‘দেখুন, আমরা বাংলাদেশি, আমরা কেউই পাওয়ার হিটার না। আমরা চাইলে আন্দ্রে রাসেল বা পোলার্ড হতে পারবো না। আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে যেটুকু আছে তা দিয়ে যতটা উন্নতি করা যায়।’- বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত মুখ অলরাউন্ডার শেখ মেহেদী হাসান পাওয়ার হিটিং নিয়ে এভাবেই বলেছিলেন।
মেহেদীর কথায় স্পষ্ট, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন শারীরিক গঠনকে। অর্থাৎ বাংলাদেশিদের শরীর ক্যারিবিয়ানদের মতো না, তাই চাইলেই চার-ছক্কা মারা যাবে না। কিন্তু এই ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেন ভারতীর স্পোর্টস বায়োমেকানিক্স বিশেষজ্ঞ ডক্টর রতনেশ সিং।
রতনেশ বিসিবির আয়োজনে দেশি কোচদের নিয়ে তিন দিনের বায়োমেকানিক্স ওয়ার্কশপের প্রশিক্ষক ছিলেন। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রশিক্ষণ শেষে রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপে ক্রিকেটের সঙ্গে বায়োমেকানিক্সের সম্পর্ক, উপকারিতা, কাজসহ বিভিন্ন দিক দিক নিয়ে কথা হয়।
ক্রীড়া বিজ্ঞানের অন্যতম বিষয় বায়োমেকানিক্সটা হলো টেকনিক্যাল দিক। একজন ক্রিকেটার কীভাবে শক্তি উৎপন্ন করবে, বলের দিক-গতি কতটা হবে, প্লেসমেন্ট কিংবা টাইমিং এসব ঠিক আছে কি না, একজন ক্রিকেটারকে কীভাবে ইনজুরি মুক্ত রেখে দীর্ঘ সময় খেলানো যায়, কতটা প্রস্তুতি কীভাবে নেবে- এসব বায়োমেকানিক্সের অংশ, বায়োমেকানিক্সে এসবই শেখানো হয়।
হালের টি-টোয়েন্টি যুগে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা পাওয়ার হিটিংয়ে। শারীরিক গঠনের দিক থেকে পিছিয়ে কি না এমন প্রশ্নে রতনেশ জানালেন, এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে বিজ্ঞানের ওপর।
রতনেশ বলেন, ‘পাওয়ার হিটিং সম্পূর্ণ নির্ভর করে বায়োমেকানিক্সের ওপর। কীভাবে আপনি শক্তি উৎপাদন করবেন শট খেলার ক্ষেত্রে, কতটা জোরে হবে, কতটা সময় ও কত রেঞ্জ, সবকিছু নির্ভর করে এর ওপর।’
‘এটা (পাওয়ার হিটিং) হচ্ছে বিজ্ঞান। কীভাবে পাওয়ার অ্যাপ্লাই করতে হবে, এটা আমাদের শিখতে হবে। শক্তির ব্যবহারটা মেধার ওপর নির্ভর করে। যার ভিত্তি শক্ত, টেকনিক্যাল জ্ঞান ভালো, সে মানিয়ে নিতে পারে যে কোনও অবস্থায়। সবসময় এটি করতে পারবেন, যখন আপনার টেকনিক ভালো হবে। বিরাট, রোহিত, বাবর আর আপনাদের সাকিব; তারা টেস্টেরও খেলোয়াড় আবার সাদা বলেরও খেলোয়াড়। তাদের মতো বাকি ক্রিকেটাররা না। পাওয়ার হিটিং তারাও করে। পাওয়ার হিটিং মানে এই না যে প্রতি বলে ছয় মারা।’- আরও যোগ করেন রতনেশ।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটাররা ইনজুরির মধ্য দিয়ে যান। পেসাররা তো শুরু থেকেই পড়তে থাকেন চোটের কবলে। তা থেকে মুক্তির উপায়ও বাতলে দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। তার ভাষায় কঠোর অনুশীলন নয়, স্মার্ট অনুশীলনটা করতে হবে। একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে অনুশীলন করতে হবে। দিনে কতটুকু লোড নিতে পারবেন একজন ক্রিকেটার, সেটা আগে বের করতে হবে। তার পর ঠিক করতে হবে প্রক্রিয়া।
একজন ক্রিকেটার যখন বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে গড়ে উঠেন, এই বায়োমেকানিক্সের দীক্ষা তখন দিতে পারলে ভালো হয় বলে মনে করেন রতনেশ, ‘সিনিয়র ক্রিকেটার যারা, তাদের একটি প্যাটার্ন তৈরি হয়ে গেছে। তাদের বেশি কিছু পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। প্রত্যেকদিনই শরীরের ভেতর কিছু না কিছু পরিবর্তন হয়। গ্রিপ যদি একটু এদিক সেদিক হয় তাহলে ডিরেকশনই পরিবর্তন হয়ে যায়, এক হাত এক দিকে যাবে আরেক হাত আরেক দিকে যাবে। মাইনর চেঞ্জ। হাতের পরিবর্তনের কারণে পাওয়ার হারিয়ে ফেলে। এ সব মাইনর চেঞ্জ সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে আনা যায়, আর যদি শুরু থেকে এটা করা হয় তাহলে এ ক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্ট সফল।’
আধুনিক ক্রিকেট বিজ্ঞানের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। সবকিছু মিলিয়ে রতনেশও জোর দিয়েছেন এই বিজ্ঞানের ওপর। এখানে তার অনুযোগও ছিল, জানান ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো দল ক্রীড়া বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উপমহাদেশের দেশগুলোকে এগোতে দেয়নি। সেই পিছিয়ে পড়া থেকে বেরিয়ে বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকতে রতনেশ শক্ত মতবাদ দিয়েছেন।
তিনদিন ব্যাপী এই কোর্স কেমন হলো? ‘আমার দিক থেকে আমি বলবো প্রোগ্রাম ভালো হয়েছে। অংশগ্রাহণকারীরা আমার রেটিং দিতে পারবে কতটা ভালো হয়েছে (হাসি)। তাদেরও জিজ্ঞেস করা উচিৎ আপনাদের। কিন্তু আমার দিক থেকে আমি বলবো এটি সফল।’- এভাবেই বলেছেন রতনেশ।