সিরিজ আগেই নিশ্চিত ছিল। শেষ ম্যাচে নিজেদের ভুলগুলি শুধরে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু দুই ম্যাচ জিতে তৃপ্তির ঢেকুড় তোলা বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে স্রেফ উড়ে গেল। প্রথমে ব্যাট হাতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুশল পেরেরা সেঞ্চুরি করলেন। এরপর বল হাতে পেসার দুষমন্ত চামিরার ৫ উইকেটে তছনছ বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই-বাংলায় শ্রীলঙ্কার করা ৬ উইকেটে ২৮৬ রানের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ করতে পারল ১৮৯ রানে। ৯৭ রানের বিশাল পরাজয়ে বিশ্বকাপ সুপার লিগের ১০ পয়েন্ট হাতছাড়া করলো বাংলাদেশ।
এর আগে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ২০ পয়েন্ট পেয়েছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা প্রথমবার এ প্রতিযোগিতায় পয়েন্ট পেল। সব মিলিয়ে তাদের পয়েন্ট ৮। বাংলাদেশ ৫০ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে শীর্ষে। কথায় আছে, শেষ ভালো যার সব ভালো তার। শ্রীলঙ্কা শেষটা ভালো করে চড়া হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়ল। তামিমদের হাতে সিরিজের শিরোপা, অথচ শিরোপা উদযাপন একেবারেই সাদামাটা। ম্যাচ হেরে ক্লিনশিট রাখার পাশাপাশি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ১০ পয়েন্ট হাতছাড়া হওয়ার কষ্ট তো পাওয়ার কথা।
প্রথম দুই ওয়ানডেতে নিষ্প্রভ হয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুশল পেরেরা এদিন জ্বলে উঠেন। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ইনিংসের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বোলারদের এলোমেলো করে দেন লঙ্কান অধিনায়ক। ৪৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি এবং ৯৯ বলে পেয়েছেন সেঞ্চুরি। তাকে তিন অঙ্কে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। এক ইনিংসে পরপর তিনবার জীবন পেয়েছেন পেরেরা।
৬৬ রানে তার প্রথম ক্যাচ ছাড়েন মোস্তাফিজুর। ৮৯ রানে তাকে জীবন দেন আফিফ। শেষমেশ ৯৯ রানে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান লঙ্কান অধিনায়ক। সেই মাহমদউল্লাহর হাতে আর ২১ রান যোগ করে ১২০ রানে থামেন পেরেরা। ১২২ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ইনিংসটি সাজান। এছাড়া ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ৭০ বলে করেন ৫৫ রান। গুনাথিলাকা ৩৯ ও উইন্দু হাসারাঙ্গা ১৮ রান করেন।
বাংলাদেশের শুরুর ও মাঝপথের বোলিং ছিল এলোমেলো। শেষদিকে লড়াইয়ে ফেরে তাসকিন, মোস্তাফিজরা। প্রথম ১০ ওভারে বিনা উইকেটে শ্রীলঙ্কার রান ৭৭। পরের ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে পুঁজি ১২০। ৩০ ওভারে রান ১৭০। উইকেট ৩টি। হাতে ৭ উইকেট রেখে শেষ ১২০ বলে লঙ্কানরা ব্যাট হাতে দোর্দান্ড প্রতাপ দেখাবেন এমনটাই অনুময়ে ছিল। কিন্তু বোলারদের শেষের লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২৮৬ রানের আটকে রাখতে পারল বাংলাদেশ। শেষ ২০ ওভারে ১১৬ রান করেন তারা।
শ্রীলঙ্কার প্রথম ৩ উইকেট নেওয়া তাসকিন ফিরে এসেছে নিয়েছেন আরও ১ উইকেট। ৯ ওভারে ৪৬ রানে তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের সেরা। এছাড়া শরিফুল ৮ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। উইকেট পাননি সাকিব, মোস্তাফিজ ও মিরাজ। ৩ ওভারে ৩২ রান দিয়ে মোসাদ্দেকও ছিলেন বিবর্ণ।
ব্যাটসম্যানদের জন্য লড়াইটা ছিল কঠিন। আগের দুই ম্যাচে ২৫৭ ও ২৪৬ রান করা বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল দুই ম্যাচের নায়ক মুশফিকুর রহিমের ওপর। কিন্তু শেষ ম্যাচে তার ব্যাট হাসল না। হাসল না বাংলাদেশও। ২৮ রানে শেষ তার লড়াই।
সাকিব রান খরা কাটাতে পারেননি। চামিরার বলে ৪ রানে শেষ তার ইনিংস। এছাড়া দুই ওপেনার তামিম ও নাঈমকে ফিরিয়েছেন চামিরা। লিটনের পরিবর্তে দলে আসা নাঈম সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ১ রানে শেষ তার ইনিংস। তামিম নিজের আউট নিয়ে ছিলেন অনেক ক্ষিপ্ত। চামিরার ফুলার লেন্থ বল ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। আম্পায়ার তানবীর অতিথিদের আবেদনে সাড়া দেন। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন তামিম। কিন্তু আলট্রা এজে দেখা যায় ব্যাট মাটিতে লেগেছিল তখন হাল্কা এজ তৈরি হয়। তাতে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি। ১৭ রানে তামিমের ইনিংসটি শেষ হয়।
পরের দিকে মোসাদ্দেক ও মাহমুদউল্লাহর হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের রান এগিয়ে যায় যা শুধুমাত্র লজ্জা থেকে বাঁচায়। মোসাদ্দেক ৫১ রান করেন ৩ চার ও ১ ক্কায়। মাহমুদউল্লাহ শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হন তখন নামের পাশে ৫৩ রান, ২ চার ও ১ ছক্কায়।
বল হাতে ৯ ওভারে ১ মেডেনে ১৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন চামিরা। ম্যাচসেরার পুরস্কারটা উঠেছে তার হাতেই। এছাড়া সিরিজে মুশফিক ২৩৭ রান করে হয়েছেন সিরিজ সেরা।