পজিশন একটা। লড়াইয়ে চারজন। মেহেদী হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন, মাহেদী হাসান ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী। কে খেলবেন জাতীয় দলের ওয়ানডেতে ৭ নম্বর পজিশনে। মোটা দাগে প্রায় নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে, শেষ এক বছরে মেহেদী হাসান মিরাজ যে পারফরম্যান্স করে আসছেন তাতে তারই জায়গাটা পাকাপাকি হয়ে আছে।
কিন্তু কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কাছে এই দলে নির্দিষ্ট পজিশনে কারো জায়গা-ই পাকাপাকি নয়! দলের প্রয়োজনে যে কোনো জায়গায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে খেলতে হবে। নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা তাওহীদ হৃদয় এবং মুশফিকুর রহিমের কথা।
দলের দায়িত্ব নিয়ে দ্বিতীয় সিরিজেই মুশফিককে ছয়ে পাঠিয়ে তাওহীদকে তার পজিশনে ব্যাটিংয়ে পাঠান। দুজনই নিজেদের সেরা ক্রিকেটটা খেলেন। অভিষিক্ত তাওহীদ ৮৫ বলে ৯২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন। মুশফিক বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ৬০ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। ব্যাটিং অর্ডারের সেই কম্বিনেশন এখনও চলছে। দলের সাফল্যের অনুপাতও বেশ ভালো। নিজেদের পজিশনে থিতু হয়েছেন। রানও পাচ্ছেন।
৭ নম্বরের ব্যাটিং পজিশন দলের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটিংয়ে দলের ব্যর্থতার দিনে লেট অর্ডারে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো ব্যাটসম্যানের দরকার হয়। মিরাজ সেই আস্থা অর্জন করেছেন বেশ ভালোভাবেই। গত বছরের শেষ দিকে ভারতের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে নিজের সামর্থ্য মেলে ধরেন। সঙ্গে তার বোলিং যোগ করেছে নতুন মাত্রা। বল হাতে সাকিবের ব্যাকআপ হিসেবে বেশ সফল এই অফস্পিনার।
তবে তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে নিশ্চিতভাবে প্রস্তুত আফিফ, মাহেদী, শামীম। মাহেদীও মিরাজের মতো অফস্পিন অলরাউন্ডার। আফিফও পারেন হাত ঘোরাতে। শামীমও তাই। শুধু ব্যাটিং কিংবা বোলিং নয়, ফিল্ডিংয়েও তাদের মধ্যে প্রবল লড়াই হবে। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে তারা পরীক্ষিত। প্রত্যেকেই ক্ষীপ্র। শেষ পর্যন্ত কম্বিনেশনে কে টিকে যান সেটাই দেখার।
আর কম্বিনেশন কেমন হবে তা নির্ভর করবে উইকেট, কন্ডিশন, প্রতিপক্ষ পরিস্থিতি এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী। এমন এক লড়াই হবে পেসারদের ভেতরেও। একাদশে ১-৭ পর্যন্ত খেলোয়াড় মোটামুটি নিশ্চিত। দল চার পেসার নিয়ে খেলবে নাকি তিন পেসার ও একজন বাড়তি স্পিনার নিয়ে মাঠে নামবে সেটাই দেখার।
এ বছর ১২ ওয়ানডেতে ৩টি দেশের বাইরে খেলেছে বাংলাদেশ। সেই ৩ ম্যাচের দুটিতে তিন পেসারের সঙ্গে একজন স্পিনার নিয়েছে দল। একটিতে নেওয়া হয়েছিল চার পেসার। এছাড়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের দুটিতে তিন পেসার এবং একটিতে দুই পেসার খেলেছিল দল। এছাড়া ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন পেসারের সঙ্গে এক স্পিনার রেখেছিল। দেশের মাটিতে স্পিনবান্ধব উইকেটে সাকিবের সঙ্গে বাড়তি স্পিনার নেওয়ার মূল কারণ সেই কম্বিনেশন। দেশের বাইরে স্পিনাররা তেমন সুবিধা করতে না পারায় পেসারদের ওপরই রাখা হয় ভরসা।
এশিয়া কাপ হবে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে। মহাদেশীয় এই প্রতিযোগিতায় কম্বিনেশন কেমন হবে তা নিয়েই চলছে আলোচনা। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কাছে দল ও একাদশ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। উত্তরে হাথুরুসিংহে সোজাসাপ্টা বলেছেন, ‘কোনো সুযোগ নয়, কন্ডিশন অনুযায়ী আমরা আমাদের একাদশ সাজানো। এটাই দল বাছাইয়ের একমাত্র ক্রাইটেরিয়া।’
লেট অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে শেষ দু’মাস কাজ করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রয়োজনে তারা যেন দলের স্কোর বাড়াতে পারে, শেষ মুহূর্তে সমীকরণ মেলাতে পারেন সেই চেষ্টা করা হচ্ছে তাদেরকে দিয়ে। পেসারদের মধ্যে তাসকিনের ব্যাটিং উন্নতি বেশি চোখে পড়েছে কোচের।ৎ
‘হ্যাঁ, তাসকিন বেশ উন্নতি করেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্লোজ ম্যাচ কিভাবে জিততে হয় সেটা সে আমাদের দেখিয়েছে। এছাড়া শরিফুল কিন্তু আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভালো করেছে। তার শেষের ব্যাটিংয়ে কিন্তু আমরা ম্যাচ জিতেছি। বাকিরাও চেষ্টা করছে। প্রত্যেকে একটা প্রক্রিয়ায় আছে। ফিজ যেমন শুধুমাত্র বড় শট খেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
পেসারদের নিয়ে হাথুরুসিংহে ভালো অবস্থানে থাকলেও শেষ মুহূর্তে ইবাদতকে হারানোয় কিছুটা শঙ্কিত তিনি, ‘ইবাদত আমাদের ইমপ্যাক্ট বোলারের একজন। আমাদের যে পাঁচ ফাস্ট বোলার আছে তাদের মধ্যে দ্রুততম সে। শেষ কয়েকটি সিরিজ ভালো খেলেছে। তাকে হারানো বিরাট ক্ষতি। যাকে আমরা নিয়েছে রাতারাতি তাকে নিয়ে কাজ করানো কঠিন। আশা করছি সে দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরবে।’