খেলাধুলা

‘অন‌্যরা যেগুলো মিস করে না, আমরা সেগুলো করছি’

তুলনা সাকিব আল হাসানের অপছন্দীয় কাজের একটি। দল জিতুক কিংবা হারুক, অমুক-তমুকের সঙ্গে তুলনা পছন্দ করেন না সাকিব আল হাসান। পছন্দ করেন না বলে নিজেকে, নিজের দলকে নিয়ে সব সময়ই গর্ব খুঁজে পান। যেমনটা ঢাকা টেস্টের পর পেয়েছেন। 

ভারতীয় সাংবাদিককের প্রশ্ন ছিল, রিশাভ পান্তের উইকেট নেওয়ার পর বাংলাদেশ কি নির্ভার হয়ে গিয়েছিল? সাকিবের সরাসরি উত্তর, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি।’ শেষ পর্যন্ত বলতে পান্তের পর অক্ষরকেই কেবল আউট করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এদিন জয়ের জন‌্য ৬ উইকেট দরকার ছিল। নিতে পেরেছে কেবল ৩টি।

তাতেও সাকিব নিজের দলকে নিয়ে গর্ব খুঁজে পাচ্ছেন, ‘আমার মনে হয় আমরা সব দিক থেকেই চেষ্টা করেছি। হয়তো আরেকটু ভালো বল করতে পারতাম, আরও কিছু সুযোগ হয়তো তৈরি করতে পারতাম… যে ধরনের উইকেটে খেলা হচ্ছিল, এখানে হয়তো আরও একটি-দুটি সুযোগ তৈরি করা উচিত ছিল। তবে আমি খুবই খুশি, যেভাবে আমরা পুরো টেস্ট ম্যাচে লড়াই করেছি।’ 

খুব কাছে গিয়ে আরেকটি স্বপ্নভঙ্গ। ভারতকে টেস্টে হারানোর মতো সুযোগ সাকিবরা খুব একটা পায়নি কখনও। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে খুব কাছে গিয়ে জয় হাতছাড়া হয়েছে। আবার জিতেছেও। কিন্তু সাদা পোশাকের গল্পগুলো সব সময়ই আক্ষেপের। সাকিবের সেই তালিকাটা আরেকটু লম্বা হলো, ‘৭৫ রানে ৭ উইকেট ফেলে দেওয়ার পর তো আশা করবেন যে আপনার দল জিতবে। বিশেষ করে যখন আরও ৮০ রান দরকার, কেবল তিন উইকেট আছে। বলাটা কঠিন যে কী হলে কী হতে পারতো। কাছে গিয়ে জিততে না পারার আফসোস আছে। তবে এটাও ভালো যে অন্তত আমরা কাছে যেতে পারছি এখন। আশা করি, পরের বছর থেকে ভালো ফল দেখাতে পারবো।’ 

বোলারদের তৈরি করা সুযোগ ফিল্ডাররা হাতছাড়া করায় সাকিব হতাশ। প্রথম ইনিংসে মাত্র ২১ রানে শ্রেয়াষ আইয়ারের স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন সোহান। এর আগে ১৫ রানে ক‌্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। পান্ত আউট হতে পারতেন ১১ রানে। অথচ দুজই ফিফটি তুলে দলের রান নিয়ে গেছেন তিনশর চূড়ায়। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের থেকে ম‌্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ৪২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। অথচ ১ রানে মুমিনুলের হাতে জীবন পেয়ে যান স্পিন অলরাউন্ডার। 

এসব সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় হতাশ সাকিব, ‘একটু তো হতাশার। কারণ এগুলোই হয়তো অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ওদের হয়তো প্রথম ইনিংসে রান ৩১৪ না হয়ে ২৫০ হতে পারতো। দ্বিতীয় ইনিংসেও অবশ্যই সুযোগ ছিল। এসব ক্রিকেটের অংশ, তবে হতাশানজক যে অন্য দলগুলো এসব মিস করে না, আমরা যেগুলো করি।’ 

দ্রুত এসব সমস‌্যা সমাধান চান সাকিব, ‘আমার মনে হয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা ভালো ফিল্ডিং করেছি। বেশ ভালো করেছি। ওয়ানডে সিরিজেও (ভারতের বিপক্ষে) ভালো করেছি। টেস্ট ম্যাচে আমরা ওইভাবে ভালো করতে পারিনি। হতে পারে মনোযোগের ঘাটতি, কে জানে, হতে পারে ফিটনেসের ঘাটতি বা অন্য কিছুও হতে পারে। তবে এসব খুঁজে বের করতে হবে যে কীভাবে আমরা আরও বড় সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতে পারি এবং ভুলগুলো না করি।’ 

‘আমি নিশ্চিত, অন্য কোনও দলই এতগুলো সুযোগ দিতো না, যতটা সুযোগ আমরা দেই। অনেক ক্ষেত্রে আছে, খুবই নিয়মিত জিনিসগুলো আমরা মিস করে ফেলি, যেটা অন্য দেশগুলো করে না। এই জায়গায় উন্নতি করতে পারলে অন্য জায়গাগুলোতে স্কিলের জায়গায় ব্যাটিং ও বোলিংয়ের দিক থেকে আমাদের খুব বেশি পার্থক্য নেই।’– বলেছেন সাকিব। 

ফিল্ডিং ঠিকঠাক হলে বোলারদের ওপরও চাপ কমে আসবে বলে বিশ্বাস করেন সাকিব, ‘এই জিনিসগুলোই (ক্যাচ মিস) আমাদের জন্য পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। আমাদের বোলারদের হয়তো ১৩-১৪টি সুযোগ তৈরি করতে হয় ১০ উইকেট নিতে, অন্যদের ক্ষেত্রে যেটা হয়তো অনেক সময় ৯টা সুযোগ তৈরি করলেই ১০টা হয়ে যায়।’