আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চলছে উৎসব। দুই মাসের মধ্যে দুটি বড় প্রতিযোগিতা। ২৭ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপ। এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অক্টোবরে।
আসন্ন এশিয়া কাপকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি মঞ্চ হিসেবে দেখছে এই মহাদেশের দেশগুলো। সেখানে কেমন করে তারা, সেটাই হবে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি। এশিয়া কাপের প্রথম দিন দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা, তাদের সঙ্গে ‘বি’ গ্রুপে অন্য প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। আর ‘এ’ গ্রুপে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান, সঙ্গে বাছাই পর্ব খেলে আসা একটি সহযোগী দেশ।
এই ছয়টি দেশের কোন দলের এই আসরে কেমন সম্ভাবনা, তাদের শক্তিমত্তা, দুর্বলতা কী এবং পরিসংখ্যান রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। প্রথম পর্বে থাকছে পাকিস্তানকে নিয়ে দল বিশ্লেষণ:
যে কোনও প্রতিযোগিতায় আনপ্রেডিক্টেবল হিসেবে অংশ নেয় পাকিস্তান। মানে তাদের নিয়ে অনুমান করা দুরূহ কাজ। দারুণ ফেভারিট হিসেবে অংশ নিয়েও হঠাৎ ছন্দপতন, আবার খুব বেশি আশা না জাগিয়েও হুট করে ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তানের জন্য।
এশিয়া কাপে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। ২০০০ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা জিতেছিল তারা। এর পরের ফাইনাল ২০১২ সালে, ওইবারও বাংলাদেশে ফাইনালে স্বাগতিকদের হারিয়ে দ্বিতীয় ট্রফি হাতে নেয়। পরেরবারও ফাইনাল খেলেছিল, কিন্তু শ্রীলঙ্কার কাছে হার মানে।
এরপর ৮ বছর কেটে গেছে, ফাইনাল মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পাকিস্তানের কাছ থেকে। আসন্ন প্রতিযোগিতায় কিন্তু সত্যিকারের ফেভারিট তারা। শিরোপার শক্তিশারী দাবিদার মনে করা হচ্ছে তাদের। টপ অর্ডারের চমৎকার পারফরম্যান্স এবং ফাস্ট বোলারদের দারুণ বোলিং এগিয়ে রাখছে তাদের।
পাকিস্তানকে ফেভারিট বলার অন্যতম সেরা কারণ তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা র্যাংকিংধারী এশিয়ান দল তারা এবং আইসিসি র্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান কেবল ইংল্যান্ড ও ভারতের পরে। এছাড়া আইসিসি র্যাংকিংয়ের সেরা তিন ব্যাটসম্যানের দুজনই পাকিস্তানের- বাবর এক নম্বর, তিনে রিজওয়ান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর তিন সিরিজ খেলে দুটিতেই জয় পেয়েছে পাকিস্তান। আর গত বছরের অক্টোবর থেকে ১৩ ম্যাচ খেলে ১১টি জয়, দুটি হারই অস্ট্রেলিয়ার কাছে।
পাকিস্তানের আরেকটি শক্তিশালী জায়গা হলো তাদের টপ অর্ডার। এই মুহূর্তে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর ওপেনিংয়ে। বাবর দারুণ ফর্মে, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ১৩ ম্যাচ খেলে ১২৪ স্ট্রাইক রেটে ৪৮২ রান করেছেন। রিজওয়ানের প্রতিভা তো অনেককে বিস্মিত করেছে, তিনি বিশ্বকাপ থেকে ১৩ ম্যাচ খেলে ১২৮ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৫৯৭ রান। ফখর জামান তিন নম্বরে ব্যাট করেন। ভারতের বিপক্ষে ফখরের রেকর্ড চমৎকার। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে একটি সেঞ্চুরি ছিল। তিনজনই পাকিস্তানের জন্য টি-টোয়েন্টিতে দারুণ পারফর্ম করছেন।
আরও একটি ব্যাপার হলো এই তিন ব্যাটসম্যানেরই সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলার অনেক অভিজ্ঞতা আছে এবং এটা তাদের জন্য অনেকটা হোম গ্রাউন্ড।
পাকিস্তানেরও দারুণ সাফল্য আমিরাতে। নিরাপত্তা ইস্যুতে মাঝে এটাই ছিল তাদের হোম গ্রাউন্ড। দুবাই ও শারজাতে ২৮ টি-টোয়েন্টি খেলে ১৭টি জয়, এর মধ্যে টানা ৮ জয়।
আরেকটি শক্তিশালী দিক হলো তাদের ফাস্ট বোলিং বিভাগ। যদিও হাঁটুর ইনজুরি নিয়ে শাহীন শাহ আফ্রিদি ছিটকে যাওয়ায় সেখানে নিশ্চিতভাবে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। শাহনওয়াজ দাহানি, নাসিম শাহ ও হারিস রউফ সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
তবে পাকিস্তানের যে জায়গাটি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের, সেটা তাদের ব্যাটিংয়ের মিডল অর্ডার। সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম ও লেগ স্পিনার দানিশ কানেরিয়া এই জায়গাটি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, বাবর ও রিজওয়ানের ওপর এখন দল নির্ভরশীল। তারা ভালো শুরু এনে দিতে পারলে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারবে পাকিস্তান। নয়তো অনভিজ্ঞ মিডল অর্ডার পড়ে যাবে চাপে, যেখানে আছেন ফখর জামান, আসিফ আলী ও শাদাব খান।
পাকিস্তানের সম্ভাবনা ও আশঙ্কা নিয়ে আকরাম বলেছেন, ‘গত দুই বছর ধরে পাকিস্তান খুবই ধারাবাহিক। তারা কিছু সত্যিকারের ভালো খেলোয়াড় খুঁজে পেয়েছে। কেবল মিডল অর্ডার ব্যাটিং উদ্বেগজনক। এখানে তাদের কেবল আছে অভিজ্ঞ ইফতিখার আহমেদ, যে চার নম্বরে ব্যাট করে। অন্য ব্যাটসম্যানদের বেশিরভাগের অভিজ্ঞতা খুব কম।’
সাম্প্রতিক ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স বিবেচনায় প্রতিপক্ষের জন্য ব্যাট হাতে হুমকি হয়ে উঠতে পারেন বাবর, রিজওয়ান। আর ব্যাটে বলে দলের মূল অস্ত্র হতে পারেন শাদাব। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভের সব ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে উঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল পাকিস্তান। তবে জিতেছিল ক্রিকেট বিশ্বের অগুণতি ভক্তের হৃদয়, ওই হার বাদ দিলে এবারের এশিয়া কাপেও ফেভারিট তারাই।