খেলাধুলা

আইপিএলে দল না পাওয়ার বিষয়টি সাকিবকে আঘাত করতে পারে: ফাহিম

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ওয়ানডে ও টেস্ট সিরজে সাকিব আল হাসানকে রেখেই দল ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ওলট-পালট হয়ে যায় সাকিবের না খেলতে চাওয়ায়। বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের উদ্দেশে দুবাই যাওয়ার আগে সাকিব জানিয়েছেন, তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত নন।

সাকিবের এমন সিদ্ধান্ত অবাক করেছে গুরু নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে। মুঠোফোনে সেই ব্যাখাও দিয়েছেন রাইজিংবিডিকে। যে কোনো সমস্যায় পড়লেই সাকিব তার কাছে ছুটে যেতেন। সম্প্রতি শেষ হওয়া বিপিএলে ফরচুন বরিশালের পরামর্শক ছিলেন ফাহিম। আর দলের নেতৃত্বে ছিলেন সাকিব।

এখানে সাকিবের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স দেখে ফাহিম ভেবেছিলেন, বিশ্বসেরা রূপে আবার ফিরছে তার শিষ্য। কিন্তু বিপিএল শেষ না হতেই আফগান সিরিজে সাকিবকে দেখে ছন্দহীন মনে হয়েছে ফাহিমের কাছে।

‘কিছুটা অবাক। বিপিএলে তাকে দেখেছি খুব ভালো খেলতে। আফগান সিরিজে ওকে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল ছন্দ পাচ্ছে না। ওর নিজের পক্ষ থেকে একটা ব্যাখাতো দিয়েছে। আসলে ব্যাপার কি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটা চাপ নিয়ে খেলতে হয়। আমি পারলাম কী পারলাম না, এই চিন্তা করে হয় না। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিকতা যদি না থাকে তাহলে পারফর্ম করা কঠিন, দাঁড়িয়ে থাকাও কঠিন। আমার নিজের কাছে সাকিবকে অনেক ক্লান্ত মনে হয়েছে। ওর কথায়ও মনে হয়েছে, চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিকতায় সে নেই।’

একটি প্রসঙ্গ বারবার আসছে। আইপিএলে দল না পাওয়ায় সাকিব কী মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। যেটা দেখা গেছে পারফর্ম্যান্সেও। নিলামের আগে টানা ৫ ম্যাচে সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন বিপিএলে। ১২-১৩ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের নিলামে দল না পেয়ে যেন ভেঙে পড়েন তিনি। নিলামের পর বিপিএলে সাকিব কোয়ালিফায়ার ও ফাইনাল ম্যাচসহ আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে, দুই টি-টোয়েন্টি খেলেছেন।

কিন্তু সাকিবীয় পারফরম্যান্স দেখা যায়নি ব্যাট কিংবা বলে। বিপিএলে ব্যাট হাতে শেষ দুই ম্যাচে করেন ৮ রান, বল হাতে নেন ১ উইকেট। ফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আউট হয়েছেন মাত্র ৭ রানে। দলও হারে। আর আফগান সিরজে ৫ ম্যাচে ব্যাট হাতে করেন ৭৪ রান, আর বল হাতে নেন ৭ উইকেট।

আইপিএলের নিলামের সময় চলা বিপিএলে সাকিবকে খুব কাছে থেকেই দেখেছেন ফাহিম। তার কাছে কী মনে হচ্ছে দল না পাওয়াটা আঘাত করতে পারে সাকিবকে?

ফাহিম বলেন, ‘একদম নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না। কিন্তু হতেই পারে। আমরা জানি যে আইপিএল বিশ্বের সেরা একটি টুর্নামেন্ট। সেখানে পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড়রা আসে। আমি যদি নিজেকে সেরা খেলোয়াড় মনে করি এবং নিজেকে যোগ্য মনে করি, এতোদিন ওখানে ছিলাম আমি। এখন যদি আমাকে ওখানে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না, এটা আমাকে আঘাত করতেই পারে। এটা যেকোনো মানুষকেই আঘাত করতে পারে।’

‘প্রত্যাশা অনুযায়ী কোনো কিছু না পাওয়াটা মানসিকভাবে আঘাত করতেই পারে। যে কোনো মানুষকেই দিতে পারে। আমাদের সবারই এক অহংকারের জায়গা আছে। ওই জায়গাটায় মানুষ যদি আঘাত পায়, সেখানে একটা অস্বস্তি থাকতেই পারে। ও এতো বছর ধরে আইপিএল খেলে এসেছে, লম্বা একটা সময় সেখানে সে সম্মান পেয়েছে, সেখানে হঠাৎ করে না পেলে আঘাত লাগতে পারে। আসলে অনেক কিছু হয়তো জমা হয়ে আছে। সবকিছু মিলিয়ে ওর হয়তো মনে হয়েছে ক্রিকেট খেলার জন্য যে মানসিকতা দরকার সেটা হয়তো নেই’- আরও যোগ করেন সাকিবের গুরু।

সাকিব তার মানসিকতার অবস্থা বিসিবিকে জানিয়েছেন। দুই পক্ষই দুই দিনের সময় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত আসেনি কোনো সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে ১১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার বিমানে উঠবে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত সাকিব কি উঠবেন এই বিমানে?