শঙ্কার মেঘ জমেছিল। ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনে আয়ারল্যান্ড যে নিবেদন দেখিয়েছিল, লড়াই করেছিল তাতে ভয় জেগেছিল। চার বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে অনভিজ্ঞ দলটাই কী চমকে দেবে? সেই শঙ্কার মেঘ কাটিয়ে মসৃণ জয়ে হাসি জোয়ার মিরপুর শের-ই-বাংলায়।
লক্ষ্য আহামরি বড় ছিল না। কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে যে কোনো রান তাড়া করাই বড় চ্যালেঞ্জ। মিরপুরের ২২ গজ প্রায় সময়ই নানা ঘটনা-অঘটনার জন্ম দেয়। গত ডিসেম্বরে এখানে সবশেষ টেস্টে ভারতকে ১৪৫ রানের লক্ষ্য দিয়ে তীব্র লড়াই করে বাংলাদেশ। শেষমেশ ৭ উইকেটে ম্যাচ হারলেও রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল। আজ তেমন রোমাঞ্চের অপেক্ষায় ছিল টেস্টের চতুর্থ দিন।
কিন্তু অভিজ্ঞতার শতভাগ প্রদর্শণীতে কোনো অঘটন ঘটতে দেয়নি বাংলাদেশ। বরং নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে দাপট দেখিয়েছে স্বাগতিকরা। আয়ারল্যান্ডের দেওয়া ১৩৮ রানের চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ জিতে নিয়েছে ৭ উইকেট হাতে রেখে।
প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়া মুশফিক দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন। ওপেনিংয়ে ফেরা লিটন (২৩) ও তিনে নামা শান্ত (৪) আউট হলে কিছুটা চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু প্রতি আক্রমণে গিয়ে মুশফিক যেভাবে রান তুলেছেন তাতে জয় চলে আসে অনায়েসে। স্পিনারদের বিপক্ষে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে সুইপ খেলেছেন। রিভার্স সুইপে পেয়েছেন চার। আবার অন ড্রাইভ, কভার ড্রাইভেও বল পাঠিয়েছেন সীমানায়। তামিমের সঙ্গে ৬২ রানের জুটি গড়ার পথে মুশফিক একাই করেন ৩৮ রান।
তামিম ৩১ রানে বেন হোয়াইটের বলে আলগা শটে মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে বিদায় নিলেও মুশফিক দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। তার ব্যাট থেকেই আসেন উইনিং শট। ৪৮ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৫১ রান করেন চোখের পলকে। টেস্ট ক্রিকেটের দীর্ঘ পথ চলায় এবারই প্রথম এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও ফিফটি পেলেন মুশফিক। তার সঙ্গে অপরাজিত থাকা মুমিনুল হক ২২ বলে করেন ২০ রান।
এর আগে সকালে আয়ারল্যান্ডের শেষ ২ উইকেট নিতে বাংলাদেশের বোলাররা ৯ ওভার হাত ঘুরালেও রান বেশি দেননি। ৩৫ মিনিট ব্যাটিং করে মাত্র ৬ রান যোগ করতে পারেন অতিথিরা। আরাধ্য দুটি উইকেটই নেন পেসার ইবাদত হোসেন।
যদিও সকালে দুই প্রান্ত থেকে সাকিব বোলিংয়ে এনেছিলেন দুই স্পিনার তাইজুল ও মিরাজকে। দুজন দুই ওভার করে বোলিং করার পর পেসার ইবাদত হোসেন আসেন আক্রমণে। তার হাত ধরে দ্বিতীয় বলে মেলে সাফল্য। ফুলারলেন্থ বল লাইনে স্থির রেখে ম্যাকব্রেইনের উইকেট উপড়ে ফেলেন ইবাদত। আগের দিনের ৭১ রানের সঙ্গে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান যোগ করতে পারেন কেবল ১ রান। ৮ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি থেমে যায় সেখানেই।
দ্রুতগতির এ বোলারের সাত সকালের তোপে রানের চাকা থেমেই গিয়েছিল। শেষ ব্যাটসম্যান গ্রাহাম হুম ও বেঞ্জামিন হোয়াইট চেষ্টা করেও বড় কিছু করতে পারেননি। হুম ইবাদতের অফস্টাম্পের বাইরের বলের আলগা শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস থেমে যায় ২৯২ রানে।
ইবাদত জোড়া উইকেটে দলকে সাফল্যে ভাসালেও ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার তাইজুল ইসলাম। ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে বড় প্রভাব রেখেছেন এ বাঁহাতি স্পিনার।
ঘরের মাঠে ৩ বছর পর টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে যা বাংলাদেশের ১৩৭ টেস্টে ১৭তম জয়। মুশফিক পেয়েছেন ষষ্ঠ ম্যাচ সেরার পুরস্কার। যেখানে আগে থেকেই ছিলেন সাকিব আল হাসান।