শেষ হতে চলেছে ২০২১ সাল। ক্রীড়াঙ্গনে গোটা বছরজুড়ে ঘটেছে ছিল নানা চমক জাগানিয়া ঘটনা। যেমন টেনিসের কথাই ধরুন, সেখানে বছরের শুরু থেকে দাপট দেখান নোভাক জোকোভিচ। ২০তম গ্র্যান্ড স্লাম জিতে সেরাদের কাতারে, কিন্তু আক্ষেপ নিয়েই বছর শেষ হয়েছে তার। সার্ব তারকার এই উত্থান-পতনের গল্পের মধ্যেই হয়েছে একটি নতুন নক্ষত্রের জন্ম। এই বছর টেনিসে কী ঘটেছে, তা একটু ফিরে দেখা যাক-
জোকোভিচের ১৮তম গ্র্যান্ড স্লাম
মেলবোর্ন পার্কে নোভাক জোকোভিচের দাপট পুরোনো নয়। ৮ বার ফাইনালে উঠে প্রত্যেকবারই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চ্যাম্পিয়ন। এবারো তার ব্যতিক্রম কিছু হলো না।
সব বাধা পেরিয়ে ফাইনালে পেয়েছিলেন রাশিয়ার দানিল মেদভেদেভকে। তাকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে টানা তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে যান সার্ব তারকা। এটি ছিল জোকোভিচের ১৮তম গ্র্যান্ড স্লাম।
নাদালের রাজত্ব গুঁড়িয়ে জোকোভিচের শ্রেষ্ঠত্ব
ফ্রেঞ্চ ওপেনের রোলাঁ গাঁরোয় লাল মাটির কোর্টে রাফায়েল নাদালের রাজত্ব চলেছে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। যেখানে জোকোভিচ কেবল একবারই চ্যাম্পিয়নের ট্রফি জিতেছিলেন, ২০১৬ সালে। তার পরে থেকে নাদালের আধিপত্য। এবার টানা পঞ্চম ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের মিশনে ছিলেন স্প্যানিশ তারকা।
কিন্তু সেমিফাইনালে নাদাল হেরে যান জোকোভিচের কাছে। আর সার্ব তারকাই জিতে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফ্রেঞ্চ ওপেন।
ফেদেরার-নাদালকে ছুঁলেন জোকোভিচ
আগের দুটি গ্র্যান্ড স্লামের মতো বছরের তৃতীয় মেজর টুর্নামেন্ট উইম্বলডনেও চলল জোকোভিচের জয়জয়কার।
একে একে সব বাধা টপকে ফাইনালে মাত্তেও বেরেত্তিনিকে হারিয়ে ষষ্ঠ উইম্বলডন জিতেন সার্ব তারকা। আর একই সঙ্গে ২০তম গ্র্যান্ড স্লাম জিতে রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদালের পাশে বসেন। সর্বকালের শীর্ষ গ্র্যান্ড স্লাম জয়ীর তালিকায় যৌথভাবে রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদালকে ছোঁন জোকোভিচ।
আক্ষেপে বছর শেষ জোকোভিচের
টানা তিনটি গ্র্যান্ড স্লাম জিতে ফেভারিট হয়ে টোকিও অলিম্পিকে পা রেখেছিলেন জোকোভিচ। ২০০৮ সালে ব্রোঞ্জ জয়ী সার্ব তারকার স্বপ্ন ছিল অলিম্পিকে সোনা জেতার। দাপট দেখিয়ে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেমিফাইনালে আলেক্সান্দার জভেরেভের কাছে আত্মসমর্পণ। এমনকি ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচেও হেরে বসেন পাবলো কারেনো বুস্তার কাছে। ২৯ বছর পর জার্মানিকে টেনিস থেকে স্বর্ণ এনে দেন জভেরেভ।
ওই না পাওয়ার আক্ষেপ ঘুচিয়ে ৫২ বছরের ইতিহাসে প্রথম পুরুষ হিসেবে ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের হাতছানি ছিল জোকোভিচের সামনে। ইউএস ওপেনে সেই আশায় বুক বেঁধে নেমেছিলেন। ফাইনালেও উঠেছিলেন, প্রতিপক্ষ বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে হারিয়ে দেওয়া মেদভেদেভ। কিন্তু এবার প্রতিশোধ নিলো রাশিয়ান তারকা।
সেদিন আর্থার অ্যাশে স্টেডিয়ামে ২৩ হাজার দর্শকের সামনে কেঁদেছিলেন। নাদাল-ফেদেরারকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ও ইতিহাস গড়ার মিশনে এত দর্শকের সমর্থন পেয়ে নিজের আবেগের লাগাম টেনে ধরতে পারেননি। অন-কোর্ট ইন্টারভিউতে বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকা বলেন, ‘আমি ম্যাচ জিততে পারিনি, কিন্তু আমার হৃদয় আনন্দে ভরে গেছে। পৃথিবীর বেঁচে থাকা সবচেয়ে সুখী মানুষ আমি। কারণ আপনারা কোর্টে আমাকে বিশেষ অনুভূতি এনে দিয়েছেন। আপনারা আমার আত্মা ছুঁয়ে দিলেন।’
র্যাডুকানু, একটি নতুন নক্ষত্রের জন্ম
এম্মা র্যাডুকানু, এই বছরের উইম্বলডনে খেলেন প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম। খেলতে গেলেন আমেরিকায়। ইউএস ওপেনের বাছাইয়ের শেষ দিনে দেশে ফেরার বিমানের টিকিট কেটে রেখেছিলেন। সেই তিনিই ১৭ দিন পর হাজার হাজার দর্শককে তাক লাগিয়ে হাতে নিলেন ট্রফি।
শুধু কোয়ালিফাইং নয়, পুরো ইউএস ওপেনে দাপট দেখান র্যাডুকানু। ফাইনালে ওঠার পথে একটি সেটও হারেননি। ৪৪ বছরের মধ্যে প্রথম ব্রিটিশ নারী হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম জিতলেন র্যাডুকানু।
টেনিস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাটিলোভা বলেছিলেন, ‘একটি নক্ষত্রের জন্ম হলো। এম্মা র্যাডুকানু ইতিহাস গড়ল এবং এটা তো তার কেবল শুরু।’
এই বছর মেয়েদের চারটি গ্র্যান্ড স্লামেই ভিন্ন ভিন্ন চ্যাম্পিয়নের দেখা মিলেছে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতেন নাওমি ওসাকা। ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম অর্জন করেন চেক রিপাবলিকের বারবোরা ক্রেজচিকোভা। ২০১৯ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ী অ্যাশলেঘ বার্টি হন উইম্বলডনের নতুন রানি।