এর আগেও বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছে। শুধু টেস্ট নয়, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিও হেরেছে। কিন্তু এমন হার কখনো কি দেখেছে বাংলাদেশ? যেখানে লড়াইয়ের কোনো তাড়নাই নেই খেলোয়াড়দের। ভালো খেলার মানসিকতা ছিল না! টেস্ট ক্রিকেটকে বলা হয় ধৈর্যের খেলা। খেলতে হয় ঠাণ্ডা মানসিকতায়। প্রতিপক্ষের মনোবল নষ্ট করে দিতে হয়। কিন্তু পোর্ট এলিজাবেথে নিজেদের মনোবল, লড়াই করার ইচ্ছা ড্রেসিংরুমে তালা মেরে গিয়েছিলেন বুঝি!
মুশফিক, লিটন, মুমিনুল, ইয়াসিররা যেভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন তাতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই ম্যাচে অংশগ্রহণ করাই ছিল মুমিনুলদের একমাত্র লক্ষ্য! ডারবানের মঞ্চ পোর্ট এলিজাবেথে তৈরি হয়েছিল। ম্যাচ বাঁচাতে মাঠে পড়ে থাকলেই হবে। কিন্তু দুই টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং মানসিকতা একই রকম। ৪১৩ রান তাড়া করতে নেমে গতকালই ২৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। হাতে ৭ উইকেট রেখে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন মুশফিক, মুমিনুল। কিন্তু দিনের দ্বিতীয় ওভারেই মুশফিক মহারাজের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন।
এরপর যা হলো তা শুধু বাংলাদেশকে ব্যাকগিয়ারেই নিয়েছে। মুমিনুল অফস্টাম্পের বাইরের বল টেনে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড উইকেটে। লিটন ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন। ইয়াসির অনুসরণ করেন অধিনায়ক মুমিনুলকে। বাকিরাও ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলেন। ডারবানে শেষ দিনে ৫৫ মিনিটে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আজ পোর্ট এলিজাবেথে আরো ৮ মিনিট বেশি খেলতে পারল। আর দলীয় রানটাও বেশি হলো। ডারবানে ৫৩ রানে অলআউট হওয়া বাংলাদেশ আজ করলো ৮০ রান। গতবারের চেয়ে হারের ব্যবধানটাও বেশি। ডারবানে ২২০ রানে হারের পর বাংলাদেশের এবারের পরাজয় ৩৩২ রানে।
ডারবানের মতো এখানেও দুই স্পিনারে কুপোকাত বাংলাদেশ। মহারাজ ৪০ রানে নেন ৭ উইকেট। হার্মারের শিকার ৩টি। ডারবানে তাদের সাফল্য এরকমই ছিল।
ওয়ানডে দলের সঙ্গে টেস্ট দল গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে গ্যারি কারস্টেনের একাডেমিতে টেস্ট দলকে নিয়ে হয়েছিল আলাদা ট্রেনিং সেশন। বিশ্বকাপজয়ী কোচ কারস্টেনও তালিম দিয়েছেন মুমিনুলদের। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে দুই টেস্টে যেভাবে বাংলাদেশ খেলেছে তাতে স্পষ্ট সাদা পোশাকে বড় দল হতে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
শুধু দলগতভাবেই নয়, মুশফিক, মুমিনুলরা যেভাবে নিজেদের ভুলগুলো করছেন, তাতে দল ব্যাকগিয়ারেই যাচ্ছে। প্রশ্নবিদ্ধ তাদের পারফরম্যান্স, প্রশ্নবিদ্ধ তাদের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ। এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে রঙিন পোশাকের সাফল্য ভেলায় উড়ছিল গোটা দল। কিন্তু সাদা পোশাকে এরকম হতশ্রী পারফরম্যান্সে শেষটা হলো বিষাদমাখা।