খালেদ মাহমুদ সুজন তাকে আগেই আভাস দিয়ে রেখেছিলেন, খুলতে পারে জাতীয় দলের দরজা। ঢাকা লিগে প্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের বিপক্ষে যখন জাকের আলী অনিকের দল আবাহনী লিমিটেড লড়ছে, তখন আসে সেই বহু আরাধিত সুখবর।
মিরপুর শের-ই-বাংলায় বুধবার দুপুরে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ চলাকালীন জাকেরকে রেখে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
খেলার মাঝে ছিলেন, তাই জাকেরের বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশের সুযোগ ছিল না। ডাগআউটে পান টি-টোয়েন্টি দলে থাকার সংবাদ। পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। খেলা শেষেও প্রথমবারের মতো জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলে ডাক পাওয়া জাকেরের শরীরি ভাষায় দেখা গেছে পেশাদারিত্বের ছাপ।
শেষ বিকেলে সাংবাদিকরা যখন জাকেরের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে তখন তিনি এসে জানালেন, ‘দ্রুত শেষ করতে হবে, টিম মিটিং আছে।’
জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় জাকেরের ভাষ্য, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আমি স্বাভাবিকই আছি। অন্যান্য ম্যাচগুলি আমি যেরকম ফোকাস নিয়ে খেলি, একই ফোকাস নিয়ে আমি যাব ইনশাআল্লাহ।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে দারুণ খেলা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের জাতীয় দলে ডাক পাওয়া অনুমিতই ছিল। নুরুল হাসান সোহানের বাজে ফর্ম জাকেরের পথ অনেকটা সুগম হয়ে যায়।
জাকের এই সুযোগকে নিচ্ছেন চ্যালেঞ্জ হিসেবে, ‘প্রতিটি ক্রিকেটারের জন্যই চ্যালেঞ্জিং। অন্যান্য যারা কিপার আছে, তারাও হয়তো এভাবেই দেখেন জিনিসগুলো। অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং, তবে চেষ্টা করব নিজের কাজটা ঠিকঠাক করার। যেমন দায়িত্ব থাকে, ওইটা পালন করার চেষ্টা করব।’
সবশেষ প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) জাকের ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন। তিন সেঞ্চুরিতে ৯৮.৪০ গড়ে আসরের সর্বোচ্চ ৪৯২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ১১ ইনিংসে এক ফিফটিতে করেন ১৭৫ রান। রান সংখ্যায় কম হলেও ১২০ স্ট্রাইকরেটে খেলা জাকেরের ক্যামিও ইনিংসগুলো দলের জন্য দারুণ অবদান রেখেছে।
অভিষেক হলে জাকেরকে নিতে হবে ফিনিশিংয়ের দায়িত্ব। তার ব্যাটিং পজিশনটাই যে এমন। ‘আমি বিপিএলে এরকম জায়গায়ই (শেষ দিকের ওভারে) ব্যাটিং করেছিলাম। তখন আমার ওরকম পরিকল্পনা নিয়ে অনুশীলনের অভিজ্ঞতা আছে। আমি ঘরোয়াতেও আবাহনীর যে অনুশীলন, ওখানেও আমি স্লগের কিছু অনুশীলন করে নিয়েছি। তো এগুলো আমার ব্যক্তিগত কিছু প্রস্তুতি আছে। এরকমভাবেই নিজেকে আমি প্রস্তুত করেছি।’
‘সবচেয়ে বড় কথা, সবশেষ বিপিএলের প্রতিটি ম্যাচ আমি খেলেছি। এর আগের বিপিএলগুলোয় আমি ম্যাচ পাচ্ছিলাম না। ম্যাচ পাওয়ার কারণে আমি বিভিন্ন জায়গায় ব্যাটিং করার সুযোগ পাই। আমি বলব না যে পুরোপুরি ভালো খেলতে পেরেছি। তবে আমি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইনিংস খেলেছি। যেগুলো আমার ক্যারিয়ারের জন্য অনেক ভালো হয়েছে’-আরও যোগ করেন জাকের।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সেই জাকেরের সুযোগ মেলে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নতুনদের বাজিয়ে দেখা হবে। জাকের এটি ভালো করেই জানেন যে, সুযোগ পেলে সবার নজরেই থাকবেন তিনি। শের-ই-বাংলার ড্রেসিংরুমের সামনে দাঁড়িয়ে সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কথাই জানালেন জাকের।
‘উনারা আগেও বলেছেন, ক্রিকেটারদের বাজিয়ে দেখছেন। তো ওই একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আমিও হয়তো পড়েছি। আমাকে প্রমাণ করার জন্যই ওখানে ডাকা হয়েছে। আমি চেষ্টা করব। যেহেতু টি-টোয়েন্টিতে ডাকা হয়েছে, বিপিএলে আমি যে ধরনের দায়িত্ব পালন করেছিলাম, চেষ্টা করব ওই ধরনের ক্যামিও ইনিংসগুলো খেলার’-এভাবেই বলছিলেন তিনি।