বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শেষ পর্যায়ে। পুলিশি প্রটোকল নিয়ে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এলেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। উপলক্ষ সিরিজ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলন। ড্রেসিং রুম থেকে জহুর আহমেদের সবুজ গালিচা মাড়িয়ে যখন প্রেস কনফারেন্স কক্ষের দিকে আসছিলেন ধীর পায়ে হেঁটে, তখন তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছেন। ভেতরে ভেঙে-চুরে চুরমার।
সংবাদ সম্মেলনে খুব একটা বুঝতে দেননি, তবে অন্য অনেক দিনের তুলনায় তামিমকে দেখে মনে হয়েছে কিছু একটা চলছে মনের ভেতর। প্রশ্ন শুনেছেন, কথা বলেছেন নিচু স্বরে, শান্তভাবে। তবে বিপত্তি বাঁধে প্রথম প্রশ্নেই।
কোমরের পুরোনো চোটে এর আগে একমাত্র টেস্ট খেলতে পারেননি। তাই প্রথম প্রশ্নই ছিল- শারীরিক অবস্থা কেমন? উত্তরে তামিম জানালেন তিনি ফিট আছেন, তবে শতভাগ নন। ‘আমি অবশ্য কালকের জন্য (প্রথম ওয়ানডে) অ্যাভেইলেবল। শরীরটা আগের চেয়া ভালো। তবে এটা বলবো না পুরোপুরি শতভাগ (ফিট আছে)। কালকে খেলার পর বুঝতে পারবো কি অবস্থা। এখন পর্যন্ত (যেটা) আমি আগামীকাল খেলবো।’
এর আগের দিন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জানিয়েছিলেন, কোমরের চোটে ভোগা তামিমকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ফিট না হলে টিম ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে। প্রধান কোচ বলেছেন, ‘আমি কারও মেডিকেল হিস্ট্রি (ইতিহাস) নিয়ে এখানে আলোচনা করতে যাচ্ছি না। সে (তামিম ইকবাল) দু’দিন অনুশীলন করেছে। এখন পর্যন্ত ভালো। রিকভার করছে কি না অনুশীলনের পর তার অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
কিন্তু তামিম নিজে বলেছেন, তিনি শতভাগ ফিট নন। তবে খেলবেন। কেন ফিট না হয়েও খেলবেন দিয়েছেন সেটির ব্যাখাও। জানান খেলে দেখতে চান নিজের অবস্থা, ‘আমি দেখতে চাই আমি কতটুকু মানিয়ে নিতে পারছি, আর পারছি না। কিন্তু আমি এমন কাজ করবো না যাতে দল ভুক্তভোগী হয়। আমি সবসময় বলি ব্যক্তি খেলোয়াড় থেকে দল সবেচেয়ে আগে। এখন মনে হচ্ছে আমি আগামীকালের জন্য প্রস্তুত। খেলার সময় যদি অনুভব করি, আমি প্রস্তুত না অথবা ঝুঁকি হতে পারে এমন কিছু তাহলে আমি ও মেডিকেল বিভাগ মিলে সিদ্ধান্ত নেব। এখন আমি ফিট আগামীকালের জন্য, দেখা যাক কী হয়।’
একজন খেলোয়াড় এভাবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে নিজের ফিটনেস যাচাই করতে পারেন? তাও এভাবে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে? প্রথম ওয়ানডেতে তামিমের ব্যাট থেকে ১৩ রানের বেশি আসেনি। তবে ফিটনেস ঠিক নেই, এমন কিছুও চোখে পড়েনি ম্যাচে। তবে তামিমের এমন ঘোষণার পর মাঠের খেলার চেয়েও আলোচিত ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় তামিমের ফিটনেস ইস্যু। খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ক্ষিপ্ত হন। সভাপতি জানিয়েছেন, তামিমকেই পরিষ্কার করতে হবে সে কি বলতে চায়।
এখন যেন সেই পথেই হাঁটছেন ওয়ানডে অধিনায়ক। নিজের অবস্থান পরিষ্কার করবেন নিজেই। প্রথম ওয়ানডে শেষে মধ্যরাতে যখন সংবাদকর্মীরা হোটেলে ফেরে, তখনি তামিমের বার্তা। দুপুর দেড়টায় তিনি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর মেলতে থাকে গুঞ্জণের ডাল-পালা। কেউ বলছেন নেতৃত্ব ছাড়ছেন, কেউ বলছেন আরও বড় কিছু। কিন্তু কী, সেটি বোঝা যাবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তামিমের কণ্ঠেই।
তবে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিসিবির এক পরিচালক রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন শতভাগ ফিট না এমন ঘোষণায় নাখোশ বিসিবির নীতি নির্ধারণী মহল। ‘আমাদের মাথায় আসেনি তামিম এভাবে কেন বলেছে। এটাতো একটা ব্যাড এক্সাম্পল হয়ে গেলো। সে অন্যভাবেও এটা উতরাতে পারতো। তবে বিশ্বকাপ পর্যন্ত সে আমাদের অধিনায়ক, এখন পর্যন্ত বিসিবি বিকল্প কিছু ভাবেনি।’