২০০৮ সাল, লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর তারকা হওয়ার সূচনালগ্ন। প্রথমবার মুখোমুখি দুজন। তখনও ফুটবল আকাশের জ্বলজ্বলে নক্ষত্র হয়ে ওঠেননি তারা। পেরিয়ে গেছে ১৪ বছর, এখন তাদের লড়াই মানেই উত্তেজনার পারদ আকাশছোঁয়া। মাঠের বাইরেও আলোচনার কেন্দ্রে থাকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কিন্তু তাদের মাঠের ভেতরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেই ঝাঁজ বাড়িয়ে দেয় আরো। এই যেমন প্রীতি ম্যাচ হলেও সৌদি আরবে ফুটবলপ্রেমের বিস্ফোরণ দেখা গেলো দুই তারকার মুখোমুখি হওয়াকে ঘিরে। এই দিনটি দেখার জন্য বসে থাকতে হয়েছে দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় পর।
অথচ ২০০৯ সালে রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার পর হরহামেশাই দেখা হতো মেসির সঙ্গে। ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবল মিলিয়ে ৩৫ বার মাঠে লড়েছেন তারা। শাসন করেছেন ফুটবল বিশ্বকে। পুরস্কার পাওয়া, রেকর্ড ভাঙা মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো অদলবদল করেছেন। সবশেষ রিয়াদে দেখা হয়ে গেলো তাদের। সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসের রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচের আয়োজন করে ফেলে। প্রীতি ম্যাচ হলেও আঁচটা বিশ্বকাপ ফুটবলের চেয়ে কোনো অংশে কি কম ছিল?
এই দিনটির আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্বে দেখা হয়েছিল বার্সার মেসির ও জুভেন্টাসের রোনালদোর। ওই ম্যাচে সিআরসেভেন করেন জোড়া গোল, ৩-০ তে জেতে ওল্ড লেডিরা। এরপর দুজনের গন্তব্য বদল, ইউরোপেই ছিলেন তারা। মেসি চলে যান পিএসজিতে, রোনালদো ফেরেন ম্যানইউতে। কিন্তু অপেক্ষায় ফুরোয়নি তাদের দুজনকে একই মাঠে দেখার।
অবশেষে আল নাসের ও আল হিলালের সমন্বিত দল অল স্টার একাদশের নেতৃত্ব পেয়ে ‘বড় ম্যাচ’ দিয়ে মেসির সঙ্গে দেখা হলো রোনালদোর। ম্যাচ শুরুর আগেই দুজন সৌজন্যতা বিনিময় করেন হাত মিলিয়ে। এরপর একজন আরেকজনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার ছবি সম্ভবত আইকনিক হয়ে থাকবে।
গোটা ম্যাচে দুজনই দেখান জাদু। আর তা দেখতে ৬৮ হাজার ধারণক্ষমতার কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে ছিল দর্শকের উপচে পড়া উপস্থিতি। দুজনই মাঠ ছাড়েন এক ঘণ্টা পর, ততক্ষণে স্কোর ৪-৩ গোলে এগিয়ে পিএসজি। তার আগে দুই গোল করেন রোনালদো, একটি মেসি। গোলে পর্তুগিজ তারকা এগিয়ে থাকলেও শেষ হাসি ছিল আর্জেন্টাইন তারকার। ৫-৪ গোলে ম্যাচটি জিতেছে পিএসজি।
১২টি ব্যালন ডি’অর ভাগাভাগি করা মেসি ও রোনালদো মাঠে, তাদের কাছ থেকে গোল প্রত্যাশা করা স্বাভাবিক এবং হতাশ করেননি তারা। মরুর বুকে দুই গোট (গ্রেটেস্ট অব অল টাইম) সুবাস ছড়ালেন।
৩৬ ম্যাচের দ্বৈরথে গোলের হিসাবে দুজনই থেকে গেলেন সমানে। মেসির গোল ২৩, রোনালদোরও ২৩। তবে জয়ে ১৭-১১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেন ৩৫ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
রোনালদো ৩৮তম জন্মদিন পালনের পথে। দারুণ ফিটনেস ধরে রেখে হয়তো খেলে যাবেন আরও কয়েক বছর। কিন্তু তিনি তো ইউরোপ ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যে। যে কারণে আরেকটি রোনালদো-মেসি দ্বৈরথের আশা করা বড্ড বাড়াবাড়ি। এই প্রীতি ম্যাচের সৌজন্যেই সম্ভবত তাদের লড়াই দেখার বহুদিনের সাধ পূরণ হলো। সম্ভবত শেষ হলো একটি অধ্যায়েরও?