রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বল ছেড়ে যেন স্বস্তি পেলেন জাকির হাসান। দিনের শেষ বলে উইকেট টিকিয়ে রাখার আনন্দ চোখে মুখে স্পষ্ট হচ্ছিল। অপরপ্রান্তে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তও হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। কৃত্রিম আলোয় ৬ ওভার ব্যাটিংয়ে খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। পানি চেয়ে, ব্যাট পরিবর্তন করে সময় নষ্ট করেছেন। তাতে ক্ষিপ্ত হয়েছেন লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি। আম্পায়ারও তাদের দিয়েছেন তাড়া। কিন্তু নিজেদের পরিকল্পনায় সফল হয়ে দিন শেষে আনন্দ নিয়েই ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন জাকির-শান্ত জুটি।
দিনের ২ ওভার বাকি থাকতেই আম্পায়াররা খেলার ইতি টানেন। সন্তুষ্ট হতে দেখা যায়নি ভারতের অধিনায়ককে। তাই তো আম্পায়ারের ঘড়ি দেখতেও পিছপা হননি। বাংলাদেশের করা ২২৭ রানের জবাবে ভারতের ইনিংস থামে ৩১৪ রানে। ৮৭ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নেমে কোনও উইকেট না হারিয়ে ৭ রান তুলে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। ৮০ রানে পিছিয়ে থেকে দিন শেষ করলেও পড়ন্ত বিকেলে কোনও উইকেট না হারানোয় স্বস্তির পরশ স্বাগতিক শিবিরে।
শুক্রবার টেস্টের দ্বিতীয় দিনের সকাল ও শেষ সেশনটা ছিল বাংলাদেশের। সকালের সেশনে মাত্র ৬৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। ৩ উইকেটই নেন তাইজুল ইসলাম। রাহুল ও গিলকে এলবিডব্লিউ করানোর পর পুজারাকে শর্ট লেগে মুমিনুলের হাতে তালুবন্দি করান বাঁহাতি স্পিনার। দিনের শুরু থেকেই নিখুঁত লাইন ও লেন্থ মেনে বোলিং করায় তার সাফল্য পেতে সময় লাগেনি। পেসার খালেদ আহমেদও ছিলেন দারুণ। দুয়েকটি বাজে বল করলেও বাকিটা সময় ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পরপরই ভারতীয় শিবিরে আঘাত করেন তাসকিন আহমেদ। দেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে তাসকিন তুলে নেন বিরাট কোহলির মূল্যবান উইকেট। শরীর ঘেঁষা বলে দারুণ সিম ডেলিভারি ছিল। হালকা সুইংও পেয়েছিলেন। বড় কিছুর আশায় থাকা বিরাট সেই বলে ব্যাট সরাতে পারেনি।
৯৪ রানে ৪ উইকেট হারানো ভারত ছিল তখন প্রবল চাপে। কিন্তু ছোট এক ভুলেই সর্বনাশ ডেকে আনে স্বাগতিক দল। ২১ রানে আইয়ারকে জীবন দেওয়াই যেন সবচেয়ে বড় ভুল বাংলাদেশের। নয়তো যে ধারাবাহিকতা নিয়ে তাইজুল, তাসকিনরা বোলিং করেছিলেন তাতে প্রথম ইনিংসে লিড পেলেও অবাক হওয়ার কিছু হতো না। আইয়ার জীবন পাওয়ার পর মারমুখী হয়েছেন। রিশাভ পান্তও পেয়ে যান লাইফলাইন। তাতে দৌড়েছে ভারতের রানের চাকা। পান্ত স্বভাবসুলভ ডাউন দ্য উইকেটে এসে এক হাতে বেশ কয়েকটি ছক্কা উড়িয়েছেন। স্লগ সুইপে বল পাঠিয়েছেন সীমানার বাইরে। আইয়ার জায়গায় দাঁড়িয়েই কাট, পুল, ড্রাইভে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন। দুজনের ১৮২ বলে ১৫৯ রানের জুটি ভারতকে লিড এনে দেন। তবে দুজনের কাউকেই বাংলাদেশ তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগারে পৌঁছাতে দেয়নি।
মিরাজের বলে ৯৩ রানে পান্ত উইকেটের পেছনে সোহানের হাতে ক্যাচ দেন। ৭ চার ও ৫ ছক্কায় সাজান তার ইনিংসটি। আইয়ার ৮৭ রানে সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন। ১০৫ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় শেষ তার ইনিংস। বাংলাদেশ আগের দিন ১৪ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছিল। ভারত শেষ ৫ উইকেট হারায় ৬১ রানে। তাতে ভারতের রান তিনশ পেরিয়েছে।
শুরুর ৩ উইকেট পাওয়া তাইজুল শেষ দিকে নতুন বলে নেন উমেশ যাদবের উইকেট। চট্টগ্রামের পর ঢাকাতেও দ্যুতি ছড়িয়ে ৭৪ রানে ৪ উইকেট পেয়েছেন তিনি। সঙ্গে সাকিবের পকেটেও গেছে ৪ উইকেট। ৭৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬৫০ উইকেটের মাইলফলক পেরিয়ে গেছেন তিনি।
শেষ বিকেলে ৮ ওভার খেলা হওয়ার কথা ছিল। শান্ত ও জাকিরের ওপর ছিল রাজ্যের চাপ। পড়ন্ত বিকেলে একটি উইকেট হারালেই ব্যাকফুটে চলে যেতো বাংলাদেশ। কিন্তু কঠিন সময়টা ভালোভাবে কাটিয়ে দেন তারা। ম্যাচে এখনও ভালো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ। ৮০ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করবে দল। ব্যাটসম্যানরা দ্বিতীয় ইনিংসে বড় কিছু করতে না পারলে ম্যাচটা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও থাকবে।