খেলাধুলা

ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মুমিনুল, ঘুমাতে পারেননি রাতে

নিউ জিল্যান্ড বধের পর ড্রেসিংরুমে মুশফিকুর রহিম গর্জন করে সতীর্থদের বলছিলেন, ‘উই হ্যাভ টু এনজয় ইট ব্রাদার।’ এরপরেই সবার কণ্ঠে আমরা করব জয়ের কোরাস। আজ দিন তো তাদেরই, শুধু উদযাপনের দিন। 

কত আলোচনা, কত সমালোচনা, দল ছিল খাদের কিনারায়। অথচ নিউ জিল্যান্ড সফরের শুরুটাও ভালো ছিল না। করোনার হানায় সময়মতো অনুশীলনও শুরু করতে পারেননি ক্রিকেটাররা, থাকতে হয়েছে চার দেয়ালে বন্দি। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে কিউইদের দেশে বাঘের গর্জন দিয়ে শুরু করেছে মুমিনুল হকের দল।

নতুন শুরুর ঘোষণা বছর শুরু করার আগের দিনই দিয়ে রেখেছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল। এরপর দাঁতে দাঁত চাপ চেপে হার না মানা মানসিকতায় লড়াই করে জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের প্রতিটি দিন যেন ছিল বাংলাদেশের। চতুর্থ দিন শেষেই জয়ের সুবাস পেয়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা, শেষ ও পঞ্চম দিন শুধু প্রক্রিয়া ঠিক রেখে ফল নিয়ে আসা।

বুধবার (৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশে ভোরের আলো ফোটার আগেই ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। যেন নতুন দিনের জয়গান। তাও যেই সেই জয় নয়, একেবারে কতৃত্ব দেখিয়ে টেস্টের চ্যাম্পিয়নদের যেন বলে কয়ে হারিয়েছে।

কাইল জেমিসনকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মুশফিকের শট বাউন্ডারি স্পর্শের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখায় বাংলাদেশ। এই মুহূর্তটির জন্য যে কত অপেক্ষা, কত শ্রম সেটি মুমিনুলের চেয়ে বেশি বোঝার কথা আর কারো নয়। তাই তো বাংলাদেশ অধিনায়ক, জয়ের পর উচ্ছ্বাসের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন, জানিয়েছেন ঘুমাতে পারেননি রাতে।

জয়ের পর গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না কি অনুভূতি হচ্ছে। এটা এক কথায় অবিশ্বাস্য।’

শেষ দিন কী হবে সেই উদ্বেগে নির্ঘুম রাত কেটেছে অধিনায়কের, ‘সত্যি কথা বলতে, আমি গতকাল রাতে ঘুমাতে পারিনি আজ কী হবে সেটা ভেবে। এই টেস্টটা জেতা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের ঐতিহ্যের জন্য এই টেস্টটা জেতা দরকার ছিল। গত দুই বছর আমরা ভালো টেস্ট ক্রিকেট খেলিনি। দলের সবাই টেস্ট খেলায় উন্নতি করতে চাচ্ছিল। এটা দলীয় পারফরম্যান্সের ফলাফল।’

মুমিনুলের সঙ্গে সব বাঙালিও এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল। কাঁথা-কম্বল মুড়িয়ে আরামের ঘুমকে না বলে দিয়ে সবার চোখ ছিল পর্দায়। মুমিনুলের মতো অনেক ক্রিকেটপ্রেমীদের রাতও হয়তো কেটেছে নির্ঘুম আর উৎকণ্ঠায়। জাতীয় নির্বাচক হাবিবুল বাশারও গতকাল বলেছিলেন, রাতে তার ঘুম হবে না।

ব্যাটিং-বোলিং সব বিভাগেই বাংলাদেশ আলো ছড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রতিপক্ষের কন্ডিশনে পেসারদের চোখ রাঙানি। মুমিনুল বললেন, ‘আমরা তিন বিভাগেই খুবই ভালো করেছি। বিশেষ করে বোলাররা, প্রথম ইনিংসে ওরা উইকেটের আর্দ্রতা কাজে লাগিয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো করেছে। ব্যাটসম্যানরাও খুবই ভালো খেলেছে।’

টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রান করে নিউ জিল্যান্ড। বাংলাদেশ ৪৫৮ করে লিড দেয় ১৩০ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ১৬৯ রানের বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকরা। জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৪০ রান। ২ উইকেট হারিয়ে সফরকারীরা টপকে যায় সহজেই। পাঁচদিনেই কর্তৃত্ব দেখিয়ে দারুণ জয়ে শেষ হাসি হাসে বাংলাদেশ।

ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের চার ব্যাটসম্যান হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হক (৮৮) ও লিটন দাস (৮৬) আউট হয়েছেন সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা মাহমুদুল হাসান জয় আউট হয়েছেন ৭৮ রান করে। নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৬৬ রান। মেহেদী হাসান মিরাজ (৪৭) ও ইয়াসির আলী রাব্বির (২৬) অবদানও অপরিসীম।

বল হাতে নজরকাড়া পারফরম্যান্স করেছেন ইবাদত হোসেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে একাই নিউ জিল্যান্ডকে ধসিয়ে দিয়েছেন। পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

ইবাদতকে নিয়ে মুমিনুল আলাদা করে বললেন, ‘গত দুই-তিন বছর ইবাদত অনেক পরিশ্রম করেছে। সে বিমান বাহিনী থেকে এসেছে। সে একজন ভলিবল প্লেয়ার। সে এক কথায় অবিশ্বাস্য বোলিং করেছে। আমাদের কোচিং স্টাফ তার সঙ্গে অনেক কাজ করেছে ঠিক জায়গায় বল করার ক্ষেত্রে। তার স্পেলটা ছিল অবিশ্বাস্য। দীর্ঘদিন ধরে তার কাছে এমন কিছুই প্রত্যাশিত ছিল।’