খেলাধুলা

এশিয়া কাপের দল বিশ্লেষণ: শ্রীলঙ্কার শক্তিমত্তা, দুর্বলতা ও সম্ভাবনা

সময়ের হিসেবে মাত্র দুদিন। এরপরই পর্দা উঠবে মহাদেশীয় ক্রিকেট লড়াই এশিয়া কাপ-২০২২। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এবারের আসরে অংশ নিবে ছয়টি দল। ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের সঙ্গে আছে শ্রীলঙ্কা। চলুন জেনে নেওয়া যাক এশিয়া কাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সফল দল শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনা, শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা।

এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার রেকর্ড: এশিয়া কাপে এ পর্যন্ত তারা ৫৪ ম্যাচ খেলে জিতেছে ৩৫টিতে। মহাদেশীয় এই টুর্নামেন্টে তারা মাত্র ১৯টি ম্যাচ হেরেছে। শ্রীলঙ্কাই একমাত্র দল যারা এশিয়া কাপের সবগুলো আসরেই (১৪টি) অংশ নিয়েছে। তারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জিতেছে (১৯৮৬, ১৯৯৭, ২০০৪, ২০০৮ ও ২০১৪)।

এবারের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা দল: দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), দানুশকা গুনাথিলাকা, পাথুম নিসানকা, কুশাল মেন্ডিস, চারিথ আসালঙ্কা, ভানুকা রাজাপাকসে, আশেন বান্দারা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহিশ থিকশানা, জেফরি বন্দরসে, প্রাভীন জয়াউইকরামা, চামিকা করুণারত্নে, দিলশান মদুশঙ্ক, মাথিসা পাথিরানা, নুয়ানিদু ফার্নান্দো, নুয়ান থুসারা ও দিনেশ চান্দিমাল।

তরুণদের নিয়ে গঠিত শ্রীলঙ্কা দল বেশ সম্ভাবনাময়। যদিও টি-টোয়েন্টিতে তাদের সাম্প্রতিক ফর্ম ভালো নয়। এ বছর তারা মোট ১১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে। জিতেছে মাত্র দুটি। তারা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে। ভারতের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে হেরেছে। সব মিলিয়ে তারা এ পর্যন্ত ১৫৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে জিতেছে ৬৯টিতে এবং হেরেছে ৮৫টিতে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তারা দারুণ লড়াকু মানসিকতা দেখিয়েছে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তান কি সত্যিই ফেভারিট?

এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কাকে নেতৃত্ব দিবেন দাসুন শানাকা। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে অধিনায়ক করার পর তার নেতৃত্বে দারুণ পারফরম্যান্স করেছে দ্বীপ দেশটি। তার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা প্রথমবার পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে। তার ব্যাটে ভর করেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় পেয়েছিল। আশা করা হচ্ছে তার নেতৃত্বে এশিয়া কাপেও দারুণ কিছু করবে লঙ্কানরা।

শ্রীলঙ্কার দুর্বলতা: শ্রীলঙ্কা দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই তরুণ এবং অনভিজ্ঞ। যাদের পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। ইনজুরির কারণে পেসার বিনুরা ফার্নান্দো ও কাসুন রাজিথা আগেই বাদ পড়েছিলেন। শেষদিকে বাদ পড়েন দুষ্মান্থে চামিরা। তাতে শ্রীলঙ্কার পেস আক্রমণ যারপরনাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এছাড়া তাদের পেস বোলিং ইউনিটের অভিজ্ঞতারও অভাব রয়েছে। পেস বোলিং আক্রমণে তাদের তরুণদের মধ্যে রয়েছে দিলশান মদুশঙ্ক ও মাথিসা পাথিরানা। চামিরার পরিবর্তে দলে জায়গা পাওয়া থুসারা ভালো সংযোজন। কিন্তু তারও খুব বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। একমাত্র চামিকা করুণারত্নের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সব মিলিয়ে পেস আক্রমণ তাদের মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।

শ্রীলঙ্কার শক্তিমত্তা: তবে শ্রীলঙ্কার স্পিন আক্রমণ অন্য যেকোনো দলের তুলনায় সেরাই বলা যায়। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও মাহিশ থিকসানারদের মতো অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে তাদের রয়েছে বিশ্বমানের স্পিন আক্রমণ। স্পিনে তাদের সবচেয়ে বড় তারকা হাসারাঙ্গা। ১৪ গড়ে ও ৬.৬১ ইকোনোমি রেটে এ পর্যন্ত ৬২ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। লঙ্কান স্পিনাররা যেকোনো দলের বিপক্ষে ম্যাচের মধ্যভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এশিয়া কাপে পেস আক্রমণের অনভিজ্ঞতা পুষিয়ে দিতে পারেন তাদের স্পিনাররা।

শ্রীলঙ্কার টপ ও মিডল অর্ডার: শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডার বেশ আশা জাগানিয়া। তবে তাদের গড় চিন্তার উদ্রেককারী। কুশাল মেন্ডিস, আসালঙ্কা ও নিসানকার ব্যাটিং গড় ৩০ -এর নিচে। তবে বান্দারা ব্যাটিং লাইনআপে সম্ভাবনাময় দারুণ সংযোজন। পাঁচ নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করে চার ম্যাচে তিনি ১৩৪ রান করেছেন। মিডল অর্ডারে তার পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কাকে স্বস্তি দিতে পারে। বান্দারা ও ভানুকা রাজাপাকসের জুটি ভালো কিছু উপহার দিতে পারে লঙ্কানদের।

শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনা? বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা এ পর্যন্ত ১২ ম্যাচ খেলে জিতেছে ৮টিতে, হেরেছে ৪টিতে। অন্যদিকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তারা ২০১৬ সালে একমাত্র ম্যাচ খেলেছে এবং জিতেছে। শ্রীলঙ্কা দলে রয়েছে একক ম্যাচ উইনার। সেই তালিকায় আছেন অলরাউন্ডার হাসারাঙ্গা, চামিরা, নিসানকা ও হার্ড-হিটার ব্যাটসম্যান শানাকা। সব মিলিয়ে ধারনা করা যায় গ্রুপপর্ব পেরিয়ে যেতে পারে লঙ্কানরা।