খালেদ মাহমুদ সুজনের হাত ধরেই পেশাদার ক্রিকেটে এসেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার ক্যারিয়ারের অন্যতম মেন্টর হিসেবে কাজ করেছেন। ভালো-খারাপ সব সময়ই মাহমুদউল্লাহর পাশে ছায়া হয়ে ছিলেন। জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার সম্পর্কে সব নখদর্পনে খালেদ মাহমুদের। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এসে খুব কাছের মাহমুদউল্লাহ যখন জাতীয় দলের জন্য বিবেচিত হচ্ছেন না, তাতে খুব অবাক হচ্ছেন না খালেদ মাহমুদ। তার বিশ্বাস, এখনই ‘শেষ’ হয়ে যাচ্ছেন না মাহমুদউল্লাহ।
এশিয়া কাপের ১৭ জনের দলে জায়গা হয়নি মাহমুদউল্লাহর। বিশ্বকাপের দলেও ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জেগেছে, ৩৭ বছর বয়সী ক্রিকেটারের নামের পাশে কী দাঁড়ি পড়ে গেল? খালেদ মাহমুদ মানতে চান না, সহজেই হাল ছেড়ে দেবেন মাহমুদউল্লাহ।
খালেদ মাহমুদের বিশ্বাস, ফেরার লড়াইয়ে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করবেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। বিসিবিতে মঙ্গলবার খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘আমি এখনই বলব না যে, ওর শেষটা দেখছি। এখনও রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) দারুণ লড়াকু। দলের সমন্বয় বা যে কারণেই বাদ পড়ুক না কেন, টিম ম্যানেজমেন্ট বা নির্বাচকরা যদি না নেয়, তাতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই।’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘এটা সত্যি কথা, রিয়াদের বয়সও হচ্ছে। তবে আমি এখনও বিশ্বাস করি, রিয়াদ যেভাবে লড়াই করে, চেষ্টা করে, তাতে শেষ হয়ে গেছে বলাটা ঠিক হবে না। সুযোগ আবার আসতেও পারে এবং আবার খেলবে।’
তার আশা, নিজের যোগ্যতা দিয়ে আবার ফিরবেন মাহমুদউল্লাহ, ‘আমার মনে করি, এখনই রিয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলাটা খুব দ্রুত হয়ে যাবে। আপনি একবার ক্রিকেটার হলে, সবসময়ই ক্রিকেটার। রিয়াদ যতক্ষণ না পর্যন্ত বলছে ও শেষ করছে, ততক্ষন পর্যন্ত পাইপলাইনে সে অবশ্যই থাকবে। রিয়াদ বাংলাদেশে খেলার মতো যোগ্যতা অবশ্যই রাখে।’
তবে বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া চ্যালেঞ্জিং তা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছেন বিসিবির এই পরিচালক, ‘(বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া) চ্যালেঞ্জিং তো অবশ্যই হবে। এটাই সত্যি কথা। কেউ খারাপ খেলুক, রিয়াদ ওখানে জায়গা করে নিক, আমি এটাও বলতে পারি না। আবার এটাও বলতে পারি না কেউ ইনজুরি আক্রান্ত হোক আর রিয়াদ ওখানে খেলুক। রিয়াদের যদি যোগ্যতা থাকে, সে অবশ্যই সুযোগ করে নেবে।’
মাহমুদউল্লাহ সবশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তার ব্যাট থেকে আসে ৩১, ৩২ ও ৮ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যর্থতায় মাহমুদউল্লাহর ওয়ানডে দলের জায়গা যে নড়ে গিয়েছিল তা টের পাওয়া যাচ্ছিল স্পষ্ট। বিতর্ক এড়াতে 'বিশ্রাম' নামক নিরাপদ শব্দের আশ্রয় নিয়ে তাকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে সিরিজে দলের বাইরে রাখেন নির্বাচকরা।
আফগানিস্তান সিরিজে মাহমুদউল্লাহ নিজেকে সরিয়ে নেন হজ পালনের উদ্দেশ্যে। জাতীয় দলে ফেরার চ্যালেঞ্জ নিয়ে গত ১৯ জুলাই থেকে আবার অনুশীলনে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। অনুশীলনে নিজের একটি পুরোনো ছবি ফেসবুকে দিয়ে মাহমুদউল্লাহ লেখেন, ‘চ্যালেঞ্জ ইওর স্টোরি।’
তবে চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। নিজেকে নতুনভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে নামলেও এশিয়া কাপের দল থেকে বাদ পড়ে নিশ্চিতভাবেই ধাক্কা খেয়েছেন। তবে তার প্রস্তুতিতে ঘাটতি চোখে পড়েনি। ফিটনেস যাচাইয়ে ‘ইয়ো ইয়ো’ টেস্টে পেয়েছিলেন ১৭ এর মতো। বয়স বিবেচনায় যে মানদণ্ড ঠিক করা হয়েছিল তাতে পাশ করে গেছেন তিনি।
ব্যাট-বলে স্কিল অনুশীলনেও দেখাচ্ছিলেন মাঠে ফেরার জেদ, লড়াইয়ের তাড়না। বড় কিছুর ক্ষুধা যে এখনও তার রয়েছে তা ঘাম ঝরানো একেকটি সেশন দেখে বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু সেসবের কিছুই কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পরিকল্পনায় আসার মতো যথেষ্ট ছিল না। জাতীয় দলের বাইরে যাওয়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করেননি মাহমুদউল্লাহ।
সামনে ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্যুতি ছড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ আবার কক্ষপথে ফিরবেন বলেই বিশ্বাস খালেদ মাহমুদের, ‘আমার মনে হয়, রিয়াদ ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবে। আমার ক্যারিয়ারে ১০ বার বাদ পড়েছি, ১০ বার (দলে) ঢুকেছি। এটা স্বাভাবিক, বড় ইস্যু বানানোর কিছু নাই। রিয়াদ গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। এবার সুযোগ পায়নি। তার জায়গায় যে সুযোগ পেয়েছে, টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করেছে, তাকে এই মুহূর্তে দলে কাজে লাগবে।’