তামিম ইকবাল অকপটে স্বীকার করেছিলেন, ‘ওর (মমিনুল হক) কিছু একটা প্রমাণের ছিল, সেটা সে করেছে। আমি জানি কেন সে এটা করেছে।’ কিন্তু, মুমিনুল হকের বুকে পাথর জমে থাকলেও মুখে কথা বের হয়নি। বরং চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে দূরত্বকে ভালো চোখে দেখেছিলেন তিনি। পরে মমিনুল হক গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘মনে হয়, আমার জীবনের জন্য ওই জিনিসটা (হাথুরুসিংহের টেস্ট দল থেকে বাদ দেওয়া) গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আপনারা কিভাবে ভাবেন জানি না। এতে করে আমার মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে।’
হাথুরুসিংহে দায়িত্ব ছাড়ার পর ২০১৮ সালে জানুয়ারিয়াতে শ্রীলঙ্কার কোচ হয়ে বাংলাদেশে আসার পরপরই মুমিনুলের ব্যাট থেকে জোড়া সেঞ্চুরি এসেছিল। শ্রীলঙ্কান ড্রেসিংরুমের দিকে তাক করে লাফিয়ে মুঠোবদ্ধ হাতে বাতাসে ঘুষি মেরেছিলেন। সেই অদৃশ্য ঘুষি কার মুখে গিয়ে পড়েছে, সে কি আর কারও অজানা!
বাংলাদেশ দলের কোচ হওয়ার পর প্রথমে এই শ্রীলঙ্কান অবিষ্কার করেন, মুমিনুল অফস্পিন খেলতে পারেন না। এ কারণে তাকে খেলতে দেননি দেশের শততম টেস্ট। পরবর্তীতে নড়বড়ে করে দেন টেস্টে তার জায়গাও। যাওয়ার আগে চাউর করে যান, শর্ট বোলিংয়ে মুমিনুলের দুর্বলতার কথা। আর মাঝের সময়টায় এমন সব কাণ্ড করেছেন, তাতে মমিনুলের সহজাত আত্মবিশ্বাস তলানিতে। এজন্য টেস্টের পাশাপাশি তার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির দরজাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
১১ সেঞ্চুরি নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে শীর্ষে থাকা মুমিনুল ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ধারাবাহিক হওয়ায় টেস্ট স্পেশালিস্টের তকমা পেয়েছিলেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে করেছিলেন তিন সেঞ্চুরি। হাথুরুসিংহের সাড়ে তিন বছরে করেছেন কেবল একটি। আবার এই কোচের সরে যাওয়ার পর তার ব্যাট থেকে চার বছরে আসে সাত সেঞ্চুরি। মাঝে এক বছরেরও বেশি সময় কোভিডের কারণে খেলা বন্ধ ছিল।
হাথুরুসিংহে লম্বা বিরতি দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আবার ফিরেছেন। তবে, মুমিনুল এবার নেই আগের অবস্থানে। ২০১৯ সালে সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার পর হুট করে পাওয়া অধিনায়কত্ব। এরপর ক্রমেই হারিয়ে যাওয়া। অতঃপর অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো এবং সবশেষে জাতীয় দলে জায়গা হারানো। মুমিনুলের জীবনের ওপর বয়ে যায় প্রলয়ংকারী ঝড়।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলার অপেক্ষায় থাকা এ ক্রিকেটার বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ টেস্টেই দলে ফিরেছিলেন। ভারতের বিপক্ষে গত ডিসেম্বরে একাদশে ফিরে ৮৪ ও ৫ রানের দুটি ইনিংস খেলেন। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দ্বিতীয় টেস্টে দলে জায়গা হারানোর পর ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টেও ছিলেন সাইডবেঞ্চে।
হাথুরুসিংহের দ্বিতীয় আমলে মুমিনুল অধ্যায় পুনরায় শুরু হতে যাচ্ছে। প্রথম অধ্যায়ে মুমিনুলের পায়ের নিজের জমিন শক্ত ছিল। এবার কেবলই পরিসংখ্যান তার পক্ষে। ২২ গজে মুমিনুল পারফর্ম না করলে হাথুরুসিংহে তাকে আবার বাদ দেবেন, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এজন্য পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই।
অনুশীলনে দুজনের শীতল সম্পর্কের চিত্রই ধরা পড়েছে। নেটে মুমিনুলের অনুশীলন গভীরভাবে দেখেছেন হাথুরুসিংহে। কয়েকবারই নেটের পাশে দাঁড়িয়ে দুজনকে কথা বলতেও দেখা গেছে। সামনের সময়টা কঠিন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মুমিনুলের জন্য কী অপেক্ষা করছে তা সময়ই বলে দেবে।
হাথুরুসিংহে ও মুমিনুল দুজনই পেশাদার। পুরনো কথা দুজনের কেউই মনে রাখবেন না বলে বিশ্বাস করেন স্থানীয় কোচ ও বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ‘খেলোয়াড়ের সাথে তো কোচের এই রকম সম্পর্ক হওয়ার কথা না। মমিনুলের জন্য কঠিন সময় হবে কেন? কোচের কাজ হলো, খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করা, যেন ভালো খেলতে পারে। কোচ যদি প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে ওই রকম আচরণ করেন, যেখানে খেলোয়াড়রা ডিমোটিভেট হতে পারে, তাহলে তো কোচ হতে পারেন না। আমার মনে হয় না, এই কোচ সেরকম কিছু করবে। চাইবে মমিনুল ভালো খেলুক।’
পরিসংখ্যানে চোখ বুলানো যাক
হাথুরুসিংহে আসার আগে
২০১৪ সালের মে মাসে হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচ হয়ে আসার আগে ৭ ম্যাচে ৭৫.৫০ গড়ে ৭৫৫ রান নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন মুমিনুল। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের তিন সেঞ্চুরির পাশে ছিল তিন ফিফটি।
হাথুরুসিংহে থাকাকালীন
২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত হাথুরুসিংহের কোচিংয়ে সময়টা মোটেও ভালো কাটেনি মুমিনুলের। ১৮ টেস্টে স্রেফ ৩৩.৯০ গড়ে তিনি করেন কেবল ১০৮৫ রান। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে ছিল নয় ফিফটি।
হাথুরুসিংহে যাওয়ার পর
২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে হাথুরুসিংহে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত মুমিনুল ৩০ ম্যাচে ১৭৭৮ রান করেছেন ৩২.৯৩ গড়ে, যেখানে ৭ সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ৪ ফিফটি। বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরির খরা এ সময়ে কাটিয়েছেন মমিনুল হক।