কাক ডাকা ভোরে আসল বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় দিন। দিনের আলো ফোটার আগেই মহানন্দ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। যে আনন্দ আগুনের স্ফূলিঙ্গ হয়ে ভেসে বেড়ায় ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রাণের মনের আয়নায়। নিউ জিল্যান্ড দূর্গ জয় যে ততক্ষণে হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই হাজার বাইশ শুরু হয়েছিল ঠিক এভাবেই। মাউন্ট মঙ্গানুইতে মুমিনুল হক, ইবাদত হোসেনদের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ জিতে যায় টেস্ট। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে বছর শুরু হয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে জয়ের সেই ক্যানভাস বিবর্ণ হয়েছে। আবার অধরা সাফল্যও এসেছে। কিন্তু প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মূল্যায়ন শেষে যা দাঁড়াচ্ছে তা হল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে বাংলাদেশের পথচলা সুখকর ছিল না।
সাদা পোশাকে নিউ জিল্যান্ড দেয়াল ভেঙে বাংলাদেশ যেমন ইতিহাস তৈরি করেছিল, রঙিণেও করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। তামিম ইকবালের বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে। যা এ বছর বাংলাদেশের সাফল্যের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু জিম্বাবুয়ে সফরে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হার ব্যর্থতার চিহ্ন এঁকে দেয়।
তবুও অন্য দুই ফরম্যাটের তুলনায় নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যের পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে ভালো অবস্থানেই আছে বাংলাদেশ। পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজের চারটিই জিতেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানকে ২-১ ব্যবধানে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে একই ব্যবধানে জয়। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটশ করার তৃপ্তি। জিম্বাবুয়েতে সিকান্দার রাজার অবিস্মরনীয় পারফরম্যান্সে বাংলাদেশকে হতভাগ করে দেয়। জিতে নেয় সিরিজ। আর বছরের শেষটা বাংলাদেশ রাঙিয়েছে ভারতকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে।
১৫ ম্যাচে ১০ জয় ও ৫ হারের এই পরিসংখ্যান তুলনামূলক স্বস্তির। কারণ ১০ টেস্টে এক জয়, ৮ হার এবং ২১ টি-টোয়েন্টি মাত্র ৬ জয় বাংলাদেশকে নিয়ে খুব বড় আশা দেখাচ্ছে না। হিসেবের খাতায়, জয়ের থেকে পরাজয়ের পাল্লা ভারী হওয়ায় বলে দেয়, বড় সাফল্য থাকলেও বছরটা ভালো যায়নি বাংলাদেশের।
এ বছর টেস্টে যে সাফল্য দিয়ে শুরু হয়েছিল তা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। তাইতো টেকেনি টেস্টের অধিনায়ক মুমিনুল হক। দলের পারফরম্যান্স হতশ্রী, নিজের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই। দুয়ে মিলিয়ে মুমিনুল পরে যান বাতিলের খাতায়। অধিনায়কত্ব হারানোর পর দল থেকেও ছাঁটাই।
নিউ জিল্যান্ডের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট হার। সঙ্গে যোগ হয় দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ হারের ক্ষত। বছরের শেষটা রাঙাতে গিয়েও পারেনি বাংলাদেশ। ঢাকায় ভারতকে প্রায় মাটিতে নামিয়ে এনেছিলেন সাকিব, মিরাজ, তাইজুলরা। কিন্তু পেশাদার ভারত পূর্ণ পেশাদারিত্ব দেখিয়ে জিতে নেয় ম্যাচ, হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ।
টেস্টের মতোই টি-টোয়েন্টির চিত্র। ওয়ানডের পর জিম্বাবুয়েতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জেতা ছাড়া বড় দলকে হারাতে পারেনি। তবুও এটাই যে বড় সাফল্য। বছর শুরু হয়েছিল আফগানিস্তানের সঙ্গে ১-১ এ সিরিজ ড্র করে। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হার। এশিয়া কাপে পারফরম্যান্সের ছিল না ধারাবাহিকতা। আফগানিস্তানের কাছে বড় হারের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে যায় রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ। ফলাফল গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুই ম্যাচ জয় আদতে কোনো কাজেই আসেনি। বাংলাদেশ জিততে পারেনি নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ।
বছরটা এভাবেই কেটেছে বাংলাদেশের। সাফল্য এসেছে কালেভাদ্রে। ব্যর্থতার ডুবে ছিল দল। উত্থান-পতনের এই বছর ভুলে সামনে ভালো সময় আসুক, দুই হাজার তেইশ আনন্দযাত্রায় কাটুক এমনটাই চাওয়া ক্রিকেটপ্রেমিদের।