সকালের শুরু নাকি দিনের বাকিটা বলে দেয়! মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস এখন প্রাচীন এই প্রবাদ বদলে দেওয়ার দাবি জানাতেই পারেন।
ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের শুরুটা হলো ভয়াবহ। ২৪ রানে নেই শুরুর ৫ উইকেট। তাও ম্যাচের মাত্র সপ্তম ওভারে! এই পাঁচ জনের মধ্যে আবার তিন জনই শূন্য রানে আউট। আশঙ্কা জাগে, লাঞ্চের আগেই কি গুটিয়ে যাবে পুরো একাদশ?
দিনের শুরুর এই দুঃখজনক গল্পটা বদলে দিলেন লিটন দাস ও মুশফিক রহিম। দিন শেষে দুজনেই অপরাজিত রইলেন সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। লিটন নটআউট ১৩৫, মুশফিক ১১৫। দল ৫ উইকেটে ২৭৭।
শুরুর পাঁচ জনের যোগাড় ২৪। পরের দু’জনের ব্যাটে সংগ্রহ আপাতত হার না মানা ২৫৩। তিন শূন্য’র ধ্বংসস্তূপে দুই সেঞ্চুরির সৌধ। প্রথম ঘণ্টায় সাত ওভারের মধ্যেই ৫ উইকেট হাওয়া। পরের পাঁচ ঘণ্টায় ৭৮.১ ওভারে একটা উইকেটও হারাল না। মুশফিক ও লিটন দুজনে যে ব্যাটিং করলেন, তার যথার্থ ট্যাগলাইন হতে পারে একটাই— ‘ব্যাটিং বীরত্ব’!
এগিয়ে থেকে বা কমফোর্ট জোনে দাঁড়িয়ে যে কেউ বড় দান মারতে পারেন। তবে সত্যিকারের জয় তো সেটাই, যে লড়াইয়ে আপনি পিছিয়ে থেকেও শেষে জিততে পারেন। ঢাকা টেস্টের মাত্র প্রথম দিন গেল। এই ম্যাচে জয়-পরাজয় এখনো অনেকদূর, অনেক সময় বাকি। তবে প্রথম দিনে যেভাবে সঙ্কট জয় করল মুশফিক-লিটনের ব্যাট, তাতে এদিন আরেকবার প্রমাণিত হলো; বাংলাদেশ সঙ্কটে লড়তে জানে। ঘুরে দাঁড়াতে পারে। জানে, জেতার জেদে নিজেদের নিংড়ে দিতে। স্কোরবোর্ডে ২৪/৫ দেখে যারা দূরছাই করছিলেন, সেই তারাই দিন শেষে লিটন-মুশফিককে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। টেস্ট ক্রিকেট নেহাত-ই মাঠের ২২ গজের লড়াই নয়। স্কিল, টেকনিক টেম্পারমেন্টের এই লড়াইয়ের সঙ্গে জীবনচিত্রের অনেক মিল। এখানে দুশ্চিন্তার কালো ছায়া আছে। আবার সৌভাগ্যের রূপালি রেখাও রয়েছে। ৪৭ রানে লিটন দাসের ক্যাচ ড্রপ তো তাই জানাল। এখানে সমস্যা আছে, সমাধানও আপনাকে খুঁজে নিতে হবে। দৃঢ়তা, পরিশ্রম, লড়াইয়ের জেদ ও সাহসিকতার সঙ্গে মস্তিষ্কের ব্যবহার— এসবের যোগফলেরই অন্য নাম ক্রিকেট।
জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই আপনি সাফল্যে সিঁড়ি পাবেন না। কিন্তু শুরুর পদক্ষেপে হোঁচট খেয়ে হাঁটা-ই বন্ধ করে দিলে, সামনে পা ফেলাই যাবে না। ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে গায়ের ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রেস জেতার আনন্দই যে ‘জীবন জয়’।
ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনে মুশফিক-লিটন দাসের সেঞ্চুরি জীবনের সেই গানেরই সুর। ১০০ মিটার দৌড়ের শুরুতে পিছিয়ে পড়লেই যদি আপনি ভেবে নেন, নাহ্ আর জিততে পারবো না। থেমে যাই। তাহলে কখনোই জেতা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি ভাবেন, সামনে তো এখনো অর্ধেক পথ বাকি। দেখি না চেষ্টা করে! তাহলেই কেবল রেস জেতার সম্ভাবনা টিকে থাকে। এবং আপনি জিতবেনও।
উদাহরণ চান?
অ্যাথলিট উসাইন বোল্ট তার বেশিরভাগ রেসে শুরুতে পিছিয়ে থাকেন। কিন্তু সেই তিনিই শেষে ফিনিসিং লাইনের কাছে পৌঁছে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখেন, বাকিরা তখনো কত পিছিয়ে!
২৪/৫ দেখে মুশফিক-লিটন যদি ভেবে নিতেন, না আমরা শেষ। তাহলে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনজুড়ে শুধু শ্রীলঙ্কার পেসারদের সাফল্যে নিয়েই লিখতে হতো। কিন্তু এই দু’জনের দৃঢ়তায় সকালের ব্যাড ব্যাটিং বিকেলে হয়ে গেল বোল্ড অ্যান্ড বিউটিফুল!
আর হ্যাঁ, টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকানো মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে আরেকটা আওয়াজ আসছে— ‘আমার রিপ্লেসমেন্ট খুঁজতে থাকুন, স্যার আপনারা। আমি বরং রান, সেঞ্চুরি করেই যাই!’