ব্যর্থতার গল্প শুনতে কারই বা ভালো লাগে! সেটা হোক যে কোনো ক্ষেত্রে। ক্রীড়াজগতে বলতে গেলে বাংলাদেশের নামডাক এনে দিয়েছে ক্রিকেটই। কিন্তু এই বছর ঘুরেফিরে দেখলে সেখানে ব্যর্থতাই বেশি পড়বে চোখে। আসলেই কি তাই? ২০২১ সালে ক্রিকেটে আছে সাফল্যের কিছু অধ্যায়, শুধু ব্যাট-বলেই নয়, এই বছর মনে রাখার মতো ঘটনা ঘটেছে অন্য খেলাধুলাতেও। একুশে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সেরা সাফল্য নিয়েই এই গল্প-
আর্চারি বিশ্বকাপের ফাইনালে বাংলাদেশ
গত মে মাসে দারুণ এক সাফল্য পেতে পেতেও পায়নি বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ আর্চারির রিকার্ভ মিশ্র দলগত ইভেন্টে ফাইনালে ওঠে লাল সবুজের দুই প্রতিনিধি রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী।
সুইজারল্যান্ডের লুজানে বিশ্ব জয়ের হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু পারেনি। র্যাংকিংয়ের ১৭ নম্বরে থাকা দলটি আর্চারির রিকার্ভ মিশ্র দলগত ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়।
সোনা জিততে না পারলেও এই রৌপ্য জয় নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে আর্চারির অনন্য চূড়ায়।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রতিশোধ
লাল বলে শ্রীলঙ্কায় তাদের কাছে ম্যাচ হারের প্রতিশোধ বাংলাদেশ নেয় ঘরের মাঠে সাদা বলে। আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জেতে তামিমের দল। বাংলাদেশ সিরিজ জেতে মুশফিকুর রহিমের অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ে। ৩ ম্যাচে ২৩৭ রান করে সিরিজ সেরা নির্বাচিত হন তিনি।
আইসিসির মাসসেরা মুশফিক
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আইসিসির মাসসেরা খেলোয়াড় হন মুশফিকুর রহিম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে এই স্বীকৃতি পান তিনি। ওয়ানডে সিরিজে ৭৯ গড়ে ২৩৭ রান ছিল তার মে মাসে, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে করেন ১২৫ রান। হন সিরিজ সেরাও। পাকিস্তানের হাসান আলী ও শ্রীলঙ্কার প্রবীণ জয়াবিক্রমাকে পেছনে ফেলে সেরা হন মুশফিক।
জিম্বাবুয়েতে উড়ন্ত বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই বছর ধারাবাহিক সাফল্যের শুরু জিম্বাবুয়েতে। ১৬ মাস পর টেস্টে ফিরেই বাজিমাত মাহমুদউল্লাহর। ‘ব্যাকআপ’ হিসেবে সুযোগ হয় তার। ১৫০ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেই একমাত্র টেস্টে দুর্দান্ত জয়ের নায়ক হন তিনি। আর ম্যাচ চলাকালে নিশ্চিত হয়ে যায়, এটাই তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট।
টেস্ট সিরিজ শেষে মুশফিক ওয়ানডে না খেলে দেশে ফিরেন। তারপরও জিম্বাবুয়েকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করে তামিমের বাংলাদেশ।
ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি না খেলে জিম্বাবুয়ে ছাড়েন তামিম। তামিম-মুশফিককে ছাড়া এই ফরম্যাটের সিরিজও বাংলাদেশ জিতে যায় ২-১ এ। তিনটি ট্রফি নিয়ে বছরের মাঝামাঝি সময়ে দারুণ সাফল্য পায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে মাস সেরা সাকিব
জিম্বাবুয়েতে ব্যাট-বল হাতে দারুণ খেলে জুলাইয়ের মাসসেরার তালিকায় মনোনীত হন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল মার্শ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেইডেন ওয়ালশকে পেছনে ফেলে সেরাও হন তিনি। বিশেষ করে ওয়ানডেতে তিন ম্যাচে ১৪৫ রান ও ৮ উইকেট তাকে ভোটিংয়ে জয়ী করতে বড় ভূমিকা রাখে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়
