মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, জাকির হাসানদের বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করতে কোচ সোহেল ইসলাম আলাদা করে কাজ করছেন। টিম ম্যানেজমেন্টের চাওয়াতেই বেঞ্চের ক্রিকেটারদের প্রস্তুত রাখছেন তিনি।
মিরপুর একাডেমি মাঠে নেট বোলারদের সঙ্গে আলাদা করা গেল তরুণকে। ছিমছিমে গড়নের সেই তরুণ নেটে বোলিং করছেন মনের আনন্দে। চায়নাম্যান হওয়াতে তার প্রতি দৃষ্টি আরও বেড়ে গেল। বাংলাদেশের ক্রিকেটে চায়নাম্যান মানে বিরল কিছু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, স্থানীয় কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের ছেলে সানজিদকে নেটে বোলিং করাতে নিজ উদ্যোগে নিয়ে আসেন সোহেল। সাকিব-তামিমদের গুরু হিসেবে বেশ পরিচিতি সালাউদ্দিনের। ব্যাটিং-বোলিংয়ে সমস্যায় পড়লেই শুধু সাকিব-তামিমরা নন, মুমিনুল, সৌম্য, এনামুলরা ছুটে যান তার কাছে। সাকিবের নিজের উদ্যোগে গড়ে তোলা মাস্কো সাকিব ক্রিকেট একাডেমিরও দায়িত্বে আছেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় রয়েছে সালাউদ্দিনের একাধিক শিরোপা। কিন্তু এসব অর্জনে চায়নাম্যান বোলার খুব কাজে আসেনি।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে লেগ স্পিনাররাও খুব উপেক্ষিত। ঘরোয়া ক্রিকেটে তেমন সুযোগ মেলেনা তাদের। এক দুইবার সুযোগ মিললেও সেখানে ভালো করতে না পারলে হারিয়ে যেতে হয় অতলে। সেখানে সানজিদের মতো তরুণকে চায়নাম্যান বানানোর সাহস রীতিমত বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতার কাটার মতো। তবে সালাউদ্দিন আউট অব বক্স চিন্তা করেই ছেলেকে উদ্ধুদ্ধ করেছে চায়নাম্যান বোলার হতে।
ডেইলি ক্রিকেটের- সঙ্গে আলোচনায় প্রিয় শিষ্য সাকিব আল হাসানের উদাহরণ টেনে সালাউদ্দিন ছেলেকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘আমরা বসে ছিলাম। তখন ওকে বললাম, ‘‘বাবা তুমি যদি লেফট আর্ম অর্থডক্স বল করো (সাকিবের মতো) এটাতে তুমি জীবনেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের চেয়ে বড় ক্রিকেটার হতে পারব না। কারণ, এই রেকর্ড তুমি কোনোদিন ভাঙতে পারবা না। তার যেই মেধা, তার বোলিংয়ের যেই সামর্থ্য, যেভাবে খেলাটা সে ভালো বোঝে এটা দিয়ে সাকিবের রেকর্ড ভাঙা যাবে না। আমার মনে হয় তোমার নতুন কিছু করতে হবে। তুমি এটা (চায়নাম্যান) চেষ্টা করে দেখ। যখন একেবারেই ছোট ছিল তখন না, দুই তিন বছর আগে। তখন নিজ থেকেই পরিবর্তন করল। আগে অর্থডক্স বোলারই ছিল। যদি তাকে আলাদা কিছু করতে হয় তাহলে আলাদা কিছু হতে হবে। এই কারণেই তাকে চায়নাম্যান বানানো।’
শুধু নিজের ছেলেকেই নয় তার কাছে কোচিংয়ে আসা তরুণদেরও একই পথ দেখান সালাউদ্দিন, ‘আমি নরম্যালি শুধু আমার ছেলে নয়, যাকেই কোচিং করাই, পরবর্তী ক্রিকেটাররা যেন সাকিব-তামিমের চেয়ে বড় হয়। যে-ই আসুক না কেন আমার কাছে কোচিংয়ে। সে পারুক আর না পারুক তাকে সেই স্বপ্নটা দেওয়া আমার দায়িত্ব। নৈতিক কর্তব্য আমি মনে করি।’
ছেলে সানজিদ কতটুকু পথ যেতে পারবে, কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে সালাউদ্দিন মোটেও চিন্তিত নন। মনের আনন্দে বল হাতে ছুটছে সানজিদ এটাই বাবা সালাউদ্দিনের আনন্দ, ‘আমার ছেলে ক্রিকেট খেলছে সেটাই আমার কাছে আনন্দ লাগে। সে পারে কি না পারে সেটা আপাতত ভাবছি না। সে ক্রিকেট খেলছে, উপভোগ করে, এটার প্রতি প্যাশন আছে তাতেই আমি আনন্দিত। ভালো লাইনে আছে এটা বাবা হিসেবে ভালো লাগে। সে যখন ক্রিকেট বল হাতে নেয় তখন দেখতেই ভালো লাগে। কিছুদিন আগেও ছোট ছিল, এখন ব্যাটিং করে বোলিং করে। তার ভবিষ্যৎ সে পরবর্তীতে নিজে ঠিক করবে। এখন আমি তাকে দেখে আনন্দ পাচ্ছি।’