সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢুকেই হাতজোড় করে মাথা ঝুঁকে অভিবাদন জানান থাইল্যান্ডের অধিনায়ক নারুয়েমল চাইওয়াই। মুখে পরিতৃপ্তির অভিব্যক্তি। সঙ্গে ছিলেন কোচ হারশাল পাঠক। কিছুক্ষণ আগেই পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে থাইল্যান্ড। গর্বে বুক ফুলিয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন দুজন।
চাইওয়াই বললেন, ‘আমরা অনেক খুশি। অনেক খুশি। পাকিস্তান শক্তিশালী টিম, অনেক উঁচুসারির দল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, আমরা ক্রিকেট খেলি আনন্দের জন্য। আমরা মাঠে অনেক মজা করি। জয়টা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছে।’ বুঝালেন, এই ক্রিকেট তাদের কাছে নিছক আনন্দ আর মজার খেলা।
‘মুয়ে থাই’ থাইল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জাতীয় খেলা। থাই-বক্সিং নামে অবশ্য বেশ পরিচিত। টেনিস-গলফের সঙ্গেও তুলনা করলে ক্রিকেট সেখানে খুব একটা জনপ্রিয় না। যদিও শ্যামদেশে ক্রিকেটের গোড়াপত্তন অনেক আগেই। থাইল্যান্ডের সবচেয়ে পুরোনো ক্রিকেট ক্লাব ‘ব্যাংকক সিটি ক্রিকেট ক্লাব’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯০ সালে। এশিয়ার পুরোনো ক্রিকেট ক্লাবগুলোর তালিকা করতে গেলে এটি আগেই আসবে।
কালের বিবর্তনে ক্রিকেট থাইদের কাছে অপছন্দের তালিকায় চলে গেলেও আবার যেন উত্থান হচ্ছে, তাও নারী ক্রিকেটের হাত ধরে। আইসিসি র্যাংকিংয়ে পুরুষ দল আছে ৭৫ নম্বরে। আর মেয়েদের অবস্থান ১৩তম। পুরুষ দল ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। নারী এশিয়া কাপ খেলা এবং পাকিস্তানের মতো দলকে হারানো তাদের জন্য অনেক বড় বিষয়। দুই জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করা পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে আগের দুই ম্যাচে হারা থাইল্যান্ড।
চাইওয়াইয়ের কথায় স্পষ্ট তারা ক্রিকেট খেলেন নিছক আনন্দের জন্য। মজায় মজায় খেলতে খেলতে তারা সাফল্যের দেখাও পাচ্ছেন। যদিও তা কদাচিৎ। অনুশীলনেও তাদের এমন হাসিখুশি দেখা যায় সব সময়ই। সাফল্যে ধারবাহিকতা না থাকলেও দলটি এশিয়ার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী দল।
আইসিসিসির সহযোগী ক্রিকেট দেশগুলোতে দেখা যায় জন্মসূত্রে অনেক ক্রিকেটারই ভিনদেশী। তবে থাই ক্রিকেটারদের প্রত্যেকেরই জন্ম থাইল্যান্ডে। ছোট গড়নের এই মেয়েরাই দেশটির ক্রিকেটের বড় পরিচয় হয়ে উঠছেন।
পাকিস্তানকে হারানোর ম্যাচসেরা ক্রিকেটার নাত্তাকান চান্থাম আবার বড় তারকা। দুইবার নারী আইপিএলে খেলেছেন। ধীরে ধীরে আরও চান্থাম পাওয়া যাবে এই দলে। এই দেশে ক্রিকেটের পুনর্জন্ম কীভাবে হলো?
থাইল্যান্ড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান রবি সেহগল আইসিসি ওয়েবসাইটকে বলেন, ‘আমি একবার একটা কলেজে মেয়েদের খেলা দেখতে গিয়ে দেখি, অনেক মেয়ে সফটবল খেলছে। তখন আমার মনে হলো, সফটবলের তেমন কোনও ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু এখানে যারা আছে, তারা ভালো অ্যাথলেট। এদের কেন আমি ক্রিকেট শিখিয়ে ক্রিকেটার বানাচ্ছি না! এরপর তো খুব দ্রুতই সব বদলে গেলো।’
সেহগলের বদলে দেওয়ার গল্প আসলেই সত্য। একসময় তিনটি রাজ্যে ক্রিকেট হওয়া দেশটিতে এখন ১৪টিতে রাজ্যে চলছে মেয়েদের ক্রিকেট।
এদিকে থাই ক্রিকেটের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার শান কাদের যেমন বলছিলেন, ‘আমরা খুব দ্রুত কিছু করে দেখানোর চেষ্টা করিনি। ধীরে ধীরে ক্রিকেটারের সংখ্যা বেড়েছে। লক্ষ্য ছিল, যদি স্থানীয় লোকজন ক্রিকেটটাকে গ্রহণ করে, তবেই থাইল্যান্ডে ক্রিকেট সফল হবে। সেই ফল আমরা এখন পাচ্ছি।’
পাকিস্তানকে হারানোর পর নিশ্চয় সেহগল-শানরা এখন মুচকি হাসছেন। নিছক আনন্দ-মজা-উপভোগের জন্য খেলা থেকে যদি এমন সাফল্য আসে তাহলে মন্দ কী!