খেলাধুলা

সাকিবের ভাবনায় ছিল না হোয়াইটওয়াশ

ইনিংসের শেষ বল। ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ১৭ রান। হাসান মাহমুদের ফুল টস ক্রিস ওকসের প্যাডে আঘাত করে। রান নিতে গিয়েও আর নেননি ওকস। ১৬ রানে জিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ করেছে বাংলাদেশ।

গ্যালারিতে গগণ বিদারি গর্জন। সাকিব তখন লং অনে ফিল্ডিংয়ে। জয় নিশ্চিতের পর বাহাত মুষ্টিবদ্ধ করে শূণ্যে ছুঁড়ে হালকা উদযাপন অধিনায়কের। লং অফ থেকে শান্ত দৌড়ে জড়িয়ে ধরেন বোলার হাসান মাহমুদকে। মিড উইকেট থেকে তৌহিদ হৃদয়ও ক্রিজের কাছে গিয়ে পেসারকে অভিনন্দন জানান। ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশের উদযাপন ছিল এতোটুকুই। এরপর প্রতিপক্ষ ক্রিকেটার সঙ্গে হাত মেলানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।

এটি হচ্ছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষের চিত্র। আর সিরিজের শুরুতে টি-টোয়েন্টির সদ্য চ্যাম্পিয়নদের মাঠে নামার আগে ভাবনা কেমন ছিল? হোয়াইটওয়াশ করার পর শুরুর ভাবনা শুনুন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কণ্ঠেই, ‘না। ওইভাবে ছিল না (হোয়াইট ওয়াশ নিয়ে ভাবনা)। আমরা সিরিজ শুরুর আগে আসলে চিন্তাও করিনি ম্যাচ জিততে হবে বা অন্য কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি।’

ক্রিকেটে বাংলাদেশের শক্তির জায়গা একদিনের ক্রিকেট। সাদা বলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে চিত্র উল্টোটা। ওয়ানডেতে মিরপুরে টানা দুই ম্যাচে হেরে সিরিজ খোয়ানোর পর টি-টোয়েন্টিতে জয়ের ভাবনাই ছিল যেন আকাশ কুসুম কল্পনা। তবে পাশার দান বদলে যায় চট্টগ্রামে। তৃতীয় ওয়ানডেতে জিতে বাংলাদেশ হোয়াইট ওয়াশ এড়ায়। টি-টোয়েন্টি দলে যোগ দেন এক ঝাঁক তরুণ। এরপর যেন শরীরি ভাষা বদলে যায় গোটা দলের। সঙ্গে অধিনায়ক সাকিবের ম্যাজিক তো ছিলই।

টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগের দিন অনুশীলনে চাঙ্গা বাংলাদেশ। পরদিন মাঠেও দেখা গেলো তাই। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে হারালো ৬ উইকেটে। বাংলাদেশ পেয়ে যায় ছন্দ। সেটি ধরে রেখে ঢাকায় এসে ৪ উইকেটের জয়। দুই দলের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সিরিজেই বাজিমাত। মঙ্গলবার শেষ ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিংয়ে দারুণ পারফরম্যান্স করে ধবলধোলাইয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ।

ব্যাটিং, বোলিংয়ের সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে উন্নতি হওয়ায় খুশি সাকিব, ‘তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার। আমার মনে হয় তিনটা ম্যাচেই আমরা অসাধারণ ফিল্ডিং করেছি। টি-টোয়েন্টিতে ২, ৪, ১০, ১৫ রানে পার্থক্য গড়ে দেয়। ওই জায়গাটাতে আমরা অনেক উন্নতি করেছি।’

ব্যাট হাতে নাজমুল হোসেন শান্ত অসাধারণ কাটিয়েছেন (তিন ম্যাচে ১১৪), অফ ফর্মে থাকা লিটন দাস শেষ ম্যাচে খেলেন ক্যারিয়ার সেরা ৭২ রানের ইনিংস। এ ছাড়া বড় স্কোর না করলেও ছোট-ছোট অবদন রেখেছেন ব্যাট হাতে। অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয় ও ৮ বছর পর ফেরা রনি তালুকদাররা বড় স্কোর না করলেও তাদের অ্যাপ্রোচ ছিল আগ্রাসী। সেটি দারুণ অবদান রেখেছে দলের জয়ে। বল হাতে তিন পেসার তাসকিন আহমেদ-মোস্তাফিজুর রহমান-হাসান মাহমুদ ছিলেন অসাধারণ। তাসকিন ৪ ও মোস্তাফিজ-হাসান নেন ৩টি করে উইকেট। এক ম্যাচেই সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন মিরাজ। এ ছাড়া সাকিবের শিকার ৩ উইকেট।

ক্রিকেটারদের এমন পারফরম্যান্সের কারণে বিপিএলকে কৃতিত্ব দিলেন সাকিব। টি-টোয়েন্টি দলে যারা সুযোগ পেয়েছেন তারা বিপিএলেই পারফর্ম করে এসেছেন। সেখানে ভালো করায় এখানে কাজ করা সহজ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন সাকিব, ‘এই সিরিজে যারা খেলছে প্রতিটা খেলোয়াড় বিপিএলে পারফর্ম করেছে। ওই পারফরম্যান্সটা টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ হওয়ার পর পর খুব একটা গ্যাপ যায়নি। সেটা একটা বড় বিষয়। এখানে যারা টপ ৫, ৬ এ পারফর্ম করেছে তারা বিপিএলেও পারফর্ম করেছে। যারা সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক তারাও এখানে পারফর্ম করেছে। আত্মবিশ্বাস আসলে থাকে। যেহেতু খুব বেশি একটা গ্যাপ ছিল না, আমরা খেলার মধ্যে ছিলাম, ওইটা আসলে আমাদের সাহায্য করেছে বলে আমি মনে করি।’