আগস্টের প্রথম সপ্তাহ ছিল বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক। ৩ আগস্ট মিরপুরে ২৩ রানে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টিতে হারায় মাহমুদউল্লাহর দল। একে একে টানা তিনটি ম্যাচ জিতে সিরিজও নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। অজিদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের পাতায় নাম লিখে তারা। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ শেষ করে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে, যা সাফল্যের পাতায় লেখা থাকবে অনন্তকালের জন্য।
নিউ জিল্যান্ডকেও পাত্তা দিলো না বাংলাদেশ
আগস্টে অস্ট্রেলিয়া, আর সেপ্টেম্বরে তাদের তাসমান পারের প্রতিবেশী নিউ জিল্যান্ড। দুই দলই বাংলাদেশের মাটিতে নাকানিচুবানি খেল। ১ সেপ্টেম্বর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখেই পাঁচ টি-টোয়েন্টির সিরিজও নিজেদের করে নেয় তারা। সিরিজটি শেষ হয় ৩-২ এ।
ঘরোয়া ফুটবলে বসুন্ধরার দাপট
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত বছর প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল হয়নি। আগের বছর এই শিরোপা ঘরে তুলেছিল বসুন্ধরা কিংস। এক বছরের বিরতি পড়লেও তাদের দাপট ছিল এই বছরও। চার ম্যাচ হাতে রেখে প্রিমিয়ার লিগের শ্রেষ্ঠত্ব অটুট রাখে অস্কার ব্রুজোনের দল।
ক্রিকেটে মেয়েদের দাপট
নভেম্বরে জিম্বাবুয়েতে দাপট দেখাল মেয়েরা। হারারেতে স্বাগতিকদের ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজ জিতে দাপট দেখায় বিশ্বকাপ বাছাইতেও। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারায় ৩ উইকেটে। আর যুক্তরাষ্ট্রকে উড়িয়ে দেয় ২৭০ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে। যদিও বৃষ্টি আইনে তৃতীয় ম্যাচ হারে থাইল্যান্ডের কাছে।
হঠাৎ করে আফ্রিকায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে বাছাইপর্ব বাতিল হয়। তবে লাভই হয়েছে বাংলাদেশের নারী দলের। আইসিসির র্যাংকিং অনুযায়ী তারা প্রথমবার জায়গা পেয়েছে ২০২২ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। তিনবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেললেও এই প্রথম ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিবেন নিগার সুলাতানারা।
ভারতে যুবাদের বিজয় কেতন
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে ভারত জয় করে বাংলাদেশের যুব ক্রিকেট দল। অনূর্ধ্ব-১৯ ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে ভারতের ‘এ’ ও ‘বি’ যুব দলের বিপক্ষে দাপট দেখায় তারা। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ‘বি’ যুব দলের বিপক্ষে ফাইনাল জিতে ট্রফি হাতে নেয় রাকিবুল হাসানের দল। এই সাফল্যের সুখস্মৃতি নিয়ে যুব এশিয়া কাপ খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরাত গেছে বাংলাদেশ। তারপর মিশন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার স্বপ্ন।
সাফে মেয়েদের ইতিহাস
শেষ ভালো যার, সব ভালো তার- এই প্রবাদ বাক্য যারা মানেন, তাদের জন্য বলার মতো কাজ করেছে মেয়ে ফুটবলাররা। অনূধ্র্ব-১৯ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অবিশ্বাস্য আধিপত্য করে শিরোপা জিতেছে মারিয়া মান্ডার দল। ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা ২২ ডিসেম্বর। বছর শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে এই দুর্দান্ত সাফল্য দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে করেছে গৌরবান্বিত।