আর্জেন্টিনার ভিক্টরি প্যারেডে হট্টগোল হয়েছে। হয়েছে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ। এই ঘটনায় দুইজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সংর্ঘষের ঘটনায় ৮ পুলিশ সদস্যসহ ৩১ আহত হয়েছেন। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৩ জন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ধাক্কা-ধাক্কি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একটা পর্যায়ে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়লে নেভি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মেসিদের ছাদখোলা বাস থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। ভিক্টরি প্যারেড ওবেলিস্ক স্মৃতিস্তম্ভে যাওয়ার আগে সেখানেই শেষ হয়।
বিশ্বকাপ জিতে স্থানীয় সময় সোমবার গভীর রাতে আর্জেন্টিনায় পৌঁছায় মেসিরা। তাদের একনজর দেখতে ইজাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে লাখ লাখ লোক জড়ো হয়। বিমানবন্দর থেকে মেসিদের ছাদখোলা বাসে করে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) হেডকোয়ার্টার্সের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
তাদের বহনকারী ছাদখোলা বাসের চারদিকে তখন জনসমুদ্র। তারা নেচে-গেয়ে অভিবাদন জানাতে থাকেন বিশ্বকাপ জয়ী বীরদের। বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্যরাও তাদের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করেন নেচে-গেয়ে। জনসমুদ্রের মধ্যে সংকীর্ণ একটি পথ তৈরি করে গানের তালে তালে কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে যায় বিশ্বকাপ জয়ীদের বহনকারী ছাদখোলা বাস। অবশ্য জনতার চাপ সামাল দিতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। বিমানবন্দর থেকে খেলোয়াড়রা যান আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) হেড কোয়ার্টারে। সেখানেই তারা বাকিটা সময় বিশ্রাম নেন।
এরপর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় বুধবার) সকালে আবার ছাদখোলা বাসে শুরু হয় ‘ভিক্টরি প্যারেড’। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই প্যারেডে অংশ নেয় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। প্রতিটি রাস্তায় তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। রাস্তার পাশের বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠে মেসি-ডি মারিয়াদের স্পর্শ করার চেষ্টা করেন অনেকে। তাদের বাসে ওঠারও চেষ্টা করেন।
রাস্তার ফ্লাইওভারগুলোতেও ছিল জনতার ঢল। মেসিদের বহনকারী ছাদখোলা বাস যখন ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাচ্ছিল তখন কয়েকজন বাসের মধ্যে লাফিয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে একজন পড়ে যান বাইরে। এরপর থেকে শুরু হয় হট্টগোল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে পুলিশ। তাতে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। একটা পর্যায়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। তখন মেসিদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নেভি হেলিকপ্টার ডাকা হয়। আর সেই হেলিকপ্টার দিয়ে ছাদখোলা বাস থেকে মেসি-ডি মারিয়া-মার্তিনেজদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় এএফএ হেডকোয়ার্টার্সে।
হট্টগোলের ঘটনায় দুইজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আরেকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মারা যাওয়া ব্যক্তির বয়স ২৪ বছর। মাথার ইনজুরিতে তিনি ফার্নান্দেজ হাসপাতালে মারা যান। পুলিশ জানিয়েছে, প্লাজা সান মার্টিন এলাকায় উদযাপনের সময় পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর মাথায় মার্বেল পাথরের টাইলস ভেঙে পড়ে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে সে আইসিইউতে রয়েছে।
অন্যদিকে উদযাপনে অংশ নিতে মোটর সাইকেলে করে আসার সময় গলায় পতাকা পেঁচিয়ে মারা যান আরও একজন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। জনতার আক্রমণের মুখে একদল পুলিশকে শেইল্ডের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ওবেলিস্ক স্মৃতিস্তম্ভের ২৩৫ ফুট উপর থেকে কয়েকজনকে উদ্ধার করে।
এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ওপরও হামলা করে। তাদের মধ্যে জার্মানির এআরডি’র দক্ষিণ আমেরিকা প্রতিনিধি ম্যাথিয়াস এইবার্ট রয়েছেন। তিনি লাইভে থাকাকালিন একজন সমর্থক এসে তার মাথায় রেপ্লিকা ট্রফি দিয়ে আঘাত করেন। পরিস্থিতি এতোটাই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছিল যে তিনি বলছিলেন, ‘উদযাপন স্থলে জাহান্নাম নেমে এসেছে।’