মধ্যপ্রাচ্যে এর আগে কখনো ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়নি। ফিফার অঙ্গীকার ছিল ২০৩০ সালের আগে মেজর একটি টুর্নামেন্ট মধ্যপ্রাচ্যে আয়োজিত হবে। সে অনুযায়ী নানা প্রতিকূলতা আর প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে কাতার প্রথমবারের মতো আয়োজক হয় বিশ্বকাপের।
শুধু কি তাই! ১৯৩০ থেকে ২০১৮; আগের বিশ্বকাপের ২১টি আসরই আয়োজিত হয়েছিল গ্রীষ্মকালে। অর্থাৎ মে থেকে জুলাই- এর মধ্যে। কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের ৮৮ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম হতে যাচ্ছে শীতকালে বিশ্বকাপ। যেটা হতে যাচ্ছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে।
অবশ্য বহু বছরের পুরনো রীতি ভেঙে গ্রীষ্মকালীন বিশ্বকাপ শীতকালে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াটা এতোটা সহজ ছিল না। ২০১৫ সালে ফিফার তৎকালীন সভাপতি সেপ ব্লাটার যখন ঘোষণা দেন যে, এবারের বিশ্বকাপ হবে শীতকালে, তখন গোটা ফুটবল বিশ্বই আশ্চর্য হয়েছিল। হওয়ার অবশ্য সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু কারণও ছিল। সেটার পথ ধরে এসেছিল নানামুখী বিরোধিতা, আলোচনা, সমালোচনা।
সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করা হয়েছিল ইউরোপ থেকে। শীতকালে বিশ্বকাপ মানেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ তথা ইউরোপিয়ান লিগে লম্বা একটি ছেদ পড়বে। ছেদ পড়বে তুমুল জনপ্রিয় উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগেও। তাতে করে তাদের বিরাট আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। সম্প্রচার স্বত্ত্ব থেকে শুরু করে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করা স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলোকে লোকসান গুণতে হবে।
তাইতো বারুদন্মুখ বিরোধিতার মুখে পড়ে ফিফার শীতকালে বিশ্বকাপ আয়োজনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। শেষ পর্যন্ত গ্রেটেস্ট শো-অন আর্থ খ্যাত বিশ্বকাপ আর খেলোয়াড়দের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে বিরোধিতার পথ থেকে একে একে সকলেই সরে দাঁড়ায়। এর পেছনে অবশ্য ভৌগলিক কারণই মূখ্য ছিল। কারণ, উত্তর গোলার্ধে জুন-জুলাই মাসে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় গ্রীষ্মকালে। কিন্তু কাতারে এই জুন-জুলাই মাসে অসহনীয় গরম পড়ে। তাপমাত্রা বেড়ে হয় প্রায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন মারাত্মক গরমের মধ্যে কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজিত হলে খেলোয়াড়, দর্শক, কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কারও পক্ষেই খেলা উপভোগ করা সহজ হতো না।
তাছাড়া ফিফা ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দুটি ফিজিবিলিটি স্টাডি করে বোঝার চেষ্টা করে যে জুন-জুলাই মাসে কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন করা যাবে কিনা। কিন্তু তাদের সেই স্টাডিতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে আসে যে জুন-জুলাই স্লটে বিশ্বকাপ আয়োজন সম্ভব নয়। এছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণে জুন-জুলাইয়ে কাতারের ঘরোয়া ফুটবলও হয় না। তাদের লিগ চলে সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত।
বৃষ্টি-কাদার মধ্যে জলে-ঝোলে একাকার হয়ে ফুটবল খেলা গেলেও অসহনীয় গরম পরিবেশে না ভালো ফুটবল খেলা সম্ভব, না ফুটবল উপভোগ করা সম্ভব। সে কারণেই কাতার বিশ্বকাপ জুন-জুলাই থেকে পিছিয়ে নভেম্বর-ডিসেম্বর অর্থাৎ শীতকালে আয়োজনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
তাইতো ফুটবল ইতিহাসে এই প্রথম শীতের রাতে বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াইয়ে ঘাম ঝরাবেন ফুটবল বিশ্বের মহাতারকারা। আর চোখ ধাঁধানো নান্দনিক সব স্টেডিয়ামে বসে বিশ্বকাপের ধুন্ধুমার খেলা উপভোগ করবেন মিলিয়ন মিলিয়ন দর্শকরা।