলে আসে হাফ সেঞ্চুরি। পরের ৪৪ বলে নামের পাশে যুক্ত হয় আরও পঞ্চাশ রান। তাতে মুশফিক পেয়ে যান সেঞ্চুরি। দৃষ্টিনন্দন একেকটি শট। ব্যাট-প্যাডের দারুণ রসায়ন এবং নিবিড় মনোযোগে মুশফিক অনন্য, অসাধারণ। মুশফিক মানেই নির্ভরতার প্রতীক। কৃতিত্বের সেই স্বাক্ষর রাখলেন ক্যারিয়ারের অষ্টম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে।
ইনিংসের শুরুতে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন দলের প্রয়োজনে। শেষটায় আবার দলের প্রয়োজনে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসলেন। তাতে বাংলাদেশ পায় লড়াকু পুঁজি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক আউট হন কভারে ক্যাচ দিয়ে। ধ্রুপদী ১২৫ রানের ইনিংসটি খেলতে ১২৭ বল খেলে মারেন ১০ বাউন্ডারি।
প্রবল সমালোচনার মধ্যেও সুযোগ পান লিটন দাশ, কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেননি। ৪২ বলে ২৫ রানে শেষ তার ইনিংস। সাকিবের ক্যারিয়ারের ১১তম ডাকের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যা তার তৃতীয়। মোহাম্মদ মিথুনের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটও হাসেনি। ১০ রানে শেষ তার ইনিংস। লিটন, মোসাদ্দেক ও মাহমুদউল্লাহর উইকেট নিয়ে চায়নাম্যান লাকশান সান্দাকান দ্যুতি ছড়ান।
ইনিংসের মাঝে লঙ্কান শিবিরে আঘাত করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কুশল মেন্ডিস (১৫), দাশুন শানাকা (১১) ও ভানিন্দু হাসারাঙ্গার (৬) উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের পথ সুগম করে দেন। সঙ্গে সাকিব ও মোস্তাফিজুর রহমানের ধারাবাহিক আক্রমণে টপাটপ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। বোলিংয়ে তারা লড়াই করলেও ব্যাটিংয়ে একেবারে ছন্নছড়া। তাতে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে যায় সহজেই।
বাংলাদেশের বোলিং ছিল নিয়ন্ত্রিত, ধারাবাহিক। ৩ টি করে উইকেট নিয়ে মিরাজ ও মোস্তাফিজ ছিলেন সেরা। সাকিব ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার তালিকায় মাশরাফিকে ছুঁয়েছেন। দুজনের উইকেট ২৬৯টি। বোলিং ইউনিটের আসাধারণ পারফরম্যান্সে আজ কোনও অতিরিক্ত রান আসেনি। যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিরল।
প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের নায়ক মুশফিক। সঙ্গে মোস্ট ভ্যালুয়েবল খেলোয়াড় মিরাজ। সিরিজ সেরার পুরস্কার দিতে দুজনের মধ্যে একজনকে বাছাই করতে যে নির্বাচকদের মধুর সমস্যায় পড়তে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।