অন্ধকার পেরিয়ে গেলেই আলোর দিশা পাওয়া যায়। ব্যর্থতার এক-একটি স্তর পেরিয়ে মেলে সাফল্যের সিঁড়ি। ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অজুত-নিযুত সমালোচনা, কন্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে পাওয়া সাফল্য হয় অম্লমধুর। সেই আনন্দের সীমা থাকে না।
সাফল্যমণ্ডিত সেই সোনালী অধ্যায় এখন পার করছেন লিটন দাস। যার ব্যাটে এখন ছুটছে রান ফোয়ারা। ২২ গজে যার আগমণে দেখা যায় দৃষ্টি নন্দন শট, প্রতিপক্ষের বোলারদের নাড়িয়ে দেওয়ার উপাদান, চার-ছক্কার বৃষ্টি। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই এবার দুর্বার গতিতে এগিয়েছেন লিটন। যা আগে পারেনি কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটার। শনিবার ভারতের বিপক্ষে ৭৩ রানের ইনিংস দিয়ে চলতি বছর শেষ করেছেন লিটন।
মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৬ রানের ইনিংস খেলে বছর শুরু হয়েছিল তার। শেষটাও হলো ফিফটিতে রাঙিয়ে। স্বপ্নের মতো কাটানো এ বছরে ১৯২১ রান করেছেন। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৫০ ইনিংসে ৪০.০২ গড়ে তুলেছেন এ রান। যেখানে রয়েছে ৩ সেঞ্চুরি, ১৩ হাফ সেঞ্চুরি। সবশেষ তার কাছাকাছি কেবল যেতে পেরেছিলেন মুশফিকুর রহিম। ২০১৮ সালে ২ সেঞ্চুরি ও ৯ হাফ সেঞ্চুরিতে ১৬৫৭ রান করেছিলেন। এবার লিটন ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে।
শুধু সবাইকে নয়, লিটন ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকেও। এক বছরে লিটন নিজেকে পাল্টে হয়েছেন ব্যাটিং স্তম্ভ। এখন লিটনের ব্যাট হাসলেই হাসে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে ৩৯ ইনিংসে ২৭.১২ গড়ে রান করেছিলেন কেবল ১০৫৮। এবার সেই রানকে নিয়ে গেছেন চূঁড়ায়। ব্যাটিং গড় এক লাফে ৪০.০২। সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরিতেও বিরাট লাফ।
শুধু নিজেদেরই নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ভালো অবস্থানে লিটন। এ বছর রান তোলায় দ্বিতীয় অবস্থানে লিটন। ৪৩ ম্যাচে ৫০ ইনিংসে বাবর আজম করেছেন ২৪২৩ রান। এরপরই লিটনের অবস্থান। তিনে আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৪১ ম্যাচে ৪৭ ইনিংসে রিজওয়ানের রান ১৫৯৮। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শীর্ষে আসা চাট্টেখানি কথা নয়। লিটন নিজের সামর্থ্য দেখিয়ে অবস্থান করে নিয়েছেন।
সামনেও পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ছুটতে চান অবিরত, ‘কোনো জায়গা নিলে ওটা ধরে রাখা খুব চ্যালেঞ্জিং। আমার জন্য ভালো। ভগবান আমাকে এই সুযোগটা দিয়েছে। ২০২২ আমি আমার করতে পেরেছি, কৃতজ্ঞ। চেষ্টা করব সেরাটা দিয়ে যেন ২০২৩ শুরু ও শেষ করতে পারি।’
গত বছর রান পাননি বলে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। কড়া সমালোচনা হয়েছিল। লিটন যত রান করবে তত শতাংশ ছাড় দেওয়ার মতো বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়েছিল। কঠিন ও বিরুদ্ধ সেসব সময় পেরিয়ে ভালো অবস্থানে আসায় লিটনের মুখে চড়া হাসি, ‘সমালোচনা হবেই। নামের পেছনে ট্যাগ থাকলে মানুষ বাহবাও দিবে, খারাপও বলবে। এটা নিয়ে আমি চিন্তিত না। আমি অবশ্যই চেষ্টা করব জায়গা ধরে রাখার জন্য, তবে এটা অনেক কঠিন। প্রতি বছরই আপনি ঐ পর্যায়ে যেতে পারবেন না। আমি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করব সফল হওয়ার।’
লিটন উদাহরণ দিয়েছেন চলমান ভারত সিরিজের দুই ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের। টেস্ট সিরিজে রান পাননি দুই ব্যাটসম্যানই। তাতে তাদের মান একটুও কমেনি সেই কথাও ফুটল তার কণ্ঠে, ‘আমাদের দলে ভালো ব্যাটসম্যান আছে। তারাও রোজ রান করেন না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিদিন কেউ ভালো করবে না। একদিন কোহলি ভালো করবে একদিন ঋষভ। এটাই ক্রিকেট।’