খেলাধুলা

কিউই প্রতিশোধ নাকি ইংলিশ রূপকথা

সেই ফাইনাল এখনো দগদগে। পরতে পরতে ছড়ানো ছিল রোমাঞ্চ। লর্ডসে শ্বাসরুদ্ধকর মূহুর্ত আর নাটকীয়তায় ভরা ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে গাঁথা হয়েছিল ইংলিশ রূপকথা। নির্ধারিত ওভার শেষে সুপার ওভারও টাই হওয়ার পর বাউন্ডারির ব্যবধানে এগিয়ে থেকে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। সময়ের ব্যবধানে দল দুটি আবারও মুখোমুখি বিশ্বকাপের মঞ্চে। তবে এবার আছে ভিন্নতা। সেবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ, এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সেবার ফাইনালে আর এবার সেমিফাইনালে।

তাতে কী, বিশ্বকাপই-তো। এই সেমিফাইনাল যে ফাইনালেরই পথ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া, আর হারলেই বিমানের টিকিট। বুধবার (১১ নভেম্বর) চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড-নিউ জিল্যান্ড। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় ফাইনালে ওঠার মহারণে নামবে দুই দল। কেন উইলিয়ামসনের দলের সামনে লর্ডসের প্রতিশোধ আবুধাবিতে নেওয়ার সুযোগ। আর এউইন মরগ্যানের সামনে আবার কিউইদের হারিয়ে সুযোগ ইংলিশ রূপকথার পুনরাবৃত্তির।

সবশেষ ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও দল দুটি মুখোমুখি হয়েছিল। সেবারও শেষ হাসি হাসে ইংলিশরা। এ ছাড়া হারতে হয়েছে পরের বছর অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপপর্বেও। এখন পর্যন্ত দল দুটি টি-টোয়েন্টিতে মিলিত হয়েছে ২১ বার। তার মধ্যে ১২ বার জিতেছে ইংল্যান্ড আর নিউ জিল্যান্ড ৭ বার। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর সবশেষ তিন আইসিসি ইভেন্টে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড।

ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে মরগ্যান জানালেন, আমরা আগে কি করেছিলাম সেসব নিয়ে এখন তো ভেবে লাভ নেই। অতীত থেকে শিক্ষা নেয়ার আগে আমরা এই আসরের দিকেই তাকাতে পারি। আমরা সত্যি ভালভাবে সেমিফাইনালে এসেছি এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রতি ম্যাচে আমাদের পরিকল্পনা সঠিক ছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারে আমাদের ভুল চোখে পড়ে। এটা নিয়ে আমাদের ভাবার আছে এবং কাজ করার আছে। সেমিফাইনালেও বড় লক্ষ্য তাড়া করতে হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের শিক্ষা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’

চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে দুর্দান্ত খেলে ইংল্যান্ড। প্রতিপক্ষকে ডোমিনেট করে একের পর এক জয় তুলে নিয়েছিল দলটি। তাদের জয়রথ থামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। অতীত সাফল্য বিবেচনায় ইংল্যান্ড এগিয়ে ইংলিশ অধিনায়ক মরগ্যান তা মানতে নারাজ। নিউ জিল্যান্ডকে শক্তিশালি দল আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই নিজেদের ফেভারিট ভাববো না। হয়তো আমরা দল হিসেবে ভালো। আমরা এখনও নিজেদের যুবক মনে করি এবং ছোটবেলার মতো ড্রেসিংরুমে গল্প শেয়ার করি। এটা আমাদের দল হিসেবে এক হতে সাহায্য করে এবং এটা আমাদের শক্তি। কিন্তু আমি নিজেদের ফেভারিট বলবো না। নিউ জিল্যান্ড বেশ শক্তিশালী দল এবং তাদের ম্যাচ উইনার আছে বেশ কয়েকজন। অবশ্যই ওরা লড়াইটা সহজে হারতে চাইবে না। তাই আমরা খুব রোমাঞ্চকর একটি দলের দারুণ চ্যালেঞ্জের অপেক্ষায় আছি।’

এদিকে কিউই অধিনায়ক এখন শুধু সামনে এগিয়ে যেতে চান। ২০১৬ সাল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের কথা স্মরণ করালে কিউই কাপ্তান বলেন, ‘এই ৫ বছরে আমরা আরও উন্নত হয়েছি। আমাদের দলে কিছু অসাধারণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার এসেছে যা দলটিকে পরিণত করেছে। এখন আমরা বড় দলের সঙ্গে বড় কিছু ভাবতে পারি। আর এই ম্যাচে কোনদিক দিয়ে আমরা জিততে পারি এই প্রশ্নর জবাবে বলবো ক্রিকেটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালো খেলা। যে কোন ফরম্যাই হোক বাজে পারফর্ম আপনাকে জেতাতে পারবে না। তাই আমরা এ ম্যাচেও এই ফোকাস রাখবো।’

এদিকে নিউ জিল্যান্ডের জন্য বড় সুযোগ এনে দিতে পারে ইংল্যান্ড শিবিরের দুই ইনজুরি। জেসন রয় ও তাইমাল মিলসকে হারিয়েছে ইংলিশরা। একাদশের এই দুই নিয়মিত ক্রিকেটারকে হারালেও ইংল্যান্ডের শক্তি কমেনি বলে জানান উইলিয়ামসন, তারা দুজনেই ইংল্যান্ডের বড় খেলোয়াড়। এই প্রতিযোগিতায় তাদের ইনজুরিতে পড়া সত্যিই দুঃখজনক। কিন্তু আমি মনে করি ইংল্যান্ডের অন্যতম শক্তির জায়গা তাদের গভীরতা, যেটা সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গড়ে তুলেছে। তারা এখনো অনেক শক্তিশালী দল যারা সত্যিই ভালো ক্রিকেট খেলছে। আমাদের যদি সুযোগ নিতেই হয় তবে ভালো ক্রিকেট খেলেই তা পেতে হবে।’

এ বছরই ভারতকে হারিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়শিপ জেতা নিউ জিল্যান্ডের সামনে এবার প্রতিশোধের পাশাপাশি ইংলিশ আক্ষেপও ঘোচানোর দারুণ সুযোগ। তারা কি পারবে টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বসেরার মুকুট পরার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে? নাকি জয়গান গাইবে ইংলিশরা? জানা যাবে রাতেই।